Nutty Putty Cave

অন্ধকার রহস্যময় গুহায় আটকে যান যুবক! উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে দেহ সমেত গুহা সিল করে প্রশাসন

আমেরিকার উটা প্রদেশের জনপ্রিয় নাটি পাটি গুহায় ঢুকে প্রাণ হারান বছর ২৬-এর জন। যার জেরে ওই পর্যটনকেন্দ্রকে নিয়ে চরম সিদ্ধান্ত নেয় আমেরিকার সরকার।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৩
Share:
০১ ১৯

অদ্ভুত রহস্যময় এক গুহা। যার ভিতরের জটিল গোলকধাঁধায় আটকে গেলে আর রক্ষা নেই। একটা সময়ে অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের চুম্বকের মতো টানত ভূতাত্ত্বিক এই বিস্ময়। সেখানে ঢুকেই প্রাণ হারান এক হতভাগ্য যুবক। যা এর ভবিষ্যৎ বদলে দিয়েছিল।

০২ ১৯

আমেরিকার উটা রাজ্যের রুক্ষ ভূমিতে রয়েছে একটি গুহা। যার পরিচিতি ‘নাটি পাটি’ হিসাবে। গুহাটির আকর্ষণের মূল কেন্দ্রবিন্দু হল এর ভিতরের হাইড্রো থার্মাল প্যাসেজ। এ ছাড়া সেখানে রয়েছে সরু গলির মতো অসংখ্য রাস্তা।

Advertisement
০৩ ১৯

একটা সময়ে এই গুহা দেখতে হাজার হাজার পর্যটকের পা পড়ত উটার উষর জমিতে। এ ছাড়াও দলে দলে আসতেন গবেষকেরা। আর গুহাটির ভিতরে ঢুকে সফল ভাবে বেরিয়ে আসার দুঃসাহসিক খেলার নেশায় মেতে থাকতেন অভিযাত্রীরা। যাঁদের সিংহভাগই ছিলেন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া।

০৪ ১৯

২০০৯ সালে জনপ্রিয় নাটি পাটি বন্ধ করে দেয় আমেরিকার সরকার। ওই বছরই গুহায় ঢুকে প্রাণ হারান বছর ২৬-এর জন এডওয়ার্ড জোনস। দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করেও হতভাগ্য তরুণকে প্রাণে বাঁচাতে ব্যর্থ হয় স্থানীয় প্রশাসন।

০৫ ১৯

গুহার ভিতরে জোনসের মৃত্যুর সঙ্গে মালয়ালি ভাষার জনপ্রিয় সিনেমার চিত্রনাট্যের পরতে পরতে মিল রয়েছে। ওই ছায়াছবিতে গুহা অভিযানে নামা কেরলের একদল তরুণকে দেখানো হয়েছে। যাঁদের মধ্যে এক জন এর ভিতরে ঢুকে আটকে পড়েন।

০৬ ১৯

মালয়লি চলচ্চিত্রে অবশ্য কারও মৃত্যু হয়নি। দলের বাকিদের সাহায্যে জীবিত অবস্থায় গুহার বাইরে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন ওই যুবক। ২০০৬ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পেয়েছিল এই সিনেমা। যদিও পর্দার ওই যুবকের মতো জোনসের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না।

০৭ ১৯

আমেরিকার উদ্ধারকারী দলগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নাটি পাটিতে আটকে পড়ার পর ২৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন জোনস। তাঁকে বার করে আনার যাবতীয় চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু গুহার মধ্যে একটা উল্লম্ব গর্তের মতো জায়গায় আটকে যান তিনি। ফলে একটা সময়ে শ্বাস বন্ধ হয়ে যায় তাঁর।

০৮ ১৯

নাটি পাটিতে জোনসের প্রবেশের দিনক্ষণ ছিল ২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ গুহার ভিতরে পা রাখেন তিনি। ১১ জনের একটি দলের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন জোনসের ভাই জোশও।

০৯ ১৯

সংবাদ সংস্থা ‘সিএনএন’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দিন রাত ৮টা ৪৫ মিনিট নাগাদ গুহার ভিতরের সরু গলিপথে আটকে যান জন। যার পোশাকি নাম ‘ববস্ পুশ’ বলে জানিয়েছিল স্থানীয় শেরিফের অফিস।

১০ ১৯

নাটি পাটির মধ্যেকার গলিপথগুলি এতটাই সরু যে সেখানে হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটা ছাড়া অন্য রাস্তা নেই। জনও সে ভাবে সামনের দিকে এগোচ্ছিলেন। কিন্তু গলিপথে উল্লম্ব গর্তের কথা জানতেন না তিনি। ফলে আচমকাই পিছলে মাথা-সহ শরীরের উপরের দিকে অংশ ওর মধ্যে ঢুকে যায় তাঁর।

