সঙ্গীতের জগতে হোক বা অভিনয়জগতে, সত্তরের দশক থেকে আশির দশকের মধ্যে বলিপাড়ায় নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন বলি অভিনেত্রী-সঙ্গীতশিল্পী সুলক্ষণা পণ্ডিত। বর্তমানে বলিপাড়া থেকে বহু দূরে রয়েছেন তিনি। কানাঘুষো শোনা যায়, এর নেপথ্যে রয়েছেন এক বলি অভিনেতা।
ছোট থেকেই সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ ছিল সুলক্ষণার। তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্য সঙ্গীতজগতের সঙ্গে যুক্ত। বলিপাড়ার জনপ্রিয় সঙ্গীত নির্মাতা যতীন এবং ললিত সম্পর্কে সুলক্ষণার ভাই। তাঁর বোন বলি অভিনেত্রী বিজয়েতা পণ্ডিত।
ন’বছর বয়স থেকে গান করতে শুরু করেন সুলক্ষণা।১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘তকদীর’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের গাওয়া ‘সাত সমুন্দর পার সে’ গানে গলা মেলান সুলক্ষণা।
১৯৭৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উলঝন’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন সুলক্ষণা। এই ছবিতে বলি অভিনেতা সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন তিনি।
জীতেন্দ্র, রাজেশ খন্না, বিনোদ খন্না, শশী কপূর, শত্রুঘ্ন সিন্হার মতো বলি অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান সুলক্ষণা।
১৯৭৮ সালে মুক্তি পাওয়া ‘বন্দি’ নামের বাংলা ছবিতে উত্তম কুমারের সঙ্গেও অভিনয় করেন সুলক্ষণা।
অভিনয়ের পাশাপাশি গানের জগতেও নিজের পরিচিতি তৈরি করেন সুলক্ষণা। হিন্দি, বাংলা, মরাঠি, ওড়িয়া এবং গুজরাতি ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। কিশোর কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, মহম্মদ রফি এবং উদিত নারায়ণের সঙ্গে গান করেন সুলক্ষণা।
১৯৮৬ সালে লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে পারফর্ম করেন সুলক্ষণা। তাঁকে শেষ গান করতে দেখা যায় ১৯৯৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘খামোশি: দ্য মিউজ়িক্যাল’ ছবির ‘সাগর কিনারে ভি দো দিল’ গানে।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, সঞ্জীব কুমারকে প্রেম নিবেদন করেছিলেন সুলক্ষণা। কিন্তু অভিনেতা সুলক্ষণার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
বলিউডের অন্দরমহলের গুঞ্জন, সেই সময় অন্য অভিনেত্রীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন সঞ্জীব। সেই অভিনেত্রীকে দু’বার প্রেম নিবেদনও করেন সঞ্জীব। কিন্তু সঞ্জীবের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন সেই অভিনেত্রী।
প্রেমের কাহিনি বুনতে ব্যর্থ হলে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন সঞ্জীব।
সঞ্জীবের সঙ্গে সংসার গড়তে পারবেন না বলে সুলক্ষণাও বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সঞ্জীবকে মনের কথা জানানোর প্রভাব গিয়ে পড়ে সুলক্ষণার কেরিয়ারে।
এর পর ধীরে ধীরে সুলক্ষণার কাছে অভিনয়ের প্রস্তাব আসা কমতে থাকে। কাজ না পেয়ে মন আরও ভেঙে যায় অভিনেত্রীর। ১৯৮৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দো ওয়াক্ত কি রোটি’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় সুলক্ষণাকে। এই ছবিতেও সঞ্জীবের সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি।
১৯৮৫ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান সঞ্জীব। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বিজয়েতা জানান, সঞ্জীবের প্রয়াণের পর মানসিক অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন সুলক্ষণা।
২০০৬ সালে বিজয়েতা তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান সুলক্ষণাকে। বিজয়েতার দাবি, নিজেকে ঘরবন্দি করে রাখতেন সুলক্ষণা। কারও সঙ্গে কথা বলতে চাইতেন না তিনি।
এর পর এক দিন বাথরুমে পা পিছলে পড়ে মারাত্মক চোট পান সুলক্ষণা। চার বার অস্ত্রোপচার হয় তাঁর। হাঁটাচলা করতেও বর্তমানে কষ্ট হয় সুলক্ষণার।