জীবনানন্দ দাশের কলমে ফুটে উঠেছিল ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’। বনলতা সেন নাম নয় তাঁর। সারা বিশ্বে সবচেয়ে লম্বা চুল রেখে যিনি নজির গড়েছেন, তাঁর নাম স্মিতা শ্রীবাস্তব। নিজেকে বাস্তবের ‘রাপুনজ়েল’ বলে মনে করেন তিনি।
রূপকথা তথা বর্তমানে কার্টুনের জগতে রাপুনজ়েল নামে একটি চরিত্র রয়েছে, যার চুল বিরাট লম্বা। লম্বা চুল থাকার কারণেই নিজের তুলনা সেই চরিত্রের সঙ্গে করেন স্মিতা।
উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা স্মিতা। তাঁর বয়স ৪৬ বছর। কিন্তু চুল লম্বা করার শখ জেগেছিল তাঁর কিশোরী বয়স থেকেই।
আশির দশকে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ছবির অভিনেত্রীদের চুল বেশ লম্বা থাকত। শুধু তা-ই নয়, স্মিতার মা এবং বোনেদের চুলও খুব সুন্দর ছিল। সেখান থেকে চুলের যত্ন নেওয়া এবং তা লম্বা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।
১৪ বছর বয়স থেকে চুল কাটানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন স্মিতা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চুল কাটাননি তিনি।
২০২৩ সালে চুলের দৈর্ঘ্য মাপা হয়েছিল স্মিতার। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড সূত্রে খবর, স্মিতার চুলের দৈর্ঘ্য ৭ ফুট ৯ ইঞ্চি।
এত লম্বা চুলের যত্ন নিতেও সময় লাগে স্মিতার। ‘মিরর’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার চুল ভীষণ ভালবাসি। আমি চাই, এই চুলই আমার পরিচিতির কারণ হয়ে উঠুক। যাতে আমি আরও বেশি নজির গড়ে তুলতে পারি।’’
৭ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা চুল ধুতে মোট ৪৫ মিনিট সময় খরচ হয় স্মিতার। চুল পরিচর্যার জন্য বাজারে পাওয়া কৃত্রিম শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না তিনি।
বাজারজাত পণ্য অপেক্ষা প্রাকৃতিক উপাদানের প্রতি বেশি ভরসা রাখেন স্মিতা। চুলের যত্ন নিতে পেঁয়াজের রস, ডিম এবং অ্যালো ভেরা ব্যবহার করেন তিনি।
প্রতি সপ্তাহে মাত্র দু’বার চুল ধুয়ে থাকেন স্মিতা। স্নান করার পর হাতে তিন ঘণ্টা সময় রাখেন তিনি। চুল শুকোনোর পর তা জট ছাড়িয়ে আঁচড়ানো এবং কেশসজ্জাবিন্যাসের জন্য সময় লাগে তরুণীর।
স্মিতা জানান, চুল শুকোনোর জন্য তিনটি ‘হেয়ার ড্রায়ার’ (চুল শুকোনোর যন্ত্র)-এর প্রয়োজন হয় তাঁর।
চুল শুকিয়ে যাওয়ার পর তার জট ছাড়াতে কমপক্ষে দু’ঘণ্টা সময় লাগে স্মিতার। চিরুনি নয়, হাত দিয়েই চুলের জট ছাড়ান তিনি।
চুল লম্বায় বৃদ্ধি পেলেও এমন একটা সময় স্মিতার জীবনে এসেছিল, যখন চুল পড়তে শুরু করেছিল। স্মিতা জানান, সেই চুলগুলি ফেলে দিতে চাননি তিনি। বরং বুক ফেটে কান্না আসছিল তাঁর।
চুল আঁচড়ানোর পর একটি চুল পড়লেও তা ফেলে দেন না স্মিতা। গত ২০ বছর ধরে নিজের পড়ে যাওয়া চুল সংগ্রহ করছেন তিনি। চুল জমিয়ে রাখার জন্য স্মিতার কাছে একটি বাক্সও রয়েছে।
সমাজমাধ্যমেও নিজের পরিচিতি গড়ে তুলেছেন স্মিতা। ইনস্টাগ্রামে দেড় লক্ষের বেশি অনুগামী রয়েছে তাঁর। সমাজমাধ্যমের পাতায় নানা রকম ছবি এবং ভিডিয়ো পোস্ট করেন স্মিতা।