একশো বছর পর রাজ্যের দ্বিতীয় রেলস্টেশন পেল নাগাল্যান্ড। শুক্রবার নাগাল্যান্ডের শোখুভিতে এই স্টেশনের উদ্বোধন করা হয়েছে।
এত দিন নাগাল্যান্ডে একটিই রেলস্টেশন ছিল। ১৯০৩ সালে চালু হয়েছিল ডিমাপুর রেলওয়ে স্টেশন। নাগাল্যান্ড রাজ্যের বাণিজ্যিক কেন্দ্রবিন্দুতে এই স্টেশন। রেলপথে দেশের পূর্ব প্রান্তের রাজ্যটির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এটাই।
একশো বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে নাগাল্যান্ডে পরবর্তী রেলস্টেশন চালু হল। ডিমাপুর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই এই স্টেশন। নাম শোখুভি।
নাগাল্যান্ডের শোখুভি গ্রামে নতুন এই স্টেশনটির রেলওয়ে কোড হল ‘এসকেএইচভি’। এখানে রয়েছে মোট দু’টি প্ল্যাটফর্ম এবং তিনটি রেলওয়ে ট্র্যাক। ধানসারি-জুবজা লাইনে এটাই প্রথম স্টেশন।
শোখুভি রেলস্টেশন থেকে শুক্রবার প্রথম ট্রেনের চাকা গড়িয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও নতুন স্টেশনে দাঁড়িয়ে দোন্যি পোলো এক্সপ্রেসের যাত্রার সূচনা করেন।
এই ট্রেনটি প্রতি দিন অসমের গুয়াহাটি থেকে অরুণাচল প্রদেশের নাহারলাগুন পর্যন্ত চলাচল করত। এখন থেকে ট্রেনটি নাগাল্যান্ডের শোখুভি পর্যন্ত চলবে। এর ফলে অরুণাচল প্রদেশের সঙ্গে নাগাল্যান্ড সরাসরি যুক্ত হল।
শুক্রবার রাজ্যের দ্বিতীয় রেলস্টেশন চালু হওয়ার পর টুইট করেছেন নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও। লিখেছেন, ‘নাগাল্যান্ডের জন্য আজ একটি ঐতিহাসিক দিন। আজ আমাদের রাজ্য একশো বছরেরও বেশি সময় পর দ্বিতীয় রেলস্টেশন পেল ধানসারি শোখুভি লাইনে।’
তিনি আরও লেখেন, ‘দোন্যি পোলো এক্সপ্রেস এ বার থেকে শোখুভি স্টেশনেও চলবে, এতে নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের যাত্রীরা গুয়াহাটি যাওয়ার একটি বিকল্প যাত্রাপথ পাবেন।’
একই সঙ্গে রেল আধিকারিকদের কাছে মুখ্যমন্ত্রী অনুরোধ করেছেন, নতুন শোখুভি স্টেশনের জৌলুসে যেন ডিমাপুর স্টেশন ঢাকা না পড়ে যায়। সেই স্টেশনেও যেন পরিষেবা আরও উন্নত হয়।
নাগাল্যান্ডের পাশাপাশি মণিপুর এবং অসমের মানুষও যাতে এর দ্বারা উপকৃত হন, তা-ও দেখতে বলেন তিনি।
উত্তর-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অংশুল গুপ্তা বলেন, ‘‘ভারতীয় রেলের জন্য এটা একটা গর্বের দিন। আমরা উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যের রাজধানীগুলিকে রেলপথের মাধ্যমে যুক্ত করার চেষ্টা করছি।’’
নাগাল্যান্ডের কোহিমা থেকে অসমের ধানসারি পর্যন্ত রেলপথ তৈরির কাজ চলছে। ২০২০ সাল থেকে তার সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৪।
শোখুভি স্টেশন তৈরির কাজ অনেক দিন ধরেই চলছিল। তবে নানা ভাবে নানা সময়ে তা বাধা পেয়েছে। রেললাইন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নেফিয়ু রিও তাই অনুরোধ করেছেন, এ জন্য নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার রেলওয়ে (এনএফআর)-কে দোষারোপ যেন না করা হয়। বরং রাজ্যের মানুষ, গ্রাম পরিষদ এবং নাগরিক সমাজ সংগঠনের নেতৃস্থানীয়দের কাছে রেলের পাশে থাকার আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
নাগাল্যান্ডের আর এক মন্ত্রী জেকব ঝিমোমি জানান, নতুন স্টেশনে দোন্যি পোলো এক্সপ্রেসের যাত্রাপথ সম্প্রসারণের ফলে রাজ্যে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বাড়বে। একই সঙ্গে নাগাল্যান্ড, অসম ও অরুণাচল প্রদেশের পারস্পরিক সম্পর্কও আরও উন্নত করবে শোখুভি স্টেশন, আশাবাদী তিনি।
নাগাল্যান্ডের মতো পাহাড়ি এলাকায় যাতায়াত, যোগাযোগ ব্যবস্থা বরাবরই বড় সমস্যা। রেলের কাজের জন্য জমি পেতেও সমস্যা হয়। সব বাধা পেরিয়ে নতুন স্টেশনে প্রথম বার ট্রেনের চাকা গড়াল শোখুভিতে। খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও।