নিরাপত্তার কারণে চার চাকা গাড়িগুলিতে ছ’টি করে এয়ারব্যাগ থাকা আবশ্যিক। কিন্তু তথ্য বলছে, দেশের রাস্তায় চলাচল করা গাড়িগুলির মধ্যে ৯০ শতাংশ গাড়িতেই ছ’টি করে এয়ারব্যাগ নেই। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই মূল বৈশিষ্ট্যটি কেবল মাত্র কয়েকটি বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিভিন্ন কোম্পানির একই গাড়ির আলাদা আলাদা দামের মডেল রয়েছে। যে গাড়িগুলিতে কম এয়ারব্যাগ রয়েছে সেই মডেলের দাম অপেক্ষাকৃত কম। এয়ারব্যাগের সংখ্যা বেশি হলে সেই গাড়ির দামও তুলনামূলক ভাবে বেশি।
অটোমোবাইল শিল্প এবং সরকারি সূত্র অনুযায়ী, দাম কম হবে বলে বেশির ভাগ ক্রেতা কম এয়ারব্যাগ থাকা গাড়ি কেনার দিকেই ঝোঁকেন।
দেশের বেশির ভাগ চারচাকার গাড়িগুলিতেই দু’টি করে এয়ারব্যাগ থাকে। এর থেকে কম এয়ারব্যাগ থাকা গাড়িগুলির ভারতের রাস্তায় চলাচলের অনুমতি নেয়। এই বছরের জানুয়ারি মাসে সমস্ত নতুন গাড়িতে এয়ারব্যাগ থাকা বাধ্যতামূলক করেছে কেন্দ্র। এর আগে কেনা গাড়িগুলির মধ্যে এমন অনেক গাড়িও রয়েছে, যাতে একটিও এয়ারব্যাগ নেই।
তথ্য বলছে, বিশ্বে ভারতেই পথদুর্ঘটনার পরিমাণ সব থেকে বেশি। সরকার সম্প্রতি এই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে। কেন্দ্রের দাবি, গাড়িগুলিতে এয়ারব্যাগ থাকলে রাস্তায় দুর্ঘটনার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমবে।
তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর সমস্ত যানবাহনের মধ্যে মাত্র এক শতাংশ ভারতে রয়েছে। অথচ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১১ শতাংশ।
দুর্ঘটনা কমাতে সরকার সমস্ত গাড়ি কোম্পানিগুলিতে আরও সুরক্ষা বাড়ানোর উপর জোর দিতে বলছে। গাড়ি কোম্পানিগুলি কিন্তু অন্য কথা বলছে।
অটোমোবাইল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এক অংশের দাবি, সরকারের তৎপরতাতেই এক মাত্র দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব। তাদের মতে, সরকারের উচিত সিট বেল্ট পরার নিয়মে কড়াকড়ি করা।
মত্ত অবস্থায় বা উচ্চ গতিতে গাড়ি চালানো এবং রাস্তার ভুল দিকে গাড়ি চালানোর ফলেই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি অটোমোবাইল সংস্থাগুলির।
এই সংস্থাগুলির দাবি সরকারের পক্ষ থেকে নিয়ম নিয়ে কড়াকড়ি করলে তবেই কমবে দুর্ঘটনার সংখ্যা। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রাণহানির সংখ্যাও কমবে।
সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে সমস্ত গাড়িতে ছ’টি করে এয়ারব্যাগ থাকা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
অটোমোবাইল শিল্পের একাংশের বিরোধিতার কারণে নতুন নিয়মের খসড়া তৈরি করা হলেও বিশেষ কিছু লাভ হয়নি। তবে মন্ত্রী নিতিন গডকরী সোমবার জানান যে, এই পরিকল্পনাটি নিয়ে এখনও কাজ চলছে।
সংসদের অধিবেশনে গডকরী জানিয়েছিলেন, গাড়িতে ছ’টি এয়ারব্যাগ থাকার কারণে ২০২০ সালে পথদুর্ঘটনায় ১৩ হাজারেও বেশি মানুষ মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে গিয়েছেন।
বর্তমানে মারুতি, হুন্ডাই এবং টাটা মোটরসের মতো কিছু সংস্থা গ্রাহকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে কিছু গাড়ির মডেলে ছ’টি এয়ারব্যাগের ব্যবস্থা করলেও তাদের বহু মডেলে এখনও দু’টি করেই এয়ারব্যাগ রয়েছে।
মার্সিডিজ বেন্জ, অডি এবং ভলভোর মতো বিলাসবহুল গাড়িগুলির বেশির ভাগ গাড়িতেই ছ’টি এয়ারব্যাগ রয়েছে।
ভারতে বিভিন্ন সংস্থার গাড়িগুলিতে কেন আরও বেশি করে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য যোগ করা দরকার তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হল, পথদুর্ঘটনায় টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির মৃত্যু। রবিবার দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ নাগাদ মুম্বই থেকে ১৩৫ কিলোমিটার দূরে পালঘরের চারোটি এলাকায় সূর্য নদীর সেতুর উপর থাকা ডিভাইডারে ধাক্কা মারে সাইরাসদের গাড়িটি। ঘটনাস্থল থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় সাইরাসকে। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪।
সূত্রের খবর, পালঘরের চারোটি চেকপোস্ট পেরিয়ে পরের ২০ কিলোমিটার মাত্র ন’মিনিটে অতিক্রম করেছিল সাইরাসদের গাড়ি। অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে চলছিল এই গাড়িটি। প্রাথমিক তদন্তে মনে করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গতির কারণেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন গাড়ির চালক। আর এর ফলেই গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। তাই এই প্রশ্নও উঠছে যে, পথদুর্ঘটনা এড়াতে সরকারকেও কি নিয়মনীতি নিয়ে যথেষ্ট সতর্ক হওয়া উচিত নয়!