সাত তলা বাড়ি। ঠিক যেন পাখির বাসার মতো অবিন্যস্ত। এবড়ো-খেবড়ো দেওয়াল। তা থেকে বেরিয়ে রয়েছে, বাঁশ, কাঠের তক্তা, লাঠি। ১০ বছর ধরে তিল তিল করে সেই বাড়ি গড়েছেন এক কৃষক। নিজের ভাইদের জন্য। কিন্তু সেই বাড়িতে কোনও দিনই আসেননি তাঁর ভাইয়েরা। আসবেন কী করে, তাঁরা যে মৃত!
কৃষকের নাম হু গুয়াংঝৌ। তাঁর বয়স ৫৫ বছর। চিনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ১০ বছর ধরে সাত তলা ওই বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি। তাঁর আশা, এক দিন সেখানে সব ভাইয়েরা মিলে থাকবেন।
চিনের সংবাদমাধ্যম থেকেই জানা গিয়েছে, মাটি, পাথর আর কাঠ দিয়ে একা হাতে ওই ইমারত তৈরি করেছেন গুয়াংঝৌ। রোজ রাস্তা থেকে কুড়িয়ে আনতেন সে সব। তার পর তা দিয়ে তৈরি করতেন বাড়ি।
চিনের শানডঙের লিঙ্কু কাউন্টিতে সেই বাড়ি তৈরি করেছেন গুয়াংঝৌ। পাঁচ বছর ধরে বাড়ির ভিত গড়েছেন। বাকি তিন বছর একের পর এক তলা তুলে গিয়েছেন। তার পর সেরেছেন বাড়ির বাকি কাজ।
বাড়ির দোতলা তৈরির পর কঠিন অসুখে পড়েছিলেন গুয়াংঝৌ। মাসের পর মাস কাজ করতে পারেননি। তার পর সুস্থ হয়ে আবারও হাত দিয়েছেন বাড়ির কাজে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, চাষের কাজের পাশাপাশি নিজের ছোট্ট একটা চাকা লাগানো গাড়ি নিয়ে রাস্তায় ঘুরতেন গুয়াংঝৌ। তাতেই সংগ্রহ করে আনতেন, ইট, মাটি, পাথর— তাঁর বাড়ির প্রধান উপকরণ।
কার জন্য বাড়ি তৈরি করেছেন গুয়াংঝৌ? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের ভাইদের জন্য বাড়ি তৈরি করেছিলেন তিনি। যে ভাইয়েরা অন্তত ১০ বছর আগে মারা গিয়েছেন।
বহু দিন আগে শহরে চাকরির খোঁজে গিয়েছিলেন গুয়াংঝৌয়ের দুই ভাই। বলে গিয়েছিলেন, টাকা রোজগার করে ফিরে এসে বাড়ি তৈরি করবেন। সেখানেই থাকবেন তিন ভাই। সংসার পাতবেন।
কিন্তু গুয়াংঝৌয়ের দুই ভাই আর ফিরে আসেননি। দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন তাঁরা। যদিও গুয়াংঝৌ তা মানতে চাননি।
গুয়াংঝৌ দাবি করেন, তাঁর ভাইয়েরা ফিরে আসবেন। তার পর একসঙ্গে বাস করবেন সকলে। সে কারণেই ওই বাড়ি তৈরিতে হাত দেন গরিব কৃষক।
চিনের সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, মানসিক সমস্যা রয়েছে গুয়াংঝৌয়ের। নিজে যা মনে করেন, তা-ই নাকি করেন। কারও কথা শোনেন না।
প্রশাসন গুয়াংঝৌয়ের ওই বাড়ি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। বার বার তাঁকে ভেঙে ফেলতে বলেছে ওই বাড়ি। কারণ বাড়ি তৈরির কোনও অনুমোদন তাঁর নেওয়া ছিল না। যদিও সে বাড়ি ভেঙে ফেলেনি প্রশাসন।
প্রশাসনের কথায় কোনও কানও দেননি গুয়াংঝৌ। যখনই সময় পেয়েছেন, বাড়ি আরও মজবুত করার কাজে নেমে পড়েছেন।
বাড়ি তৈরিতেই দিন কাটে গুয়াংঝৌয়ের। এখন আর চাষবাসও করেন না। সরকারি ভর্তুকিতেই দিন চলে এই কৃষকের। তিন মাস অন্তর ভর্তুকি দেয় চিনের সরকার। তাতেই জোটে খাবার।
বেশ কিছু দিন নিজের তৈরি ওই বাড়িতে ছিলেন গুয়াংঝৌ। কিন্তু ওই বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে ওই গ্রামের প্রশাসন। সে কারণে তাঁর জন্য একটি বাড়ি তৈরি করিয়ে দেয় তারা। এখন সেখানেই থাকেন গুয়াংঝৌ।
লোকমুখে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে গুয়াংঝৌয়ের সেই সাত তলা বাড়ি। প্রায়ই তা দেখতে ভিড় জমান পর্যটকেরা। পোস্ট করেন চিনের সমাজমাধ্যম ওয়েইবোতে।
পর্যটকেরা এসে দেখে হতবাক হন। ভাবেন কী করে মাটি, কাঠ, পাথর দিয়ে এ রকম সাত তলা বাড়ি তৈরি করা যায়! চিনের সমাজমাধ্যমেও এই নিয়ে শোরগোল পড়েছে।