ছত্তীসগঢ়ের পর মধ্যপ্রদেশ। মুখ্যমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। আর এ ক্ষেত্রেও রয়েছে বেশ চমক। ছত্তীসগঢ়ের পর মধ্যপ্রদেশের ক্ষেত্রেও পুরনোর বদলে নতুনের দিকে ঝুঁকেছে বিজেপি। গোবলয়ের এই রাজ্য ‘মামা-রাজ’-এ ইতি টেনেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের পরিবর্তে রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব।
কে এই মোহন? শিবরাজ যখন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, তখন মোহন ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। উজ্জয়িনী জেলা থেকে তিন বার বিধায়ক হয়েছেন। পরিষদীয় রাজনীতিতে প্রবেশের ১০ বছরের মাথায় মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী নিজেও উচ্চশিক্ষিত। মোহন বিজ্ঞানে স্নাতক। তার পর আইন নিয়ে পড়াশোনা করে এলএলবি পাশ করেছেন। পিএইচডিও করেছেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নাম ঘোষণা হতেই মোহন মঞ্চে বসে থাকা শিবরাজের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন। তাঁর মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রীও। এর পরেই মোহন বলেন, ‘‘আমি দলের এক জন সামান্য কর্মী। এই সুযোগ দেওয়ার জন্য দলকে ধন্যবাদ দিচ্ছি।’’
মধ্যপ্রদেশে বিপুল ভোটে জয়ের পর থেকেই মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য ভেসে উঠেছিল একাধিক নাম। শোনা যাচ্ছিল, চার বারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজের পরিবর্তে নতুন মুখেই ভরসা রাখতে চায় বিজেপি। কিন্তু এক বারের জন্যও শোনা যায়নি মোহনের নাম।
মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য উঠে এসেছিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর, প্রহ্লাদ পটেলের নাম। শোনা গিয়েছিল দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের নাম। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য শিন্ডে, দলের রাজ্য সভাপতি বিষ্ণুদত্ত শর্মার নামও ছিল আলোচনায়। শেষ পর্যন্ত সকলকে পিছনে ফেলে দেন মোহন।
মনে করা হচ্ছে, আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই মোহনকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে। আগের নির্বাচনগুলির মতো ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে গোবলয়ের এই রাজ্যে বড় ভূমিকা নিতে পারে জাতপাতের হিসাব। রাজনীতিকদের একাংশ মনে করছেন, সে কারণেই অনগ্রসর শ্রেণির মোহনকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে।
চার বারের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজের তুলনায় রাজনীতিতে অনেকটাই নবীন মোহন। রাজনীতিকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, এই নবীন সেনানির কারণে ধাক্কা খেতে পারে তাঁর পূর্বসূরির রাজনৈতিক কেরিয়ার।
২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উজ্জয়িনী উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ছিলেন মধ্যপ্রদেশ রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান।
২০১৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রথম বার ভোটে জেতেন মোহন। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও জয়ী হন তিনি। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই মধ্যপ্রদেশের রাজনৈতিক মহলে ক্ষমতা বাড়তে শুরু করে ৫৮ বছরের মোহনের।
২০২০ সালে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া বিধায়কদের নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। মধ্যপ্রদেশে পড়ে যায় কংগ্রেসের সরকার। আবার ক্ষমতায় আসে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী হন শিবরাজ। দু’বারের বিধায়ক মোহনকে মন্ত্রিসভার বাইরে রাখতে পারেনি বিজেপি। শিবরাজের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী হন মোহন।
এর পর ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটে উজ্জয়িনী দক্ষিণ কেন্দ্র থেকে ১২ হাজার ৯৪১ ভোটে জেতেন মোহন। হারিয়ে দেন কংগ্রেসের চেতন প্রেমনারায়ণ যাদবকে।
এ বার মুখ্যমন্ত্রী মোহন। তিন বারের বিধায়কের সম্পত্তির পরিমাণও নেহাত কম নয়। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় যে হলফনামা দিয়েছিলেন মোহন, তাতে দেখা গিয়েছে, তাঁর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৪২ কোটি টাকা। ন’কোটি টাকার ঋণ রয়েছে মোহনের।
মধ্যপ্রদেশের ধনী রাজনীতিকদের মধ্যে অন্যতম নাম হলেন মোহন। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে মনোনয়ন পেশ করে যে হলফনামা জমা করেছিলেন রাজনীতিকেরা, তাতে দেখা গিয়েছিল, সে রাজ্যে বিজেপি নেতাদের মধ্যে সম্পদের নিরিখে মোহন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। প্রথম স্থানে ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ।
২০২৩ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে হলফনামা পেশ করেছেন মোহন, তাতে দেখা গিয়েছে, তাঁর হাতে ১.৪১ লক্ষ টাকা নগদ রয়েছে। তাঁর স্ত্রীর হাতে ৩.৩৮ লক্ষ টাকা নগদ রয়েছে।
বিভিন্ন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে মোহন এবং তাঁর স্ত্রীর ২৮,৬৮,০৪৪.৯৭ টাকা সঞ্চিত রয়েছে। হলফনামা থেকে আরও জানা গিয়েছে, সদ্য নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী এবং কাঁর স্ত্রী শেয়ার, বন্ডে ৬ কোটি ৪২ লক্ষ ৭১ হাজার ৩১৭ টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
মোহনের হাতে ১৪০ গ্রাম সোনা রয়েছে, যার মূল্য প্রায় আট লক্ষ টাকা। মোহনের স্ত্রীর রয়েছে ২৫০ গ্রাম সোনার গয়না এবং ১.২ কেজি রুপো, যার মূল্য ১৫.৭৮ লক্ষ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী মোহনের রয়েছে ২২ লক্ষ টাকার ইনোভা গাড়ি, ৭২ হাজার টাকার সুজুকি স্কুটার। এ ছাড়াও ৮০ হাজার টাকার একটি রিভলভার এবং আট হাজার টাকার ১২ বোর গান রয়েছে। ছবি: পিটিআই, ফেসবুক, ফাইল।