সরকার আসে, সরকার যায়। নিয়ম মেনে বদলায় প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা নামও। তার উপর নির্ভর করে বদলায় ভারতের শেয়ার বাজারের ভাগ্যও।
যেমন বদলেছিল গত মঙ্গলবার, লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা চলাকালীন। ওই দিন ভারতীয় শেয়ার বাজারে ধস নামে। ভোটগণনার গতিপ্রকৃতি ছায়া ফেলেছিল সেনসেক্সে। দুপুর গড়াতেই সেনসেক্স ৫০০০ পয়েন্ট পর্যন্ত পড়ে যায়।
লোকসভা ভোটের শুরু থেকেই অস্থিরতা বজায় ছিল ভারতীয় শেয়ার বাজারে। তবে বর্তমানে তা স্থিতিশীল।
বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার টানা তৃতীয় বার কেন্দ্রে সরকার গঠন করতে প্রস্তুত। প্রাথমিক অস্থিরতা কাটিয়ে তাই শেয়ার বাজারও ভাল ফল করতে শুরু করেছে।
এই সবের মধ্যে দেখে নেওয়া যাক ভারতের কোন প্রধানমন্ত্রীর আমলে সেনসেক্সের সবচেয়ে বৃদ্ধি লক্ষ করা গিয়েছিল।
সেনসেক্স হল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক। এর ওঠাপড়ার উপর নির্ভর করে শেয়ার বাজার এবং শেয়ার দর।
২০০৪ সালের ২২ মে থেকে ২০১৪ সালের ২৬ মে পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন মনমোহন সিংহ। তাঁর আমলে ভারতের প্রাচীনতম শেয়ার বাজার— বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক বৃদ্ধি পেয়েছিল প্রায় ৪০০ শতাংশ।
এই তালিকায় মনমোহনের পরেই রয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। মোদীর ১০ বছরের শাসনে সেনসেক্স সূচক প্রায় ২০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
১৯৯১ সালের ২১ জুন থেকে ১৯৯৬ সালের ১৬ মে— নরসিংহ রাও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সেনসেক্স ১৮০.৭৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৯৯৬ সালের ১৬ মে থেকে ১ জুন— মাত্র ১৬ দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী আসনে বসেছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। বাজপেয়ীর সেই সংক্ষিপ্ত সময়ে সেনসেক্সে পতন ঘটে। ওই সময়ে সূচক প্রায় ২.৫৭ শতাংশ নেমে গিয়েছিল।
উল্লেখ্য, সাত দফার ভোটপর্বের শেষে বেশির ভাগ বুথফেরত সমীক্ষা বলেছিল, ৩৫০-এর বেশি আসন পাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ। আর সেই হিসাব বেরোতেই নতুন উচ্চতায় পৌঁছয় ভারতের শেয়ার বাজার। এক লাফে বৃদ্ধি পায় সেনসেক্স এবং নিফটি।
ভোটগণনার আগের দিন সকালেই ২,০০০ পয়েন্ট উঠে যায় সেনসেক্স। বেচাকেনা শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট আগে, অর্থাৎ ‘প্রি-ওপেন সেশনে’ (৯টা-৯টা ১৫ মিনিট) নিফটি ৮০০ পয়েন্ট বা ৩.৫৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৩,২২৭.৯০ এ পৌঁছেছিল। অন্য দিকে, ২,৬২১.৯৮ পয়েন্ট বা ৩.৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৬,৫৮৩.২৯ শতাংশে পৌঁছেছিল সেনসেক্স।
ভোটগণনার আগের দিন লগ্নিকারীরা ঘরে তুলেছিলেন ১৪ লক্ষ কোটি টাকা।
যদিও এই অবস্থা বেশি ক্ষণ থাকবে না বলে মনে করেছিলেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। হয়েও ছিল তাই।
ভোটগণনার দিন সকালেই ধরাশায়ী হয়ে যায় বাজার। ভোটগণনা যত এগোচ্ছিল, ততই পতন হতে থাকে সেনসেক্সের। পতন হয় নিফটিরও। মাথায় হাত পড়ে বিনিয়োগকারীদের।
গত মঙ্গলবার দুপুরে সেনসেক্সের পতন হয় ৫০০০ পয়েন্টেরও বেশি। মনে করা হচ্ছিল, ভোটগণনার প্রভাবেই ওই হাল হয়েছিল । তবে বর্তমানে পরিস্থিতি স্থিতিশীল।
ভোটগণনার দিন যতটা পড়েছিল শেয়ার বাজার, তার পরের তিন দিনের উত্থানে তা তো উসুল হয়েইছে, সেই সঙ্গে তৈরি হয়েছে উচ্চতার নতুন নজির। শুক্রবার প্রায় ১৬১৯ পয়েন্ট উঠে সেনসেক্স পৌঁছে যায় ৭৬,৬৯৩.৩৬ অঙ্কের উচ্চতায়।