১১ ১৯

জন যে গর্তে পড়ে যান, তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১০ ও ১৮ ইঞ্চি বলে জানিয়েছে সিএনএন। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১৫০ ফুট গভীরে এর অবস্থান। গুহার প্রবেশদ্বার থেকে প্রায় ৭০০ ফুট দূরে গুঁড়িপথের মধ্যে এর অবস্থান।

১২ ১৯

উটার গুহাপথের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা লিখতে গিয়ে ‘মিরর ডট কো ইউকে’ লিখেছিল, ‘‘গর্তে পড়ে যাওয়ার পর হুকে ঝুলে থাকার মতো দশা হয়েছিল জনের। তিনি কোনও ভাবেই নড়াচড়া করতে পারছিলেন না।’’

১৩ ১৯

নাটি পাটি থেকে জীবিত অবস্থায় জোনসকে বার করে আনতে চেষ্টার ত্রুটি করেনি আমেরিকার স্থানীয় প্রশাসন। একাধিক উদ্ধারকারী দলকে কাজে লাগানো হয়। কপিকলে দড়ি বেঁধে তার সাহায্যে টেনে জনকে বাইরে নিয়ে আসার মরিয়া চেষ্টা করেন তাঁরা। এই কাজ ছিল মারাত্মক ঝুঁকির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হন তাঁরা।

১৪ ১৯

জনের আগে ওই গুহায় ঢুকে আটকে পড়ার ঘটনা যে কখনও ঘটেনি, তা কিন্তু নেই। প্রতি বারই সাফল্যের সঙ্গে অভিযাত্রীদের বার করে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন উদ্ধারকারীরা। ‘‘জনের ক্ষেত্রে ব্যর্থতার মূল কারণ হল, তাঁর সঠিক অবস্থান খুঁজে পেতে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, গুহার ওই অংশের ভূপ্রকৃতি বুঝতেও সমস্যা হয়েছিল।’’ প্রতিবেদনে লিখেছিল সিএনএন।

১৫ ১৯

তা ছাড়া উদ্ধারকাজ চলাকালীন হঠাৎ করেই একটা যন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপদ বেড়েছিল। সেটির সাহায্যে জনকে ধীরে ধীরে গর্তের বাইরে নিয়ে আসা হচ্ছিল। কিন্তু তাতে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ফের গর্তের মধ্যে যেখানে আটকে ছিলেন, সেখানেই গিয়ে পড়েন জন। ফলে তাঁকে জীবিত ভাবে উদ্ধারের যাবতীয় আশা শেষ হয়ে যায়।

১৬ ১৯

২৫ নভেম্বর মধ্যরাতে জনের কাছে পৌঁছন উদ্ধারকারীরা। গুহার মধ্যেই তাঁর শ্বাস পরীক্ষা করা হয়। তাঁর প্রাণবায়ু বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়। উদ্ধারকারী দলের এক সদস্যের কথায়, ‘‘শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল জনের। ১৬০ থেকে ১৭০ ডিগ্রি কোণে ঝুলে ছিল তাঁর দেহ। শক্ত পাথর আর সরু দেয়ালের কারণে তাঁকে বার করে আনার বিকল্পগুলি ছিল খুবই সীমিত।’’

১৭ ১৯

প্রাথমিক ভাবে স্ট্যান্সবারি পার্কের বাসিন্দা জনের দেহ গুহার বাইরে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু, সেই কাজও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় পরিকল্পনা বদল করে চরম সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। মৃতদেহ গুহার মধ্যে ফেলে রেখে তা চিরতরে বন্ধ করে দেয় প্রশাসন।

১৮ ১৯

২০০৯ সালের ডিসেম্বরে নাটি পাটির প্রবেশদ্বার কংক্রিট দিয়ে আটকে দেয় সরকার। ফলে তাতে পর্যটক বা অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের ঢোকা চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে রেখে গুহার গলিপথে চিরতরে হারিয়ে যান জন।

১৯ ১৯

২০১৬ সালে নাটি পাটির এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয় একটি হলিউড সিনেমা। যার নাম ছিল ‘দ্য লাস্ট ডিসেন্ট’। চলচ্চিত্রটিতে জনের ভূমিকায় অভিনয় করেন চ্যাডউইক হপসন। আইজ্যাক হালাসিমা ছিলেন এর পরিচালক।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement