‘এ বলে আমায় দেখ, ও বলে আমায়’! এক রাতে বিশ্বব্যাপী বাছাই করা তারকাদের চোখধাঁধানো সাজ দেখে এমনই মনে হয় সকলের। আমন্ত্রিত তারকারা একে অপরকে দেখে মিষ্টি হাসি দিলেও, ভিতরে ভিতরে থাকে এক প্রতিযোগিতা! সাজে কে কাকে টেক্কা দিলেন, সেই হিসাবই চলতে থাকে। এটাই হল মেট গালার বিশেষত্ব।
মে মাসের প্রথম সোমবার সাধারণত মেট গালার আসর বসে। প্রতি বছরের মতো এ বারও সেই আসর বসেছিল ‘মেট্রোপলিটন মিউজ়িয়াম অফ আর্ট’-এ। হলিউড থেকে বলিউড, বিশ্বের প্রথম সারির তারকারা উপস্থিত ছিলেন ৬ মে-র অনুষ্ঠানে।
‘মেট্রোপলিটন মিউজ়িয়াম অফ আর্ট’ সংস্থাটির বার্ষিক তহবিল সংগ্রহ করতেই এই বৃহৎ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বলা হয়, এটাই ‘ফ্যাশনের সবচেয়ে বড় রাত’। প্রতি বছর এই অনুষ্ঠানের একটি নির্দিষ্ট থিম থাকে। আর অতিথিরা সেই থিমকে মাথায় রেখেই নিজেদের সাজিয়ে তোলেন।
তারকারা চাইলেই মেট গালায় অংশ নিতে পারেন না। আমন্ত্রিতরাই আসতে পারেন এই অনুষ্ঠানে। তবে নিজের গাঁটের কড়ি খরচ করে তবেই ‘মেট গালা’র আসরে শামিল হতে পারেন তারকারা!
সিনেমাজগৎ ছাড়াও ক্রীড়া, ফ্যাশন, ব্যবসা, সঙ্গীতজগতের তারকারাও আমন্ত্রণ পান মেট গালায়। এ বছর ৪০০ জন অতিথি সমাগম হয়েছিল ‘মেট্রোপলিটন মিউজ়িয়াম অফ আর্ট’-এ।
এ বারে মেট গালার লাল গালিচা দিয়ে হেঁটেছেন বলি সুন্দরী আলিয়া ভট্ট। বলিপাড়ায় তাঁকে নিয়ে চর্চা এখন তুঙ্গে। নজর কেড়েছে আলিয়ার সাজ। মেট গালার এ বারের থিম ছিল ‘দ্য গার্ডেন অফ টাইম’। সেই থিম মাথায় রেখেই সেজেছিলেন আলিয়া। প্রায় ২৩ ফুট লম্বা শাড়ি আলিয়ার সাজের মূল আকর্ষণ ছিল।
পোশাকশিল্পী সব্যসাচী মুখোপাধ্যায়ের নকশা করা শাড়িই পরেছিলেন আলিয়া। প্যাস্টেল সবুজ রঙের নেটের শাড়িটি পুরোটাই হাতে তৈরি। গোটা শাড়ি জুড়ে সাদা আর গোলাপি ফুলের কারুকার্য। আঁচলেও চোখধাঁধানো এমব্রয়েডারি। সেই আঁচল লুটিয়ে ছিল মেট গালার লাল গালিচায়।
শুধু আলিয়া নন, মুকেশ অম্বানী-কন্যা ইশা। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের ডিরেক্টর ইশার সাজও ছিল চোখধাঁধানো। পোশাকশিল্পী রাহুল মিশ্রর নকশা করা শাড়ি-গাউনেই নিজেকে সাজিয়ে তুলেছিলেন ইশা। সোনালি রঙের গাউনটি যেন এক ফুলের বাগান। সেই বাগানে খেলা করে বেড়াচ্ছিল নানা রঙের প্রজাপতি এবং ড্রাগনফ্লাই।
আলিয়া ভাট থেকে জেনিফার লোপেজ়, কিম কর্দাশিয়ান থেকে ইশা অম্বানীর মতো তারকার ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ই এখন নেটপাড়ার চর্চার বিষয়। একই সঙ্গে চর্চা চলছে আরও একটি বিষয় নিয়ে, তা হল মেট গালার টিকিটের মূল্য।
বিশ্বের নামী ফ্যাশন ইভেন্টের মধ্যে প্রথম সারিতেই উঠে আসে মেট গালার নাম। এখানে ইচ্ছে করলেই যে প্রবেশের অধিকার মেলে, তেমনটা নয়। রীতিমতো পয়সা খরচ করে মেট গালাতে ঢুকতে হয় তারকাদের।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কত টাকা খরচ করতে হয়েছে তারকাদের? টিকিটের দাম শুনলে চমকে উঠতে হয়। বহু ভারতীয়ের বার্ষিক আয়ের থেকেও বেশি একটি টিকিটের দাম। এই পুরো টাকাটাই অনুদান হিসেবে যায় মেট্রোপলিটান মিউজ়িয়াম অফ আর্ট-এর কস্টিউম ইনস্টিটিউটের তহবিলে।
২০২৩ সালে মেট গালার এক একটি টিকিটের দাম ছিল ৫০ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় আনুমানিক ৪১ লক্ষ টাকা। তবে এ বছর টিকিটের মূল্য একলাফে বৃদ্ধি পেয়েছ ২৫ হাজার ডলার।
এ বার মেট গালার এক একটি টিকিটের মূল্য ছিল ৭৫ হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় যা আনুমানিক ৬৩ লক্ষ টাকা। ১৯৯৫ সালে এই অনুষ্ঠানের এক একটি টিকিটের দাম ছিল এক হাজার ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ছিল ৮৩ হাজার টাকা। ২০ বছরের মধ্যে টিকিটের দাম বেড়েছে অনেকটাই।
মেট গালায় শুধু টিকিটের দামই অতিথিদের এক মাত্র খরচ নয়। অতিথিদের বসার জন্য ১০ আসনবিশিষ্ট এক একটি টেবিলও বুক করতে হয়। ‘বিবিসি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক একটি টেবিলের বুক করতে হলে খরচ পড়ে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার। যা ভারতীয় মুদ্রায় যথাক্রমে ৬৩ লক্ষ ও ২ কোটি ৯২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি।
সাধারণত পোশাকশিল্পী বা তাঁর সংস্থা কিংবা গুচি, অ্যামাজ়নের মতো সংস্থা টেবিল বুক করে থাকে। পরে সেই সব সংস্থাই ঠিক করে তাদের বুক করা টেবিলে কারা বসবেন। মূলত, ওই সব সংস্থার ‘ব্র্যান্ড’-এর সঙ্গে যুক্ত তারকাদের জন্যই টেবিল বুক করা হয়।