ফলের লোভে চলে এসেছিল সে। বোঝেওনি দোষটা। কিন্তু রেয়াত করেননি পাকিস্তানের নিরাপত্তারক্ষীরা। সোজা তাকে পুরে দেন হাজতে। সেই থেকে হাজতবাস হনুমানের।
সময়টা ২০১১ সাল। বেআইনি ভাবে ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত পার করার জন্য ‘গ্রেফতার’ হয় সেই হনুমান।
সংবাদমাধ্যম জানায়, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ‘গ্রেফতার’ হয়েছে হনুমানটি। বাহাওয়ালপুর বন দফতরের কর্মীরা তাকে আটক করেছেন।
বাহাওয়ালপুর জেলার চোলিস্তানে ঢুকে পড়েছিল সেই হনুমান। চোখে পড়ে স্থানীয়দের। অচেনা ঠেকে সেই হনুমান। ধরার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু ব্যর্থ হন। এর পরেই বন দফতরকে খবর দেন তাঁরা।
বন দফতরের কর্মীরা এসে পাকড়াও করেন হনুমানটিকে। বোঝেন, সীমান্তের ওপার থেকে এসেছে সে। শুরু হয় খোঁজখবর, খানাতল্লাশি।
হনুমানের গোটা শরীর খুঁজে দেখেন নিরাপত্তারক্ষীরা। এক্স-রে করে দেখেন। তার পরেই নিশ্চিত হন, নাহ্, ‘গুপ্তচর’ নয় সে। নেহাতই এক প্রাণী, খাবারের তাগিদে সীমান্ত পেরিয়ে চলে এসেছে।
এর পরেই হনুমানটির ঠাঁই হয় বাহাওয়ালপুর চিড়িয়াখানায়। তার নতুন নামকরণও হয়। তাকে ববি নামে ডাকতে শুরু করেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।
ববি একা নয়। এই তালিকা দীর্ঘ। প্রায়ই সীমান্তরক্ষী বা সীমান্তের আশপাশে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ধরা পড়ে পশু, পাখি। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে। চলে তল্লাশি। অনেক সময়ই দেখা যায়, তারা অভিযুক্ত। তখন বিচার চলে। পরিণতি খুব একটা ভাল হয় না। হাজতবাস, এমনকি মৃত্যুও হয়।
২০১০ সালের মে মাসে ভারতীয় পুলিশ গ্রেফতার করে এক পায়রাকে। সীমান্তের ও পার থেকে উড়ে এসেছিল সে। পরে দেখা যায়, পাকিস্তানের হয়ে চরবৃত্তি করছিল। তার গায়ে লাগানো ছিল গোপন ক্যামেরা এবং রেকর্ডার। পাকিস্তানে বসে সে সব শুনছিল গুপ্তচর সংস্থা।
পঞ্জাবের অমৃতসর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে এক বাসিন্দা সন্দেহের বশে পায়রাটিকে ধরেন। পুলিশকে খবর দেন তিনি। পরে পুলিশ এসে পাকড়াও করে পায়রাটিকে।
ওরা সীমানা বোঝে না। ওরা দেশ বোঝে না। ওরা দুই দেশের কূটনৈতিক চাপান-উতোর বোঝে না। তবু ওই নিরীহ প্রাণীরা পরিস্থিতির শিকার হয়। এই ঘটনা আকছার ঘটে সীমান্তে। ভারতের হাতে ধরা পড়ে পাকিস্তানের পাঠানো ‘চর’।
২০২১ সালের এপ্রিলে পঞ্জাব সীমান্তে এর রক্ষীর কাঁধে এসে বসে একটি পায়রা। তার পায়ে বাঁধা ছিল একটি চিরকুট। যেখানে লেখা ছিল একটি ফোন নম্বর। সেটি সম্ভবত পাকিস্তানের। গোয়েন্দাদের ধারণা, এ পারে নিজেদের গুপ্তচরকে কোনও সঙ্কেত পাঠাতে চেয়েছিল পাকিস্তান। গ্রেফতার হয় সেই পায়রা।
২০২০ সালের মে মাসে কাশ্মীরে ধরা পড়ে একটি পায়রা। তারও পায়ের চিরকুটে লেখা ছিল নম্বর। পরে সেই পায়রার পাকিস্তানি মালিক দাবি করেন, সেটি তাঁর পোষ্য। হারিয়ে যাবে ভয়ে পায়রার পায়ে বেঁধে দেন নিজের ফোন নম্বর।
২০১৭ সালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা একটি বাজপাখিকে ধরে ফেলেন। তার গায়ে লাগানো ছিল বৈদ্যুতিন যন্ত্র। এই তালিকা দীর্ঘ। বছরে প্রায় দু’-তিনটি করে প্রাণী ধরা পড়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে। তাদের মধ্যে অনেকেই চরবৃত্তির কাজে দোষী সাব্যস্ত হয়। অনেকে ছাড় পায়।