মাটিতে মাথা রেখে বাদ্যযন্ত্রে সুর তোলা হোক বা বেসবল লুফে নেওয়া— সবেতেই পটু মেরি। তাঁর টানেই চার্লি স্পার্কসের সার্কাসে ভি়ড় জমাতেন আট থেকে আশি। সার্কাসের অন্যতম তারকা ছিল প্রায় পাঁচ টনের মাদী হাতিটি।
তবে সেই মেরিকেই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল লোকজন। তাতেও বেঁচে গিয়েছিল সে। এর পর আহত মেরিকে নিকেশ করতে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল।
১৯১৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মেরিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন পশু চিকিৎসকেরা। বছর বাইশের মেরির অপরাধ, তাঁর দেখভাল করার জন্য নিযুক্ত সার্কাসের এক অস্থায়ী কর্মীকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছড়ে মেরে ফেলেছিল সে। ১০০ বছরেরও বেশি আগে তাকে ‘খুনে’ তকমা দিয়েছিল আমেরিকার টেনেসির বহু বাসিন্দা।
অনেকের দাবি, মেরিই একমাত্র হাতি যাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল। কেন ‘খুন’ করল মেরি?
চার বছরের মেরিকে কিনে এনেছিলেন চার্লির বাবা। চার্লি স্পার্কস এবং তাঁর স্ত্রী অ্যাডি মিচেলের কাছে সন্তানের মতো ছিল সে। আকারে অন্য হাতিদের থেকে প্রায় ইঞ্চি তিনেকে লম্বা হওয়ায় ডাকনাম হয়ে গিয়েছিল ‘বিগ মেরি’।
‘স্পার্কস ওয়ার্ল্ড ফেমাস শোজ’ সার্কাস নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে যে শহরেই যান না কেন চার্লি, মেরির আকর্ষণে লোকজন ছুটে আসত। এ ভাবেই এক বার টেনেসির সালিভান কাউন্টিতে পৌঁছন চার্লিরা। সেখানেই ঘটেছিল অঘটন।
মেরির দেখাশোনার জন্য স্থানীয় এক অস্থায়ী হোটেলকর্মীকে কাজ দিয়েছিলেন চার্লি। যদিও ওয়াল্টার রেড এলড্রিজ নামে ওই কর্মী হাতিদের দেখাশোনার বিষয়ে তেমন অভিজ্ঞ ছিলেন না। ১১ সেপ্টেম্বর ১৯১৬ তাঁকেই ‘খুন’ করেছিল মেরি। কী ভাবে? তা নিয়ে একাধিক দাবি রয়েছে।
ঘটনার দিন সার্কাসের অন্য হাতিদের সঙ্গে মেরিকে নিয়ে তাদের প্যারেড করাচ্ছিলেন ‘মাহুত’ ওয়াল্টার। মেরির উপরে অঙ্কুশ নিয়ে বসেছিলেন তিনি। হঠাৎই কাছে রাখা তরমুজের টুকরোর দিকে নজর যায় মেরির। শুঁড় দিয়ে তা টেনে খাওয়ার চেষ্টা করতে মেরির কানের পিছনে এল ওয়াল্টারের এক খোঁচা।
ডব্লিউ এইচ কোলম্যান নামে এক প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, অঙ্কুশ দিয়ে খোঁচানোর সঙ্গে সঙ্গে ওয়াল্টারকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে টেনে নামিয়ে আনে মেরি। এর পর শূন্যে প্রায় ১০ ফুট ছুড়ে দেয়। একটি পানীয়ের স্ট্যান্ডে ধাক্কা লেগে মাটিতে ছিটকে পড়েন তিনি। এর পর ওয়াল্টারের শরীরে দু’টি দাঁত পুরোপুরি গেঁথে দেয় মেরি। তাতেও থামেনি সে। ওয়াল্টারের মাথায় পা রেখে থেঁতলে দেয়। এর পর লাথি মেরে তাঁকে ছুড়ে দেয় মেরি।
এ হেন নৃশংসতায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন অনেকে। তবে ঘটনার পর নাকি আচমকাই শান্ত হয়ে যায় মেরি। তবে তাতে মেরিকে ঘিরে থাকা জনতার রোষ কমেনি। মেরির শাস্তির দাবিতে স্লোগান তোলেন তাঁরা— ‘‘কিল দি এলিফ্যান্ট! লেট’স কিল ইট!’’ স্থানীয় এক জন সে চেষ্টাও করেন। মেরিকে মারতে পাঁচ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিলেন তিনি। তবে গুলিতে ঝাঁঝরা হলেও মেরিকে খতম করা যায়নি।
মেরিকে ঘিরে জনতার রোষ বাড়ছিল। অনেকে সার্কাস বন্ধ করার দাবি তোলেন। ব্যবসা বাঁচাতে সন্তানসম মেরিকে জনসমক্ষে ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত নেন চার্লি।
১৩ সেপ্টেম্বর ট্রেনে করে আহত মেরিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ইউনিকয় কাউন্টিতে। সেখানে মেরির ফাঁসি দেখতে হাজির হয়েছিল বাচ্চা-বুড়ো মিলিয়ে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।
সে দিন বিকেলে ইউনিকয় কাউন্টির রেললাইনের উপরে ক্রেনে করে ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয়েছিল শিকলে বাঁধা মেরিকে। তবে প্রায় পাঁচ ফুট ওঠার পর বিপত্তি। মেরির ওজনের ভারে ক্রেনের শিকল ছিঁড়ে গিয়েছিল। মাটিতে পড়ে মেরির কোমর ভেঙে যায়। যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে মেরি। তাতেও জনতার রোষ কমেনি। মেরির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। চলে গণপিটুনি।
দ্বিতীয় বারের প্রচেষ্টা সফল হয়েছিল। মেরিকে পরীক্ষার পর পশু চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছে মেরির।
আরও একটি কথা জানা গিয়েছিল। মেরির কানের পিছনে ঠিক যেখানে ওয়াল্টার খোঁচা দিয়েছিলেন, সেখানে সংক্রমণের জেরে আগে থেকেই যন্ত্রণায় কাতর ছিল মেরি!