গাড়ি দুর্ঘটনায় বদলে যায় জীবন। দুর্ঘটনার পর ঠিক করে চলা ফেরা করারও শক্তি হারিয়েছিলেন কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের বাসিন্দা মিয়া মিরান্ডা। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠার পর ঠিক করেন পেশা হিসাবে বেছে নেবেন মডেলিংকে। আর মডেলিং করেই মিয়ার বর্তমান মাসিক আয় লক্ষ লক্ষ টাকা!
দুর্ঘটনা হওয়ার আগে দীর্ঘ দিন ‘শখের’ যৌনকর্মী ছিলেন মিয়া। অর্থাৎ ইচ্ছা হলে তবেই তিনি যৌনকর্মী হিসাবে কাজ করতেন।
২০২০ সালে এক পথ দুর্ঘটনার শিকার হন মিয়া। তার পরই তাঁর জীবন বদলে যায়। দুর্ঘটনার পর দীর্ঘ বেশ কয়েক মাস ধরে তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন।
দুর্ঘটনায় মিয়ার শরীরের একাধিক জায়গায় আঘাত লাগে। আঘাত পেয়েছিলেন পা এবং কোমরের হাড়েও। আর সেই কারণেই চলাফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মাথাতেও চোট পেয়েছিলেন মিয়া। এর পরের কয়েক মাস তিনি প্রায় প্রতিনিয়ত মাথাব্যথা এবং বমির সমস্যায় ভুগতেন। শুরু করেছিলেন প্রলাপ বকতেও। চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন, এ রকম চলতে থাকলে পাগলও হয়ে যেতে পারেন মিয়া।
বিছানায় দীর্ঘ দিন শুয়ে মিয়া হতাশায় ভুগতে থাকেন। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করা তো দূরের কথা, সামান্য দু’পা হেঁটে বাড়ি থেকে বাইরে যেতে পারতেন না তিনি। বিছানায় শুয়ে খিটখিটেও হয়ে গিয়েছিলেন।
ছোট বেলা থেকেই নাচের শখ ছিল। কোনও দিন হয়তো আর নাচতে পারবেন না, এই ভেবে আরও ভেঙে পড়েন তিনি।
কয়েক মাসে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে মিয়ার আনুষঙ্গিক শারীরিক সমস্যা কমলেও হাঁটার শক্তি ফিরে পাননি। পরিবারের তরফে তাঁর জন্য ফিজিয়োথেরাপিস্টের ব্যবস্থা করা হয়। ওই ফিজিয়োথেরাপিস্টই ছিলেন মিয়ার শেষ ভরসা।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ফিজিয়োথেরাপিস্টের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সা শুরু হয় মিয়ার। তিনি যেন এক অন্য সংগ্রামে নেমেছিলেন। সংগ্রামে নেমেছিলেন নিজের সুস্থ হওয়ার তাগিদ নিয়ে।
তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে ফিজিয়োথেরাপিস্টের কথা মেনে প্রতি দিন বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম শুরু করেন মিয়া। সময়ের সঙ্গে আস্তে আস্তে শারীরিক উন্নতিও হতে শুরু করে।
এর পর ধীরে ধীরে মিয়া হাঁটা চলার শক্তি ফিরে পেতে শুরু করেন। তবে চিকিৎসকদের তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, তিনি আর কোনও দিন নাচতে পারবেন না।
মিয়া এর পর চৌকাঠের বাইরে বেরনোরও সাহস দেখান। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে কুকুরকে নিয়েও হাটতে শুরু করেন। কিন্তু একটু হেটেই তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়তেন।
বাস্তবের সঙ্গে পরিচয় হতে আরও দু’এক মাস লাগে। মিয়া বুঝতে পারেন, তিনি কোনও দিনই বেশি দৌড়ঝাঁপ করতে পারবেন না। চাকরি করতে বাইরে গেলেও অনেক অসুবিধায় পড়তে হতে পারে। অনেক ভেবে ঠিক করেন, পেশা হিসাবে মডেলিং শুরু করবেন তিনি।
‘ন্যুড’ মডেল হিসাবেও আত্মপ্রকাশ করেন মিয়া। বাড়তে থাকে তাঁর পরিচিতিও। বিভিন্ন সংস্থার হয়ে মডেলিং করে উপার্জন করতে শুরু করেন মিয়া। আর তা থেকেই উপার্জন লক্ষ লক্ষ টাকা।
বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে ভারতীয় মুদ্রায় মিয়া প্রায় ১২ থেকে ১৬ লক্ষ টাকা আয় করেন।
নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে মিয়া বলেন, ‘‘স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য আমাকে অনেক কঠিন লড়াই করতে হয়েছিল। আমার জীবন আগের মতো না হলেও, নতুন করে জীবন কী করে বাঁচতে হয় তা আমি শিখে গিয়েছি।’’
মডেলিং ছাড়াও মিয়া গান গাইতে, লিখতে এবং বই পড়তে ভালবাসেন। খুব শীঘ্রই তাঁর গাওয়া গানের একটি অ্যালবাম মুক্তি পেতে চলেছে।