বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশলগত অস্ত্র তৈরি করল উত্তর কোরিয়া। সম্প্রতি এমনই দাবি করেছেন সে দেশের একনায়ক কিম জং উন।
কিম জানিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া একটি নতুন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে। আর এই ক্ষেপণাস্ত্রই হতে চলেছে বিশ্বের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ কৌশলগত অস্ত্র।
উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতার দাবি, অনেক দিন ধরেই তিনি বিশ্বের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার তৈরির পরিকল্পনা করছেন। নতুন এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সেই ভান্ডারেরই একটি অংশ মাত্র।
কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেএনসিএ কিমের এই মন্তব্যের অবশ্য অন্য ব্যাখ্যা দিয়েছে। কেএনসিএ-র দাবি, কিম আসলে তাঁর সেনাকেই ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ বলেছেন।
কেএনসিএ-র মতে, কিম উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র সংক্রান্ত ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ভাগ করে নিয়েছেন মাত্র।
কিম সম্প্রতি বলেন, ‘‘রাষ্ট্র এবং জনগণের মর্যাদা এবং সার্বভৌমত্বকে দৃঢ় ভাবে রক্ষা করার জন্য আমরা নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছি। আর সেই জন্য আমাদের পরমাণু অস্ত্রভান্ডার তৈরি করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশলগত অস্ত্র তৈরি করা। এই অস্ত্রগুলি হবে নজিরবিহীন।’’
কিম এর পর আরও বলেন, প্রতিরক্ষা বিষয়ক গবেষণায় নিযুক্ত দেশের বিশ্বস্ত নেতৃস্থানীয় ক্যাডার এবং বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশলগত অস্ত্র তৈরি করে ফেলেছেন।
এই কৌশলগত আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছে ‘হসাংপো’। আর এ কথাও জানিয়েছেন কিম স্বয়ং।
তিনি আরও জানান, এই পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে পারমাণবিক অস্ত্রের ভবিষ্যৎ তৈরিতে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে সে দেশের সরকার।
তিনি আরও বলেন, ‘‘বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী তৈরির লক্ষ্যে আমাদের দেশ দৃঢ় ভাবে এগিয়ে চলেছে।’’
সম্প্রতি এই জল্পনাও উঠেছিল যে, একটি শক্তিশালী পারমাণবিক ডুবোজাহাজ বানাচ্ছে পিয়ংইয়ং। কিম ২০১৯ সালে ঘোষণা করেন, উত্তর কোরিয়া এমন এক ডুবোজাহাজ বানাচ্ছে, যা পারমাণবিক শক্তিচালিত। এমনকি এটি নিজেও নাকি একটি পরমাণু অস্ত্র হিসাবে কাজ করবে।
এই পারমাণবিক ডুবোজাহাজ নানা সামরিক সরঞ্জামে ঠাসা থাকবে বলেও জানিয়েছিলেন কিম। উপগ্রহের উপর নজরদারি করার ব্যবস্থাও নাকি এই ডুবোজাহাজে থাকছে।
কিমের নির্দেশে তৈরি হওয়া প্রায় দু’হাজার টন অর্থাৎ প্রায় ২০ লক্ষ কিলোগ্রামের এই ডুবোজাহাজ ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়তে পারদর্শী।
সাবেক সোভিয়েতে ‘রোমিও ক্লাস’ নামে একটি ডুবোজাহাজ ছিল। শত্রুপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে সেই ডুবোজাহাজের খ্যাতি ছিল বিশ্বজোড়া।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, সোভিয়েতের সেই ডুবোজাহাজেরই আধুনিক রূপ কিমের এই নয়া ডুবোজাহাজ।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক শক্তির ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি নিয়ে একের পর এক দাবি করে চলেছেন কিম। এর মাঝেই প্রকাশ্যে আসে মেয়ের সঙ্গে কিমের ছবি।
সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র বিজ্ঞানীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন কিম। সেই ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
কিমের মেয়ের বিষয়ে জানা থাকলেও এর আগে তাঁর মেয়ের ছবি কখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
শোনা যায় যে কিমের মোট তিন সন্তান। তবে এদের মধ্যে নাকি এই মেয়েই একনায়কের সব থেকে প্রিয়।
এ-ও শোনা যায় যে, তাঁর এই ১০ বছর বয়সি মেয়েকে ‘জু এ’ (সবচেয়ে প্রিয় সন্তান) বলে ডাকেন কিম। এই মেয়েই কিমের উত্তরসূরি হতে পারেন বলে একাধিক জল্পনা রয়েছে।
তবে ১০ বছরের মেয়েকে ক্ষেপণাস্ত্র বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বৈঠকে নিয়ে যাওয়ার কিমের সিদ্ধান্তকে বাড়াবাড়িই মনে করছেন বহু মানুষ।