উত্তর কোরিয়ার আকাশে গুপ্তচর বিমান পাঠিয়ে আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে আমেরিকা! এমনই অভিযোগ এনে সরব উত্তর কোরিয়ার কিম জং উন সরকার।
একই সঙ্গে অভিযোগ, কোরীয় উপদ্বীপের কাছে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র থাকা ডুবোজাহাজ মোতায়েন করার পরিকল্পনা করছে ওয়াশিংটন।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের এক জন মুখপাত্রের দাবি, আমেরিকার তরফে এই গুপ্তচর বিমান পাঠিয়ে ‘উস্কানি’ দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে আমেরিকার এই বিমানটি উত্তর কোরিয়ার আকাশে দেখা গিয়েছিল বলে পিয়ংইয়ংয়ের দাবি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওই মুখপাত্র আরও দাবি করেছেন, চলতি মাসে গুপ্তচর বিমানটি ‘বেশ কয়েক বার’ পূর্ব সাগরের উপর দিয়ে উত্তর কোরিয়ার আকাশে অনুপ্রবেশ করেছিল।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘কোরিয়ার পূর্ব সাগরে আমেরিকার বায়ুসেনার এই কৌশলগত বিমান যে কোনও মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কবলে পড়বে না তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।’’
অতীতের ঘটনা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, পিয়ংইয়ং আগেও উত্তর কোরিয়ার আকাশে অনুপ্রবেশ করা আমেরিকার গুপ্তচর বিমান গুলি করে ধ্বংস করেছিল।
ওয়াশিংটনকে এই ‘গুপ্তচরবৃত্তি’র মূল্য চোকাতে হবে বলে সতর্ক করা হয়েছিল কিম সরকারে তরফে।
কিম সরকারের দাবি, উত্তর কোরিয়ার উপদ্বীপে আমেরিকার কৌশলগত পরমাণু ডুবোজাহাজ মোতায়েনের পরিকল্পনা ‘ছদ্মবেশী পরমাণু ব্ল্যাকমেল’।
আমেরিকার এই পদক্ষেপ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলেও দাবি করেছে উত্তর কোরিয়া।
উত্তর কোরিয়ার তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতি স্পষ্ট ভাবে প্রমাণ করে যে, আমেরিকার ‘উস্কানিমূলক’ সামরিক পদক্ষেপের কারণে কোরিয়া উপদ্বীপে পারমাণবিক সংঘাত বাধতে পারে।
এপ্রিলে ওয়াশিংটন জানিয়েছিল, আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই আমেরিকার তরফে একটি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রযুক্ত ডুবোজাহাজ দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরে পাঠানো হবে। যদিও তা কোন সময়ে পাঠানো হবে, তা নিয়ে ওয়াশিংটনের তরফে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু জানানো হয়নি।
উত্তর কোরিয়া এই বছর একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা। মে মাসে কিম সরকার একটি সামরিক গুপ্তচর উপগ্রহ কক্ষপথে পাঠানোর চেষ্টা করেছিল বলেও জল্পনা উঠেছিল।
এই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা প্রসঙ্গে সে দেশের সেনাবাহিনী জানিয়েছিল, আমেরিকা এবং তার বন্ধু দেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় জবাবি হামলা চালানোর উদ্দেশ্যেই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করা হচ্ছে।
আমেরিকার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের তিক্ততার কথা সকলেরই জানা। বিভিন্ন বিষয়ে একে অপরকে তুলোধনা করে আসছে দুই দেশ। এমনকি, দু’দেশের তরফে পরমাণু হামলার হুমকিও দেওয়া হয়েছে একে অপরকে।
দক্ষিণ কোরিয়াকে সামরিক দিক থেকে দীর্ঘ দিন ধরে সহযোগিতা করে আসছে আমেরিকা। আর এ-ও উত্তর কোরিয়ার মাথাব্যথার অন্যতম কারণ।
আমেরিকার সঙ্গে সামরিক চুক্তি করার জন্য দক্ষিণ কোরিয়াকেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার প্রশাসক কিম জং উনের বোন কিম ইয়ো জং।
কিম ইয়ো জং বলেছিলেন, “আমেরিকার সঙ্গে সামরিক চুক্তির মাসুল দিতে হবে দক্ষিণ কোরিয়াকে। নিরাপত্তা মজবুত করার যে প্রক্রিয়া চালাচ্ছে দুই দেশ, তাতে পরিস্থিতি আরও বিগড়ে যেতে পারে।”
তবে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে আমেরিকার। অনেক ক্ষেত্রেই কিমের দেশ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র গিয়ে পড়েছে পড়শি দেশে। তাতে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
অক্টোবরে জাপানের ভূখণ্ডের উপর দিয়ে একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে উত্তর কোরিয়া। উত্তর-পূর্ব জাপান অতিক্রম করে ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে।
উত্তর কোরিয়ার ওই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ‘জবাবে’ জাপান সাগরে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে আমেরিকা এবং তাদের মিত্র দেশ দক্ষিণ কোরিয়া। তা নিয়েও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল।