‘‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখো তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন’’— সারা পৃথিবীর কোনায় কোনায় এমন বহু জায়গা রয়েছে, যার কথা শুনে বাস্তবে এমন জায়গা থাকতে পারে বলে মনে না হলেও স্বচক্ষে দেখলে আপনি অবাক হতে বাধ্য হবেন। মনে হতে পারে, অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে যেন অমূল্য গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কোথাও সাঁতার না জেনেও জলে ভেসে থাকতে পারেন, কোথাও আবার দেখা মেলে কাচের পাথরে সাজানো সমুদ্রসৈকতের।
মিশরের পশ্চিমে সিওয়া মরূদ্যানের ভিতর শতাধিক ছোট ছোট গভীর জলাশয় রয়েছে, যেখানে সাঁতার না জানলেও মানুষ ভেসে থাকতে পারে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, জলে লবণের মাত্রা বেশি হওয়ার কারণেই নাকি বেশি ওজনের জিনিসও জলাশয়ে ভেসে থাকতে পারে।
যদিও স্থানীয়দের একাংশের দাবি, সিওয়ার জলাশয়গুলির নেপথ্যে রয়েছে কোনও রহস্যময় শক্তির উৎস। সে কারণেই নাকি কেউ জলে ডুবতে পারেন না। এই জলাশয়ে ভেসে থাকলে নাকি বহু দুরারোগ্য অসুখও সেরে যায় বলে তাঁরা দাবি করেন।
ইটালির পালের্মো থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত রয়েছে সিসিলির গাঙ্গি শহর। পাখির দৃষ্টিতে এই শহর দেখলে মনে হয় তা বোধ হয় মানুষের বাসযোগ্য নয়। বাড়িঘরগুলি এতই লাগোয়া যে দেখলেই দমবন্ধ লাগে।
পাখির নজরে গাঙ্গি শহরে আবাসনের ঘনত্ব দেখে অস্বস্তি হলেও বাস্তবে এর সৌন্দর্য দুর্ধর্ষ। বাস্তবে নীচ থেকে উপরের দিকে ধাপে ধাপে এই শহরে তৈরি করা হয়েছে ঘরবাড়িগুলি। শহরটি আদতে খুব খোলামেলা। কিন্তু দূর থেকে দেখলে মনে হয় এক জায়গায় জটলা করে বহু আবাসন নির্মাণ করা হয়েছে। গাঙ্গি শহরের সৌন্দর্যের টানে বহু পর্যটক সেখানে ঘুরতে যান।
উচ্চতার নিরিখে সারা বিশ্বের তৃতীয় উঁচু গির্জাটি অবস্থিত রয়েছে জার্মানিতে। কোলোন ক্যাথিড্রাল চার্চের উচ্চতা ৫১৫ ফুট। উচ্চতার পাশাপাশি বিশ্বের পুরনো গির্জার মধ্যেও এটি অন্যতম।
জার্মানির উচ্চতম গির্জার নির্মাণ শুরু হয় ১২৪৮ সালে। ১৫৬০ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয়। পরবর্তী কালে ১৮৫০ সালে পুনর্নির্মাণ শুরু হয়ে তা আবার ১৮৮০ সালে শেষ হয়। ১৯৫০ সালে দ্বিতীয় বার পুনর্নির্মাণ করা হয় এই গির্জা। গির্জাটি এমন ভাবে খোদাই করা হয়েছে যে, ছবিতে দেখলে মনে হয় পুরো গির্জাটিই যেন প্রযুক্তির মাধ্যমে আঁকা।
সমুদ্রসৈকতের ধারে বালি দিয়ে ঢাকা নয়, বরং খালি চোখে দেখলে মনে হয় চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে কাচের পাথর। শুনলে রূপকথার গল্প মনে হলেও বাস্তবে এই ধরনের সমুদ্রসৈকতের অস্তিত্ব রয়েছে।
আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ায় রয়েছে ‘গ্লাস পেবল’ নামে একটি সমুদ্রসৈকত। বালির পরিবর্তে এই সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকতে দেখা যায় সারি সারি ‘সি গ্লাস’ পাথর। এই ধরনের পাথর দেখতে কাচের মতো হওয়ায় সমুদ্রসৈকতের নামকরণও তার উপর ভিত্তি করে রাখা হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে এর সৌন্দর্য দেখার জন্য পর্যটকের ভিড় জমা হয় এই সমুদ্রসৈকতে।
স্কটল্যান্ডের স্টাফা নামের জনবসতিশূন্য একটি দ্বীপের মধ্যে রয়েছে ফিঙ্গাল নামের একটি গুহা। স্কটল্যান্ডের স্থানীয়দের একাংশের মতে, এই গুহা নাকি রহস্যময়। এমনকি বিজ্ঞানীরাও এই গুহার আবিষ্কার সম্পর্কে নিশ্চিত নন।
সমুদ্রের বুকে অবস্থিত ফিঙ্গাল গুহার অবস্থান এমনই যেন দেখে মনে হয় তা সমুদ্রের উপরে ভেসে রয়েছে। সমুদ্রের জলও গুহার গভীর পর্যন্ত আছড়ে পড়েছে। গুহার আকার-আয়তন এতটাই অপূর্ব, যা দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তবে এমন জনমানবশূন্য, দুর্গম জায়গায় খাঁজকাটা গুহা তৈরি হলই বা কী ভাবে?
