কথায় বলে, টাকায় টাকা আনে, মনের শান্তি আনে না। তবু বড়লোক হতে কে না চায়? বিহারের যুবক সুশীলও চেয়েছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের ঝকঝকে যুবক অল্প বয়সে কোটিপতিও হয়েছিলেন। কিন্তু সময়ের ফেরে তিনি আবার দুরবস্থায়। কেমন সেই কাহিনি?
বিগ বি অমিতাভ বচ্চনের ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’-তে অংশ নিয়েছিলেন সুশীল কুমার। বিহারের যুবক সে সময় ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্বপ্ন আইএএস অফিসার হবেন।
কুইজ মাস্টার অমিতাভের একের পর এক প্রশ্নের জবাব দিয়ে পাঁচ কোটি টাকা পুরস্কার জিতেছিলেন সুশীল। রাতারাতি বদলে গেল সুশীলের ‘লাইফ স্টাইল’।
এলাকায় ‘সেলেব’ তকমা পেলেন সুশীল। দূরের গ্রামের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে ডাক পড়ত ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ জেতা সুশীলের।
কী করলেন পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে? সুশীলের কথায়, ‘‘রাতারাতি জীবন বদলে গেল। প্রচারে থাকতে ভালই লাগত।’’ কিন্তু এখন সেই সুশীলই প্রচারমাধ্যমের কাউকে দেখলে তিতিবিরক্ত হন। এড়িয়ে চলেন পরিচিতদের। হলটা কী?
২০২০ সালে একটি ফেসবুক পোস্টে নিজের অসহায়তার কথা জানান সুশীল কুমার। দীর্ঘ সেই পোস্টে সুশীল লেখেন, ‘এলাকায় আমি ‘সেলেব্রিটি’ হয়ে গিয়েছিলাম। ১০-১৫ দিন অন্তর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমার ডাক পড়ত। কিন্তু এর জন্য আমার পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়।’
সেলেব তকমা পেয়ে প্রথমে পড়াশোনা নিয়ে অত ভাবনাই মাথায় আসেনি সুশীলের। প্রচার ভাল লাগতে শুরু করে। তার মধ্যে যে যেখানে বলতেন, সেখানেই অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করেন পাঁচ কোটি টাকা জেতা সুশীল।
নিজে অমিতাভ বচ্চনের বড় ভক্ত। তাঁরই অনুষ্ঠানে পুরস্কার জয়ের পর সুশীল ভেবেছিলেন জীবনটাই বদলে গিয়েছে। ফলস্বরূপ যে সুশীলের লক্ষ্য ছিল আইএএস অফিসার হবেন, তার প্রস্তুতি চলে যায় বিশ বাঁও জলে। তিনি বরং খেয়াল রাখতে শুরু করেন, কোন পত্রপত্রিকায় তাঁকে নিয়ে কী খবর পরিবেশিত হচ্ছে।
প্রায়শই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হাজির হতেন সুশীল। কোথাও কোথাও দান করতেন বড় অঙ্কের টাকা। সব সময় ব্যস্ত-ব্যস্ত ভাব। এ সবের মধ্যে পরিবার থেকে ক্রমশ দূরে সরে যান তিনি। কাছের মানুষের কাছে সুশীল যেন হঠাৎই অন্য গ্রহের মানুষ।
সুশীলের স্বীকারোক্তি, ‘‘প্রচুর মানুষ আমাকে প্রতারণা করা শুরু করলেন। আর এ সবের মধ্যে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক তলানিতে ঠেকল। ও আমাকে সাবধান করত, ভবিষ্যতের জন্য ভাবো। কিন্তু আমি পাত্তা দিইনি। বরং এ নিয়ে প্রায়শই ঝগড়া হত।’’
এ ভাবেই ইতিউতি টাকা খরচ করে সর্বস্বান্ত হয়ে যান সুশীল। এত টাকা নিয়ে কী করলেন?
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকা দেওয়া, যেখানে-সেখানে বিনিয়োগ শুরু করেন তিনি। প্রায় সব জায়গায় ঠকেন।
একটি সংবাদমাধ্যমকে সুশীল জানান, অবস্থা এমনই হয় যে, বাড়ির লোকের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়। স্ত্রী রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
যে আইএএস প্রত্যাশীর ব্যাঙ্কে ছিল কয়েক কোটি টাকা, তিনি এখন সর্বস্বান্ত! সংসার চালাতে দুটো গরুর দুধ বেচেন সুশীল।
এখন প্রচার থেকে দূরে থাকেন তিনি। কোনও রকমে সংসার চলে তাঁর। হঠাৎ বড়লোক হয়ে গেলে হয়তো এমনই হয়। নিজেই এ কথা বলেন সুশীল কুমার।