বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ব্যাঙ্ক ডাকাতির বহু ঘটনা চোখে পড়ে। তার মধ্যে কোনটায় ডাকাতের দল বা কখনও একা কোনও ব্যক্তি ব্যাঙ্কের লক্ষ লক্ষ (কখনও আবার কোটি) টাকা লুঠ করে নিয়ে পালায়।
ডাকাতদের আটকাতে গেলে অনেক সময়ই হুমকির মুখে পড়তে হয় ব্যাঙ্ক কর্মীদের। কখনও আবার প্রাণনাশের ভয়ও দেখানো হয়। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ঢোকে দুষ্কৃতীরা।
তবে কখনও শুনেছেন, মাত্র এক ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৬ টাকা)-এর জন্য কেউ ডাকাতি করছেন? শুধু তাই নয়, সেই ব্যক্তি ডাকাতির পর সেই ব্যাঙ্কে বসে পুলিশ আসার অপেক্ষা করেছেন। সত্যিই এমন ঘটনা ঘটেছিল।
এই ব্যক্তির নাম জেমস ভেরন। তাঁর বাড়ি উত্তর ক্যারোলিনার গ্যাস্টোনিয়াতে। তিনি টানা ১৭ বছর একটি বেসরকারি কোল্ডড্রিঙ্কস সংস্থার ডেলিভারি বয় হিসেবে কাজ করার পর নিজের কাজ হারান। পাশাপাশি হারান নিজের হেলথ ইনসিওরেন্সও।
দিন দিন জেমস-এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে তিনি নিজের হেলথ ইনসিওরেন্স নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। কারণ তাঁর কাছে ইনসিওরেন্স নবীকরণের টাকা ছিল না। এ দিকে তাঁর বাতের ব্যথা এবং স্লিপ ডিস্ক উত্তরোত্তর বাড়ছিল। সমস্যা দেখা গিয়েছিল তাঁর পায়েও। বুকেও ব্যথা শুরু হয়েছিল জেমসের।
এর পরই জীবনের চরমতম সিদ্ধান্ত নেন জেমস। ঠিক করেন ব্যাঙ্ক ডাকাতি করবেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ! ২০১১ সালের ৯ জুন নিজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটি গাড়িতে চেপে নিকটবর্তী একটি ব্যাঙ্কে যান ৫৯ বছর বয়সি জেমস।
তবে ডাকাতি করতে কিন্তু কোনও আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে নেননি তিনি।
ব্যাঙ্কে প্রবেশ করতেই তিনি একটি চিরকুট ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের হাতে ধরিয়ে দেন। তাতে লেখা ছিল, ‘আমি ব্যাঙ্ক ডাকাতি করতে এসেছি। আমাকে শুধু এক ডলার দিন।’
এর পরে তিনি ওই এক ডলার নিয়ে চুপচাপ ব্যাঙ্কের এক কোনে গিয়ে বসেন। ব্যাঙ্কের এক কর্মীকে তিনি বলেন, ‘‘আমি এই কোণে চুপচাপ বসে থাকব এবং পুলিশ আসা অবধি অপেক্ষা করব।’’
ডাকাতি করতে আসার আগে তিনি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে একটি চিঠিও দিয়ে আসেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘আপনারা যখন এই চিঠি পাবেন, ততক্ষণে আমার ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয়ে যাবে। তবে আমি মাত্র এক ডলারের জন্য এই ডাকাতি করতে যাচ্ছি। আমার মানসিক স্থিতি একদম ঠিক আছে। কিন্তু আমার শারীরিক অবস্থা ঠিক নেই।’
এর পরে তাঁকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। তবে জেমসকে আদালতে হাজির করানো হলে, বিচারক তাঁর কর্মকাণ্ডকে ডাকাতি বলে মানতে রাজি হননি। অন্য ব্যক্তির কাছে থেকে এক ডলার চুরির অপরাধে তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
তবে সবার মনেই একটাই প্রশ্ন ছিল। কেন শুধুমাত্র এক ডলারের জন্য ডাকাতি করতে গিয়েছিলেন শারীরিক ভাবে অসুস্থ এই ব্যক্তি? সেই সময়ে সদ্য অর্থনৈতিক মন্দার মুখ থেকে উঠে আসা আমেরিকায় এক ডলারে তাঁর কোনও চিকিত্সা হত না। তা হলে কেন গিয়েছিলেন তিনি? পুলিশের হাতেই বা কেন নিজে থেকে ধরা দিয়েছিলেন?
তিনি নিজেই এর উত্তর দিয়েছিলেন স্থানীয় এক সাংবাদিককে। তিনি জানান, তাঁর প্রধান লক্ষ্য ডাকাতি ছিল না। কেবলমাত্র জেল খাটার জন্যই তিনি এই কাণ্ডটি ঘটান।
আমেরিকার আইন অনুযায়ী কোনও কয়েদি যদি অসুস্থ হন, তা হলে তাঁর সমস্ত চিকিত্সার খরচ জেল কর্তৃপক্ষের। তাই নিজের চিকিত্সার খরচ জোগাতে তিনি নিজেই জেল খাটার সিদ্ধান্ত নেন।
নিজের উদ্দেশে সফলও হন জেমস। জেলে ঢোকার পরে তাঁর জন্য চিকিৎসার যাবতীয় খরচ-সহ নার্স এবং ডাক্তারের ব্যবস্থা করেন জেল কর্তৃপক্ষ।