নব্বইয়ের দশক থেকে বলিপাড়ার জনপ্রিয় পরিচালকদের তালিকায় নাম লেখান ধর্মেশ দর্শন। ‘লুটেরে’, ‘রাজা হিন্দুস্তানি’, ‘মেলা’ এবং ‘ধড়কন’-এর মতো বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবি রয়েছে তাঁর কেরিয়ারের ঝুলিতে।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলি অভিনেতা আমির খানের প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন ধর্মেশ। পরিচালক জানান, ‘মেলা’ ছবিতে একটি আপত্তিকর দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য জোর করেছিলেন আমির।
২০০০ সালে ধর্মেশের পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘মেলা’। এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে আমিরের পাশাপাশি অভিনয় করেন বলি অভিনেত্রী টুইঙ্কল খন্না। তা ছাড়া এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় আমিরের ভাই ফয়সল খানকে।
‘মেলা’ ছবিতে ‘ইউরিন থেরাপি’-এর একটি দৃশ্য রয়েছে। আমির এবং ফয়সলের সঙ্গে এই দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় বলিউডের খ্যাতনামী কৌতুকাভিনেতা জনি লিভারকে।
জনির সঙ্গে আমিরের দৃশ্যটি আপত্তিকর মনে হয়েছিল ধর্মেশের। পরিচালক জানান যে তিনি বার বার ছবি থেকে এ দৃশ্য বাদ দিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমির তাঁর কথা শোনেননি।
ধর্মেশ জানান, ‘মেলা’ ছবির শুটিং চলার সময় তিনি নাকি আমিরকে দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন। পরিচালক বলেন, ‘‘আমি বার বার আমিরকে বারণ করেছিলাম। কিন্তু ও আমার কথা শোনেনি। শুটিং করার সময় আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না যে এটা আমির খানের ছবি।’’
‘মেলা’ ছবির শুটিংয়ের সময় কাজে মন ছিল না আমিরের। এমনটাই দাবি করেন ধর্মেশ। তিনি বলেন, ‘‘আমির ওর ভাইয়ের কেরিয়ার গড়ে তুলবে বলে এতটাই ব্যস্ত হয়ে উঠেছিল যে নিজের অভিনয়ের দিকে মনই দিতে পারেনি।’’
ধর্মেশ জানান, ‘মেলা’ ছবিটি করতেই চাইছিলেন না তিনি। আমিরকে বারণ পর্যন্ত করে দেন। কিন্তু আমির ‘মেলা’ ছবিটি পরিচালনা করতে জোর করেন বলে দাবি করেন ধর্মেশ।
‘রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবিতে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আমির। তার পর আমিরের মধ্যে বাণিজ্যিক ছবির প্রতি আগ্রহ কমতে শুরু করে। এমনটাই সাক্ষাৎকারে জানান ধর্মেশ।
ধর্মেশ জানান, ‘মেলা’ ছবির জন্য টুইঙ্কল নন, বরং কাজলকে প্রথম পছন্দ হয়েছিল পরিচালকের। কাজলকে এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাবও দেন তিনি।
ধর্মেশের শত অনুরোধ সত্ত্বেও ‘মেলা’ ছবিতে অভিনয় করতে রাজি হননি কাজল। পরিচালকের দাবি, অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যকারণ ছিলেন আমির।
কাজল নাকি এক ‘টেক’-এ অভিনয় করতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। কিন্তু আমিরের স্বভাব একেবারে বিপরীত। আমির নাকি একটি দৃশ্যের জন্য বার বার নানা ভাবে ‘টেক’ দেন। আমিরের সঙ্গে অভিনয় করতে গেলে কাজল অসুবিধার মুখে পড়তে পারেন বলে ‘মেলা’ ছবিতে অভিনয় করতে চাননি অভিনেত্রী।
ধর্মেশ জানান, কাজল কেন অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তা বুঝিয়ে বলার জন্য পরিচালকের বাড়িতেও যান অভিনেত্রী। পরিচালক এই ঘটনা প্রসঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘কাজল সহৃদয় ব্যক্তি। ও কী নিয়ে সঙ্কোচ বোধ করছিল তা আমার বাড়ি এসে জানিয়ে যায়।’’
‘মেলা’ ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় না করলেও ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ফনা’ ছবিতে আমির এবং কাজলকে একসঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়।
‘মেলা’ ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব কাজল ফিরিয়ে দিলে টুইঙ্কলের কাছে যান ধর্মেশ। পরিচালকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান অভিনেত্রী। তবে বক্স অফিসে ‘মেলা’ ছবিটি কী পরিমাণ ব্যবসা করবে তা নিয়ে সন্দেহ ছিল টুইঙ্কলের।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, টুইঙ্কল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যদি বক্স অফিসে ‘মেলা’ ছবিটি ভাল ব্যবসা না করে তা হলে অক্ষয় কুমারকে বিয়ে করবেন অভিনেত্রী।
মুক্তির পর বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে ‘মেলা’। আমিরের কেরিয়ারের রেখচিত্রও নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। তবে তার পর ‘লগান’ এবং ‘দিল চাহতা হ্যায়’-এর মতো ছবিতে অভিনয় করে ইন্ডাস্ট্রিতে আবার নিজের জায়গা তৈরি করে নেন আমির।
‘মেলা’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় টুইঙ্কলকে। ছবি মুক্তির পর অক্ষয়কে বিয়ে করেন তিনি। তার পর আর বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে।
যে কারণে ‘মেলা’ ছবিটি নিয়ে আমির এত উৎসাহ দেখিয়েছিলেন সেই লক্ষ্যও পূরণ হয়নি অভিনেতার। আমির চেয়েছিলেন ‘মেলা’ ছবিতে অভিনয় করার পর ফয়সলের কেরিয়ার তৈরি হয়ে যাক। কিন্তু তার ফল হল বিপরীত। ‘মেলা’ ব্যর্থ হওয়ার পর বলিপাড়া থেকে হারিয়েই যান আমিরের ভাই।