সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিল, ২৮ অগস্ট ভেঙে ফেলতে হবে নয়ডার যমজ অট্টালিকা। সেই রায় মেনে রবিবার গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে সেই ‘বিতর্কিত’ জোড়া অট্টালিকা। দুপুর ঠিক আড়াইটেয়।
মাত্র ৯ সেকেন্ডে মাটিতে মিশে যাবে জোড়া অট্টালিকা। ৮০ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হবে। সেই ধ্বংসাবশেষ সরাতে সময় লাগবে ৯০ দিন।
দু’টি অট্টালিকার একটির নাম অ্যাপেক্স, অন্যটির নাম সিয়েন। অ্যাপেক্সের উচ্চতা ১০২ মিটার। অন্যটির উচ্চতা ৯২ মিটার। দিল্লির কুতুব মিনারের থেকেও বেশি।
দু’টি অট্টালিকা মিলিয়ে ১০০০ ফ্ল্যাট রয়েছে। সেই ফ্যাটগুলিতেই ভরা হয়েছে ৩,৭০০ কেজি বিস্ফোরক। ৪৬ জন ইঞ্জিনিয়ার ১২ ঘণ্টা কাজ করেছেন।
যমজ অট্টালিকা ভাঙতে খরচ পড়বে ২০ কোটি টাকা। তার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকা দিচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থা। বাকি ১৫ কোটি টাকা অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ বিক্রি করে তোলা হবে।
বিস্ফোরণের পর ধ্বংসাবশেষ যাতে বাইরে ছিটকে না যায়, সে জন্য ব্যবহার করা হবে ‘ওয়াটারফল ইমপ্লোসন’ পদ্ধতি। যমজ অট্টালিকার চারপাশে চার স্তরীয় লোহার খাঁচা বসানো হয়েছে। দু’টি স্তরে কম্বল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
নয়ডার জোড়া অট্টালিকা চত্বরে বসানো হয়েছে ৩০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। সেগুলির মাধ্যমে চলবে নজরদারি। নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ৫০০ পুলিশকর্মী।
নয়ডার পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, রবিবার জোড়া অট্টালিকা ধ্বংসের পর এক ঘণ্টা বন্ধ থাকবে যমুনা এক্সপ্রেসওয়ে। ধুলোর আস্তরণ অনেকক্ষণ থাকলে তা এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ রাখার সময়সীমা বাড়ানো হবে।
জোড়া অট্টালিকা ওড়ানোর সময় তার এক নটিক্যাল মাইলের (১.৮ কিলোমিটার) মধ্যে কোনও বিমান উড়বে না, নির্দেশিকা জারি করেছে নয়ডা প্রশাসন। বিমান পরিবহণ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, বহুতল গুঁড়িয়ে দেওয়ার সময় ধুলোর আস্তরণে ঢেকে যেতে পারে চারপাশ। সে রকম হলে দৃশ্যমানতা কমে যাবে। সে ক্ষেত্রে বিমান ওড়াতে সমস্যায় পড়বেন পাইলট। তাই ওই এলাকায় বন্ধ রাখা হচ্ছে উড়ান।
২৬ থেকে ৩১ অগস্ট যমজ অট্টালিকার ৫০০ মিটারের মধ্যে ড্রোন ওড়ানোও নিষিদ্ধ, জানিয়েছে প্রশাসন। আধ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে মেট্রো পরিষেবা।
যমজ অট্টালিকা ভাঙার সময় যাতে কোনও দুর্ঘটনা না হয়, তা নিয়েও সতর্ক প্রশাসন। অট্টালিকার পিছনে একটি পার্কে মোতায়েন থাকছে অ্যাম্বুল্যান্স, দমকল, আপৎকালীন পরিষেবার ব্যবস্থা। দুই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সব পরিষেবা বন্ধ থাকবে। চালু থাকবে শুধু আপৎকালীন পরিষেবা। স্থানীয় তিন হাসপাতালে বাড়ানো হয়েছে শয্যা সংখ্যা।
রবিবার সকালের মধ্যেই যমজ অট্টালিকার আশপাশের বহুতলগুলি থেকে সরানো হবে বাসিন্দাদের।
২০০৪ সালে নয়ডার ওই জমিটি হাতে আসে ‘সুপারটেক’ সংস্থার। ২০০৫ সালে বহুতলের নকশা পাশ হয়। সেখানে ১৪ তলার ফ্ল্যাট তৈরির অনুমোদন মেলে। ২০১২ সালে যখন নির্মাণ শেষ হয়, দেখা যায়, অ্যাপেক্স এবং সিয়ান টাওয়ারে রয়েছে ৪০টি করে তল।
ইলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় ‘রেসিডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’। ২০১৪ সালে হাই কোর্ট জানিয়ে দেয়, এই নির্মাণ অবৈধ। তাই ভেঙে ফেলতে হবে।
ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বলছে, একটি টাওয়ার থেকে অন্য একটির দূরত্ব হওয়া উচতি ১৬ মিটার। নয়ডার যমজ অট্টালিকার ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি। দু’টি টাওয়ারের মধ্যে দূরত্ব ন’মিটারেরও কম। তাই ভাঙার নির্দেশ।
এই যমজ অট্টালিকায় যাঁরা ফ্ল্যাট কিনেছিলেন, তাঁদের ১৪ শতাংশ সুদ সমেত টাকা ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট।
পরে মামলা ওঠে সুপ্রিম কোর্টে। ২০২১ সালে হাই কোর্টের রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। ২০২২ সালের ১২ অগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ২৮ অগস্ট ভেঙে ফেলতে হবে যমজ অট্টালিকা। সেই নির্দেশই কার্যকর করা হচ্ছে রবিবার।