একের পর এক নতুন রুটে বন্দে ভারত ট্রেনের পরিষেবা চালু করছে ভারতীয় রেল। এই ট্রেনের ভাড়া যেমন বেশি, তেমন পরিষেবাও অন্যান্য এক্সপ্রেস ট্রেনের তুলনায় উন্নত।
পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে তিনটি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চলে। হাওড়া থেকে পুরী, হাওড়া থেকে নিউ জলপাইগুড়ি এবং নিউ জলপাইগুড়ি থেকে গুয়াহাটি রুটে এই ট্রেনের পরিষেবা মেলে।
বন্দে ভারত সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বেশি ভাড়া দিয়েই এই ট্রেনে চড়ছেন যাত্রীরা। মিলছে অত্যাধুনিক পরিষেবাও।
তবে বন্দে ভারতের পরিষেবা আরও উন্নত করার দিকে ঝুঁকেছে রেল। তাদের তরফে একটি প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আরও ন’টি নতুন রুটে বন্দে ভারতের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই তালিকায় রয়েছে হাওড়া-পটনা বন্দে ভারত এক্সপ্রেসও।
নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের রেকগুলিতে নতুন কিছু পরিবর্তন আনতে চলেছে রেল। পরিষেবা আরও আরামদায়ক করতেই রেলের এই উদ্যোগ। মোট ২৫টি পরিবর্তনের কথা তারা জানিয়েছে।
বন্দে ভারতের রেকগুলিতে আসন এত দিন ১৭.৩১ ডিগ্রি কোণ করে হেলানো থাকত। সেই কোণের মান বাড়িয়ে ১৯.৩৭ ডিগ্রি করা হচ্ছে। অর্থাৎ, আরও বেশি হেলে থাকবে আসন। হেলান দিতে আরাম লাগবে।
আসনের কুশনগুলি আরও নরম করা হচ্ছে। কুশনের কঠোরতা কমছে ২৫ শতাংশ। এ ছাড়া, ট্রেনের এগ্জ়িকিউটিভ চেয়ার কারে (ইসিসি) আসনের রংও বদলে যাচ্ছে। লাল থেকে রং হচ্ছে নীল।
ট্রেনের আসনের নীচে মোবাইল চার্জ দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আরও সহজে মোবাইলে চার্জ দিতে পারবেন যাত্রীরা। ইসিসি-র আসনে বসে থাকার সময়ে পা রাখার জায়গাটিও আরও আরামদায়ক করা হচ্ছে।
ইসিসি-র শেষ দিকের আসনেও এ বার থেকে ম্যাগাজ়িনের ব্যাগ রাখা থাকবে। ট্রেনের শৌচালয়ে আলোর মাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি করছে রেল। ১.৫ ওয়াটের পরিবর্তে এ বার থেকে শৌচালয়ে ২.৫ ওয়াটের আলো জ্বলবে।
হাত ধোয়ার বেসিনের গভীরতা আগের থেকে বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে হাত ধুতে গেলে জল বাইরে ছিটকে আসার সম্ভাবনা কমবে। শৌচালয়ের হাতল আরও বাঁকানো হয়েছে নতুন রেকে। যাতে যাত্রীদের ধরতে সুবিধা হয়। ট্রেনের জলের কলগুলিও পাল্টে দেওয়া হচ্ছে।
শৌচালয়ের প্যানেলগুলিতে সর্বত্র একই রং করা হচ্ছে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহার করার মতো যন্ত্রের বাক্সটিতেও কিছু বদল আসছে। চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য কামরায় যে যন্ত্র রাখা আছে, উন্নত করা হচ্ছে তার মানও।
বিশেষ ভাবে সক্ষম যাত্রীদের হুইলচেয়ার রাখার ব্যবস্থা আগের চেয়ে উন্নত এবং সুবিধাজনক করা হচ্ছে। কোনও কারণে ট্রেনে আগুন লাগলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলি যাতে সহজে দেখা যায়, তাই তার আবরণ স্বচ্ছ করা হচ্ছে।
কামরার ভিতরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করছে রেল। কামরার দরজাগুলি বৈদ্যুতিন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা যাতে আরও সহজ হয়, সেই বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।
ট্রেনে যাত্রীদের মালপত্র রাখার তাকগুলি সামান্য ছোঁয়ায় যাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে নতুন বন্দে ভারতে। ড্রাইভিং ট্রেলার কোচে থাকছে বিশেষ রঙের ডেস্ক, যার মাধ্যমে বাইরের দৃশ্য আরও স্পষ্ট ভাবে দেখা যাবে।
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ট্রেন থামিয়ে দেওয়ার জন্য যে বোতাম রয়েছে, চালকের সুবিধার্থে তার জায়গা বদল করা হচ্ছে।
ট্রেনে আগুন লাগলে দ্রুত বুঝতে পারা এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা প্রত্যেকটি কামরায় আগের চেয়ে উন্নত করা হচ্ছে। এ ছাড়া, চালকের সুবিধার্থে ট্রেনগুলিতে প্যান্টোগ্রাফও আগের চেয়ে উঁচু করা হচ্ছে।
পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, ‘‘পূর্ব অভিজ্ঞতা এবং যাত্রীদের মতামতের ভিত্তিতে বন্দে ভারতের নতুন হাওড়া-পটনা রেকে প্রচুর পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে যাত্রা আরও আরামদায়ক হবে।’’
২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীই দিল্লি-বারাণসী রুটের সেই ট্রেনের উদ্বোধন করেছিলেন। তার পর থেকে পরিষেবা ক্রমে উন্নত থেকে উন্নততর হয়েছে। ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ছুটতে পারে এই ট্রেন।