নীতা দালাল অম্বানী। মুকেশ অম্বানীর স্ত্রীকে চেনেন না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কিছু না হলেও আইপিএলের মাঠে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জার্সি গায়ে হামেশাই দেখা দেন তিনি।
মুকেশ এই মুহূর্তে ভারত তথা এশিয়ার সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি। তাঁর স্ত্রীর দৈনন্দিন যাপনও তাই আদ্যোপান্ত বিলাসিতায় মোড়া। সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়া পর্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন নীতা।
কয়েকটি সংবদসংস্থার রিপোর্টে দাবি, নীতার সকাল শুরু হয় বহুমূল্য একটি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে। যে কাপে তিনি চা খান, তার দাম নাকি ৩ লক্ষ টাকা। কাপটি এসেছে সুদূর জাপান থেকে।
জাপানের একটি ঐতিহ্যবাহী বাসনপত্র তৈরির সংস্থা থেকে নিজের জন্য বাসনের সেট কিনেছিলেন নীতা। পুরো সেটটির দাম পড়েছে দেড় কোটি টাকা। সে সব বাসনে ২২ ক্যারাট সোনা এবং প্ল্যাটিনাম বসানো।
নীতা যে হাতব্যাগ নিয়ে ঘোরেন, তা সংবাদমাধ্যমে শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। ব্যাগটি নাকি কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরি। দাম প্রায় ২ কোটি ৬ লক্ষ টাকা। ২০১৭ সালে ওই ব্যাগ ব্রিটেনে নিলামেও উঠেছিল।
হাতের ঘড়ি থেকে শুরু করে জুতো, পোশাক— সব কিছুর ক্ষেত্রেই খুঁতখুঁতে অম্বানী-ঘরনি। দামি দামি সংস্থার জিনিসের ভিড় তাঁর ব্যক্তিগত সংগ্রহে। নীতা নাকি একটি জুতো দু’বার পরেন না। পোশাকের ক্ষেত্রেও তিনি একই নিয়ম মেনে চলেন বলে মনে করেন কেউ কেউ।
মুম্বইয়ে অম্বানীদের ‘রাজপ্রাসাদ’ অ্যান্টিলিয়ায় থাকেন নীতা। এই বহুতল বিশ্বের সবচেয়ে দামি এবং বিলাসবহুল বাড়িগুলি তালিকায় রয়েছে। অ্যান্টিলিয়ায় অম্বানী সাম্রাজ্যের রানি নীতা।
নীতার তেষ্টা মেটায় বহুমূল্য জল। তিনি যে জল খান, তা বিশ্বের সবচেয়ে দামি জল বলে দাবি করা হয়। অম্বানী ঘরনির সেই জলের বোতল আসে সুদূর ফ্রান্স এবং ফিজি থেকে। এক একটি জলের বোতলের দাম ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকা।
বলা হয়, নীতার জন্য যে জল আসে, তাতে সোনার ছাই মেশানো। ৫ গ্রাম স্বর্ণভস্ম এই জলকে অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর করে তোলে। সেই কারণেই এই জলের এত দাম।
ব্যক্তিগত জীবনে বিলাসিতার শিখরচূড়ায় শয়ন করেন নীতা। কিন্তু তাঁর এই বিলাসিতার সবটুকুই এসেছে বৈবাহিক সূত্রে। মুকেশের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার আগে তিনি আর পাঁচ জন মধ্যবিত্ত নারীর মতোই ছাপোষা জীবন যাপন করতেন।
১৯৮৫ সালে ২২ বছর বয়সে ধীরুভাই অম্বানীর ছেলের সঙ্গে নীতার বিয়ে হয়। তিনি সাধারণ মধ্যবিত্ত গুজরাতি পরিবারে বড় হয়েছেন। বিয়ের আগে নাম ছিল নীতা দালাল। তাঁর বাবা রবীন্দ্রভাই দালাল আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীতে চাকরি করতেন।
নীতার মা পূর্ণিমা দালাল ছিলেন সাধারণ গৃহবধূ। বিয়ের আগে নীতা একটি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। বিয়ের পরেও দীর্ঘ দিন সেই পেশার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।
নীতার আর এক গুণ তাঁর নৃত্যকলা। ভরতনাট্যমে তুখোড় অম্বানী-ঘরনি নাচ শিখেছেন মাত্র ৬ বছর বয়স থেকে। তিনি ছিলেন পেশাদার নৃত্যশিল্পী। একাধিক নাচের অনুষ্ঠানে মঞ্চ মাতিয়েছেন। তবে বিয়ের পর আর সে ভাবে নাচের অনুষ্ঠানে নীতাকে দেখা যায়নি।
নীতার এক বোন মমতাও স্কুলশিক্ষিকা। মুম্বইয়ের একটি অভিজাত স্কুলে তিনি পড়ান। শাহরুখ খান থেকে শুরু করে সচিন তেন্ডুলকর, তারকাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই তাঁর কাছে পড়েছেন।
মুকেশের একাধিক ব্যবসায় নীতার শেয়ার আছে। যথার্থ অর্থেই তিনি স্বামীর ‘অর্ধাঙ্গিনী’। নিজস্ব উদ্যোগেও একাধিক সংস্থা চালু করেছেন তিনি। রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন থেকে ধীরুভাই অম্বানী আন্তর্জাতিক স্কুল নীতারই হাতে গড়া।
মধ্যবিত্ত স্কুলশিক্ষিকা থেকে দেশের সবচেয়ে ধনী শিল্পপতির স্ত্রী হিসাবে নীতার উত্থান নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ। তাঁর রোজকার যাপনের পরতে পরতে রয়েছে বিলাসিতার ছোঁয়া। অম্বানী-ঘরনিতে মুগ্ধ অনুরাগীরাও।