ভারত ৭৭তম স্বাধীনতা দিবস পালন করল মঙ্গলবার। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উৎসবের মেজাজ দেখা গিয়েছিল দেশ জুড়ে। পাশাপাশি, প্রতি বছরের মতো এই স্বাধীনতা দিবসেও দিল্লির আকাশ ঢেকে গিয়েছিল অগণিত ঘুড়িতে।
প্রতি বছর লাল কেল্লায় প্রধানমন্ত্রীর পতাকা উত্তোলন এবং ভাষণপর্বের কিছু সময় পর থেকেই দিল্লির আকাশে উড়তে দেখা যায় রংবেরঙের ঘুড়ি। লাট্টু, তেরঙা, দোরঙায় ভরে যায় আকাশ। যদিও ভারতের পতাকার নকশার আদলে তৈরি ঘুড়ির চাহিদা এ দিন বেশি থাকে।
তবে এ দৃশ্যের দেখা কি শুধু দিল্লিতেই মেলে? দেশের কমবেশি অনেক রাজ্যেই এই ছবি দেখা যায়। কোনও রাজ্যে বেশি, কোনও রাজ্যে কম। ঘুড়ি ওড়াতে বাড়ির ছাদে ভিড় জমান মানুষ।
যদিও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানোর এই উৎসব মূলত দেখা যায় উত্তর ভারতে। বিশেষ করে দিল্লি, লখনউ, মোরাদাবাদ এবং বরেলীর মতো শহরে।
পুরনো দিল্লি বা শাহজাহানাবাদ এলাকায় এই উৎসব এতটাই জনপ্রিয় যে সেখানে প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে হিন্দি গান চালিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোয় মাতেন স্থানীয়রা। থাকে খানাপিনার ব্যবস্থাও।
দিল্লির চাঁদনি চক, দরিয়াগঞ্জ, হাডসন লাইনস, কিংসওয়ে ক্যাম্প, কমলা নগর এবং তিলক নগরের আশপাশের ছাদগুলিতে ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য মানুষের ঢল লক্ষ করা যায়।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঘুড়ি উড়ানো নিছকই একটি উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর নেপথ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য।
স্বাধীনতা দিবসে ঘুড়ি উড়ানো কেন জনপ্রিয়? এর উত্তর পাওয়া যাবে ঔপনিবেশিক ভারতের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে।
দিল্লিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম শিকড় হিসাবে গণ্য করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পীঠস্থানে পরিণত হয়েছিল দিল্লি।
১৯২৮ সালে সাইমন কমিশনের প্রতিবাদে সারা ভারত ‘সাইমন গো ব্যাক’ স্লোগানে গর্জে উঠেছিল। উত্তর ভারতেও সেই স্লোগান ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। আবালবৃদ্ধবনিতা, সকলের মুখেই তখন সেই স্লোগান।
স্লোগানটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠছিল যে, মানুষ এই স্লোগান ঘুড়িতে লিখে ওড়াতে শুরু করেন। সেই থেকেই, উত্তর ভারতে ঘুড়ি উড়ানো দেশপ্রেমের অন্যতম প্রতীক।
আমদাবাদের ‘কাইট ক্লাব ইন্ডিয়া’র সদস্য নিভুল পাঠক সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেন, “স্বাধীনতা দিবসে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা অনেক পুরনো। ১৯২8 সালে, স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ‘সাইমন গো ব্যাক’ স্লোগান লেখা ঘুড়ি ওড়াতে শুরু করেছিলেন।’’
স্বাধীনতা সংগ্রামীরা ব্রিটিশ সরকারের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে এবং সহযোদ্ধাদের গুপ্ত বার্তা পাঠাতেও ঘুড়ি ব্যবহার করতেন।
স্বাধীনতা দিবস ছাড়াও উত্তর ভারতে মকর সংক্রান্তি, বসন্ত পঞ্চমী এবং অন্যান্য উৎসবের সময়ও ঘুড়ি ওড়ানোর চল রয়েছে।
গুজরাত এবং রাজস্থানে, মকর সংক্রান্তির দিন ঘুড়ি ওড়ানো অত্যন্ত জনপ্রিয় উৎসব। অন্য দিকে, পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পুজো এবং অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানো হয়। পঞ্জাবে বসন্ত পঞ্চমী উৎসব উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে।