ভোল বদলে যাচ্ছে দেশের ৫০৮টি রেলস্টেশনের। আধুনিকতার ছোঁয়া পেতে চলেছে সেগুলি। রেলের তরফে এই স্টেশনগুলিকে বলা হচ্ছে ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন। মনে করা হচ্ছে এই কাজের জন্য মোট ২৪ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা খরচ হবে।
রবিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে স্টেশনগুলি এই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে, সেই স্টেশনগুলিতেও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রবিবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৫০৮টি স্টেশনকে ‘ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার প্রতীক’ বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ভারতের সম্মান এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে।”
রেলের তরফে প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, দেশে সবচেয়ে বেশি ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন পেতে চলেছে রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশ। দু’টি রাজ্যেই ৫৫টি করে রেলস্টেশনকে এই প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক করে তোলা হবে।
অমৃত ভারত স্টেশনের সংখ্যার নিরিখে তৃতীয় এবং চতুর্থ স্থানে আছে যথাক্রমে বিহার এবং মহারাষ্ট্র। বিহারের ৪৯টি স্টেশনকে নতুন রূপে সাজিয়ে তোলা হবে। মহারাষ্ট্রে এই সংখ্যাটি ৪৪।
পশ্চিমবঙ্গ ‘অমৃত ভারত’ স্টেশনের সংখ্যার নিরিখে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। এই প্রকল্পে মোট ৩৭টি স্টেশন পেতে চলেছে রাজ্য। রাজ্যের ১২টি জেলার কোনও না কোনও স্টেশন এই প্রকল্পের আওতায় থাকছে।
জেলাগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন পেতে চলেছে জলপাইগুড়ি। এই ধরনের আটটি স্টেশন পাচ্ছে উত্তরবঙ্গের এই জেলা। আলিপুরদুয়ার এবং উত্তর দিনাজপুর পাচ্ছে তিনটি করে স্টেশন।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি মোট ১৭টি ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন পাচ্ছে। মালদহের দু’টি এবং কোচবিহারের একটি স্টেশনকে এই প্রকল্পের আওতায় আধুনিক করে তোলা হবে বলে জানিয়েছে রেল।
দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির মধ্যে পশ্চিম বর্ধমান তিনটি, পূর্ব বর্ধমান দু’টি ‘অমৃত ভারত’ স্টেশন পাচ্ছে। এ ছাড়াও নদিয়া তিনটি, মুর্শিদাবাদ তিনটি, উত্তর ২৪ পগরনা দু’টি, বীরভূম দু’টি এবং কলকাতার একটি স্টেশন এই ধরনের প্রকল্পের আওতায় আসতে চলেছে।
তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে দক্ষিণ দিনাজপুর, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং হাওড়া জেলার কোনও স্টেশনকে এই প্রকল্পের আওতাভুক্ত করা হয়নি।
কিছু দিন আগেই নতুন রূপে সেজে ওঠা শিয়ালদহ স্টেশনের ছবি প্রকাশ্যে এনেছিল রেল। রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, কলকাতার এই ব্যস্ত স্টেশনের ভোল বদলে যেতে চলেছে খুব শীঘ্রই।
রেলের তরফে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ‘অমৃত ভারত’ প্রকল্পের কল্যাণে অমৃতের ছোঁয়া পাবে এই স্টেশনগুলি। স্টেশনের প্রবেশপথ, প্ল্যাটফর্ম থেকে শৌচাগার কিংবা বিশ্রামকক্ষ সব কিছুতেই বদলের ছোঁয়া লাগবে।
স্টেশনগুলির গুরুত্ব, প্রতি দিন যাত্রী ওঠানামার পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেই তালিকা বানানো হয়েছে রেল সূত্রে খবর। ভবিষ্যতে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ‘অমৃত ভারত’ স্টেশনগুলিতে পরিকাঠামোগত কোনও সমস্যা হবে না বলে জানা গিয়েছে।
তালিকাভুক্ত প্রায় প্রতিটি স্টেশনকেই কেমন দেখতে হবে, তার একটি সম্ভাব্য ছবি প্রকাশ্যে এনেছে রেল। পশ্চিমবঙ্গের যে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলিতে ‘অমৃতের’ ছোঁয়া লাগতে চলেছে, সেগুলি হল ব্যারাকপুর, চাঁদপাড়া, ডালগাঁও, ফালাকাটা, নিউ আলিপুরদুয়ার, অন্ডাল, আসানসোল, বর্ধমান, কাটোয়া, পাণ্ডবেশ্বর, বোলপুর শান্তিনিকেতন, রামপুরহাট, দিনহাটা, আলুবাড়ি রোড ইত্যাদি স্টেশন।
এ ছাড়াও এই তালিকায় রয়েছে ডালখোলা, কালিয়াগঞ্জ, অম্বিকা কালনা, শেওড়াফুলি, তারকেশ্বর, বিন্নাগুড়়ি, ধূপগুড়ি, হলদিবাড়ি, হাসিমারা, জলপাইগুড়ি, জলপাইগুড়ি রোড, কামাখ্যাগুড়ি, নিউ মাল, শিয়ালদহ, মালদহ টাউন, সামসি, আজিমগঞ্জ, বহরমপুর কোর্ট, নিউ ফরাক্কা, বেথুয়াডহরী, কৃষ্ণনগর সিটি, নবদ্বীপ ধাম এবং শান্তিপুর।