বিজ্ঞানীদের অনুমান, দীর্ঘ দিন ধরে লাভা নির্গমনের কারণে নাকি ফিঙ্গাল গুহা তৈরি হয়েছে। গুহার বাইরের দেওয়ালে যখন সমুদ্রের জল ধাক্কা খায়, তখন এক অদ্ভুত ধরনের শব্দ ভেসে আসে। এই ধরনের শব্দের উৎসস্থল কী, তা নিয়েও নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা।
হ্রদের ধারে প্রায় পাঁচ থেকে আট কিলোমিটার জায়গা জুড়ে রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি পাথরের থাম। এক ফুট উচ্চতার এই থামগুলির মাথা এক বিশাল পাথরের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। সেই পাথরের উপর জন্মেছে ঘাসের স্তূপ।
পাঁচ হাজার থামযুক্ত এই বিশালাকার পাথরটি রয়েছে আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়ার ক্রাউলি হ্রদের পূর্ব দিকে। এই প্রত্যন্ত এলাকায় এমন নিখুঁত কারুকাজের নেপথ্যে যে মানুষের হাত নেই, সে বিষয়ে নিশ্চিত ছিলেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে জানান, ক্রাউলি হ্রদের ধারে পাথরের থামগুলি আসলে আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে ঘটেছে। আজ থেকে প্রায় সাত লক্ষ বছর আগে সেখানে অগ্ন্যুৎপাত হয়, যা পরবর্তী কালে এই থামের আকার ধারণ করেছে। পর্যটনস্থল হিসাবেও উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠেছে পাথরের এই থামগুলি।
গ্রিসের উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে মিটিওরা নামে একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা। পাহাড়ের উঁচু মাথায় গড়ে উঠেছে জনবসতি। কিন্তু পাথরের এই খাড়া পাহাড়ের উপর হঠাৎ লোকজন থাকা শুরু করলেন কেন?
স্থানীয়দের দাবি, কয়েক শতাব্দী আগে থেকেই নাকি পাহাড়ের উপর জনবসতি গড়ে উঠেছিল। দড়ি বেয়ে ওঠানামা করতেন সেখানকার স্থানীয়েরা। পরে অবশ্য যাতায়াতের সুবিধার জন্য পাহাড় কেটে সিঁড়ি তৈরি করা হয়। অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী পর্যটকদের কাছে এই জায়গা আকর্ষণীয়ও বটে।
শ্রীলঙ্কায় সিগিরিয়ায় পাহাড়ের উপরে থাকা পাথরের দুর্গের ভগ্নাবশেষ শ্রীলঙ্কার পর্যটনস্থলগুলির মধ্যে অন্যতম। তবে স্থানীয়দের মতে এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রামায়ণের ইতিহাস।
শ্রীলঙ্কার স্থানীয়দের অধিকাংশের মতে, সিগিরিয়া পাহাড়ের উপর দুর্গটি আসলে রাবণের। সীতাহরণের পর সীতাকে নাকি রাবণ এই দুর্গে বন্দি করে রেখেছিলেন। যদিও এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্নচিহ্নও উঠেছে। অনেকের ধারণা, এই এলাকা জুড়ে ঘন জঙ্গল ছিল। ঝড়-ঝঞ্ঝার কারণে তা পাথুরে পাহাড়ে পরিণত হয়। শ্রীলঙ্কার রাজা কাশ্যপ এই স্থানেই তাঁর রাজধানী গড়ে তোলেন এবং পাহাড়ের মাথায় তৈরি করেন রাজমহল।