‘বডি শেমিং’-এর শিকার হয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন প্রচুর মানুষ। কেউ কেউ অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করে বসেন। রাধিকাও ভেবেছিলেন এই জীবন শেষ করে দেবেন। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পরেই সিদ্ধান্ত বদলান। তিনিই আজ দেশের অন্যতম কনিষ্ঠ সিইও!
ছোট থেকে পড়াশোনায় ভাল। কিন্তু রাধিকা গুপ্তের অন্যান্য গুণ ছাপিয়ে সবাই হাসাহাসি করতেন তাঁর শরীর নিয়ে। কারণ, তিনি কুঁজো। চোখদুটোও ট্যারা। ঘাড় বেঁকিয়ে হাঁটতেন। তার জন্য পরিচিতদের বাঁকা হাসি, বন্ধুদের কটাক্ষ শুনতেন ছোট থেকেই। এ সব শুনতে শুনতে এক দিন চেয়েছিলেন জীবন শেষ করে দেবেন।
রাধিকার বাবা পেশায় কূটনীতিক। মা ছিলেন শিক্ষিকা। বাবার চাকরির জন্য ছোট থেকেই দেশ-বিদেশে থাকতে হত রাধিকাকে। পাকিস্তান থেকে নিউ ইয়র্ক, নাইজেরিয়া— বিভিন্ন দেশে থেকেছেন। ছিলেন দিল্লিতেও।
স্কুলে গেলেই শরীর নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ শুনতেন রাধিকা। তিনি যে স্কুলে পড়তেন, সেখানে শিক্ষকতা করতেন তাঁর মা। সবাই মায়ের সঙ্গে তুলনা করতেন মেয়ের। তাঁর কথায় সহপাঠীরা বলত, ‘‘মা এত সুন্দরী, তুই এমন কেন?’’ এ সব শুনতে শুনতে খুব মন খারাপ হত রাধিকার।
যা-ই হোক, মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ভেবেছিলেন বড় হয়ে খুব বড় কোনও চাকরি করবেন। কিন্তু প্রতিনিয়ত পরিচিতদের কাছে ‘কুৎসিত’, ‘কুৎসিত’ শুনতে শুনতে আর নিতে পারেননি রাধিকা। আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায়। ভেবেছিলেন আর বেঁচে থেকে কী করবেন!
পড়াশোনা শেষ করে চাকরি খোঁজা শুরু করেছিলেন। কিন্তু জীবনের সপ্তম চাকরির ইন্টারভিউতে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন রাধিকা।
চাকরির ইন্টারভিউয়ে বিফল হয়ে কোনও রকমে বাড়ি ফিরেছিলেন। দমবন্ধ লাগছিল। তাঁর নিজের কথায়, ‘‘জানলার কাচ দিয়ে নীচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ভাবলাম ঝাঁপ দিয়ে এ জীবন শেষ করে দেব।’’
সে দিন রাধিকার কাছে ছুটে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু। তাঁর কথায়, ‘‘ও সে দিন না এলে হয়তো খারাপ কিছুই করে ফেলতাম।’’ বন্ধুই তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর অবসাদ কাটিয়ে ওঠেন রাধিকা।
আরও একটা ইন্টারভিউ আছে। এটাই আমার শেষ সুযোগ— এই কথা ভেবেই সে দিন নিজেকে সামলেছিলেন রাধিকা।
ওই ইন্টারভিউ দিয়েই একটি নামী সংস্থায় চাকরি পান রাধিকা। দীর্ঘ চেষ্টার পর প্রথম চাকরি!
কয়েক বছর চাকরি করার পর নিজে কিছু করার কথা ভাবেন রাধিকা। স্বামী এবং এক বন্ধুর সঙ্গে একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট ফার্ম খোলেন। এই সংস্থাটি পরে কিনে নেয় একটি মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা।
রাধিকার কথায়, ‘‘এ ভাবেই আমি পুরোদস্তুর কর্পোরেট জগতে ঢুকে পড়লাম। একদল স্যুট প্যান্টের মাঝখানে আমি একা শাড়িতে।’’
ওই সংস্থাতেই ৩৩ বছর বয়সে সিইও হয়ে যান রাধিকা। ভারতের অন্যতম কনিষ্ঠ সিইও রাধিকার কথায়, ‘‘এখন আর লোকের কথা গায়ে মাখি না। কেউ যখন ট্যারা চোখ কিংবা কুঁজো বলে ব্যঙ্গ করে, আমি সোজাসুজি উত্তর দিই। বলি, আমি তো এ রকম। কিন্তু আপনি আর আলাদা কিসে?’’