সার দিয়ে মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য পিরামিড। যাদের ঘিরে রয়েছে হাজারো রহস্য, সেই পিরামিড তৈরি করেছিলেন কারা? এই নিয়ে একাধিক মত রয়েছে।
পিরামিডের ‘জন্ম’ মিশরে। তবে মিশরের বাইরেও পিরামিড-সদৃশ কাঠামোর হদিস একাধিক বার মিলেছে। পিরামিডের সঙ্গে সেই সব কাঠামোর অনেক মিলও রয়েছে।
কিন্তু শ্বেতশুভ্র বরফে ঢাকা আন্টার্কটিকাতেও রয়েছে পিরামিড! এমনটাই মনে করছেন এক দল ‘কন্সপিরেসি থিয়োরিস্ট’।
‘কন্সপিরেসি থিয়োরিস্ট’দের মতে, আন্টার্কটিকা বরফে আচ্ছাদিত হওয়া সত্ত্বেও এবং কোনও স্থায়ী মানববসতি না থাকা সত্ত্বেও, সেই বরফের নীচেই নাকি ঢাকা রয়েছে ত্রিকোণাকৃতি এক ‘পিরামিড’।
কিন্তু কেন এমনটা মনে করছেন ‘কন্সপিরেসি থিয়োরিস্ট’রা? এর নেপথ্যে রয়েছে একটি উপগ্রহচিত্র। সেই ছবি দেখার পরে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদেরও একাংশ মনে করছেন, আন্টার্কটিকায় বরফে চাপা রয়েছে একটি ‘পিরামিড’।
উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে, আন্টার্কটিকার এলসওয়ার্থ পর্বতমালার দক্ষিণ অংশে বরফ থেকে মাথা তুলেছে পিরামিড আকৃতির একটি কাঠামো। যদিও সেই ছবির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সেই ‘পিরামিড’ এল কোথা থেকে? উল্লেখ্য, এলসওয়ার্থ পর্বতমালায় বেশ কয়েকটি পর্বতচূড়া রয়েছে, যেগুলি ত্রিকোণাকৃতি হলেও তাদের ভিত্তি বর্গাকার এবং প্রতিটি দিকে দু’কিলোমিটার অবধি বিস্তৃত। ঠিক মিশরের পিরামিডের মতো।
‘কন্সপিরেসি থিয়োরিস্ট’দের দাবি, সেগুলি পিরামিডই। কোনও ভাবে মিশর থেকে আন্টার্কটিকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেগুলিকে।
আবার অনেকের মতে, পিরামিড-সদৃশ ওই কাঠামোর নেপথ্যে রয়েছে গোপন সংগঠন ‘ইলুমিনাটি’। আবার অনেকে মনে করছেন, মানুষই ওই পিরামিড সেখানে তৈরি করেছে।
আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ওই কাঠামোটি প্রায় ১০ হাজার বছরের পুরনো এক সভ্যতার অন্তর্গত। সেই সময় আন্টার্কটিকা উষ্ণ ছিল। বরফে ঢাকা ছিল না।
‘কন্সপিরেসি থিয়োরিস্ট’রা যাই বলুন না কেন, ওই ‘পিরামিড’ কিন্তু আসলে একটি পর্বত।
বরফে ঢাকা হিমবাহ এলাকায় এই ধরনের পর্বত দেখতে পাওয়া যায়, যেগুলির চূড়া দেখতে পিরামিডের মতো। এগুলি ‘পিরামিডাল পিকড মাউন্টেন’ নামে পরিচিত।
পটসডামের ‘জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিয়োসায়েন্স’-এর ভূতত্ত্ববিদ মিচ ডারসি একটি সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, আন্টার্কটিকায় ৪০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এলসওয়ার্থ পর্বতমালায় এ রকম পিরামিড-আকৃতির অনেক পর্বতচূড়়া রয়েছে। পর্বত বরফে ঢাকা থাকলেও সেগুলির চূড়া বরফের বাইরে রয়েছে।
ডারসি জানিয়েছেন, চূড়াগুলি স্পষ্টতই পাথর দিয়ে তৈরি এবং ঘটনাচক্রে উপগ্রহচিত্রে যে পর্বত দেখা গিয়েছে, সেটির শিখরও পিরামিড আকৃতির।
ডারসি আরও জানিয়েছেন, এই ধরনের পর্বতচূড়াকে ‘নুনাটক’ বলে যা হিমবাহ বা বরফের চাদরের উপরে উঠে থাকে। ছবিতে যে চূড়া দেখা যাচ্ছে, তা পিরামিড আকৃতির হলেও মানুষের তৈরি নয় বলেও জানিয়েছেন ডারসি।
এলসওয়ার্থ পর্বতমালা আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ পর্বতমালা। ১৯৩৫ সালে লিঙ্কন এলসওয়ার্থ সেই পর্বতমালা আবিষ্কার করেন। তাঁর নামেই এই পর্বতমালা। এলসওয়ার্থ পর্বতমালার গড় তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচে।