সদ্যোজাত দ্বীপ বললেও অত্যুক্তি হয় না। ১৯৬৩ সালে সমুদ্রের আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত উত্তর অতলান্তিক মহাসাগরে একটি নতুন দ্বীপ তৈরি করে। আইসল্যান্ডের পৌরাণিক কাহিনির ‘সার্তার’ নামের এক দৈত্যের নামে নতুন দ্বীপের নামকরণ করা হয় সার্ৎস।
আইসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত মাত্র তিন বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে রয়েছে এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি। জন্মের সময় এর উচ্চতা ছিল ৯৫০ ফুট। এর মধ্যে ৩৯০ ফুট ছিল জলের নীচে। কয়েক দশক ধরে ভূমিক্ষয়ের ফলে সেই উচ্চতা কমে দাঁড়িয়েছে ৫০৫ ফুট।
এই দ্বীপটি আইসল্যান্ডের উপকূল থেকে প্রায় ৩২ কিমি দূরে। এটি ইউনেস্কো ওয়ার্লড হেরিটেজ সাইট।
নতুন দ্বীপটির জন্মের খবর জানার পর সেখানে হাজির হন ভূতাত্ত্বিক ও জীববিজ্ঞানীরা। দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার জন্য বর্তমানে এখানে আইসল্যান্ড এবং আমেরিকার বিজ্ঞানীরা একটি কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন।
প্রথমে এই দ্বীপটিতে ছিল না কোনও প্রাণের অস্তিত্ব। ছিল না সবুজের ছোঁয়া। একদল বিজ্ঞানী শুধুমাত্র এখানে পা রাখার অনুমতি পেতেন।
হঠাৎই একদিন তাঁরা সার্ৎসে এসে যা দেখলেন, তাতে তো চক্ষু চড়কগাছে! পাথুরে আগ্নেয় শিলার ফাঁকে উঁকি মারছে সবুজ পাতা। স্বাভাবিক ভাবেই বিজ্ঞানীরা বিস্মিত।
কারণ সদ্য জন্মানো এই দ্বীপের গাছপালা জন্মানো অসম্ভব বলে ধরে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। কারণ সেই সময় দ্বীপটিকে ‘কোয়ারান্টাইন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
সে কারণে গুটি কয়েক মানুষ ছাড়া অন্য কোনও ভাবে মানুষ বা প্রাণীর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব ছিল না এখানে। অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করেই এই দ্বীপে পা রাখতেন বিজ্ঞানী ও গবেষকেরা।
প্রথম গাছের যে প্রজাতিটি জন্ম নিয়েছিল সার্ৎসের মাটিতে, তা-ও আইসল্যান্ডের আশপাশে জন্মানো কোনও পরিচিত প্রজাতি ছিল না বলে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন।
কী ছিল সেই রহস্যময় ভিন্দেশি গাছের প্রজাতি, যা সদ্যোজাত সার্ৎসের মাটির বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিল?
উদ্ভিদ পরিবেশবিদ অগস্ট বিয়র্নসন যখন এই দ্বীপে পা রাখেন তখনই ধরা পড়ে আসল রহস্য। তিনি শেষমেশ খুঁজে বার করেন কোন প্রজাতির গাছ বেড়ে উঠেছে আইসল্যান্ডের এই নতুন দ্বীপটিতে এবং কী ভাবে।
তিনি গাছটির মাটির নীচে খুঁজে পান মানব পূরীষ!
উদ্ভিদ পরিবেশবিদ সিদ্ধান্তে আসেন, দ্বীপে আসা কোনও গবেষক অসাবধানে মলত্যাগ করার ফলেই জন্ম নিয়েছে গাছ। যে গাছটি নিয়ে এত হইচই, সেটি আদতে একটি টম্যাটো গাছ।
মলের মাধ্যমে টম্যাটো বীজ দ্বীপের মাটিতে পড়ে, সেই থেকে জন্ম নেয় গাছটি।
তবে বর্তমানে এখানে অসংখ্য গাছ ও ৩৩৫টির বেশি অমেরুদণ্ডী শ্রেণির প্রাণীর সমাবেশ রয়েছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণার জন্যই মূলত বাইরের কারও প্রবেশ নিষেধ।