Chhattisgarh CM Vishnu Deo Sai

আদিবাসী নেতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী! দূরে ঠেলে দেওয়া বিষ্ণুকেই কেন ছত্তীসগঢ়ের মসনদে বসাল পদ্ম?

ছত্তীসগঢ়ে বিজেপির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিষ্ণুকে। তারও আগে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। টিকিট দেওয়া হয়নি লোকসভা ভোটে।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৫:০৩
Share:
০১ ২৪

এক বছর আগে তাঁকে দলের সাংগঠনিক পদ থেকেই সরিয়ে দিয়েছিল বিজেপি। আর আজ সেই বিজেপিরই মুখ্যমন্ত্রী তিনি!

০২ ২৪

রবিবার আদিবাসী নেতা বিষ্ণু দেও সাইকে বিজেপি তাদের সদ্য বিজিত রাজ্য ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করেছে।

Advertisement
০৩ ২৪

গত বছরই ছত্তীসগঢ়ের বিজেপির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল বিষ্ণুকে। তারও আগে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।

০৪ ২৪

চার বার লোকসভা নির্বাচন জেতা সাংসদকে ২০১৯ সালে লোকসভার টিকিটও দেয়নি বিজেপি। সবই মুখ বুজে মেনে নিয়েছিলেন বিষ্ণু।

০৫ ২৪

২০১৪ সালে মোদী সরকার প্রথম বার দেশে ক্ষমতায় আসার পরেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়েছিল ছত্তীসগঢ়ের এই আদিবাসী নেতাকে। একটি নয়, তিন তিনটি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল বিষ্ণুকে।

০৬ ২৪

এর মধ্যে কেবল ইস্পাত প্রতিমন্ত্রী হিসাবে নিজের মেয়াদ সম্পূর্ণ করতে পেরেছিলেন বিষ্ণু। বাকি দু’টি মন্ত্রক তাঁর হাত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় যথাক্রমে দু’বছর এবং ছ’মাসের মাথায়। কিন্তু মন্ত্রিত্ব যাওয়া নিয়েও কোনও প্রতিবাদ করেননি তিনি।

০৭ ২৪

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের টিকিট না পাওয়া আদিবাসী নেতাকে ২০২০ সালে ছত্তীসগঢ় বিজেপির সভাপতি করেছিল পদ্মশিবির।

০৮ ২৪

এর আগেও ২০০৬ এবং ২০১৪ সালে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বিষ্ণুকে। এর মধ্যে প্রথম বার নিজের পদের মেয়াদ সম্পূর্ণ করেছিলেন তিনি। ২০১৪ সালে পারেননি। কারণ, জানুয়ারিতে ওই দায়িত্ব নেওয়ার পরই মে মাসে তিনি দেশের নতুন মোদী সরকারের মন্ত্রী হন। অগস্টে পদ ছাড়তে হয় তাঁকে।

০৯ ২৪

কিন্তু ২০২২ সালে প্রথম তাঁকে এই পদ থেকেও সরানো হল। ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভা নির্বাচনের উত্তেজনা যখন চড়তে শুরু করেছে, তখনও সে ভাবে বিজেপির কোনও পদে ছিলেন না বিষ্ণু।

১০ ২৪

গত জুলাইয়ে বিজেপির তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল, বিষ্ণু শুধুমাত্র বিজেপির জাতীয় এগজিকিউটিভ দলের সদস্য। সেই বিষ্ণুকেই হঠাৎ ছত্তীসগঢ়ে বিজেপি তাদের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিল কেন?

১১ ২৪

ছত্তীসগঢ়ের বিজেপি নেতৃত্বই জানাচ্ছেন, আদিবাসী নেতা বিষ্ণুর জনসমর্থন ছত্তীসগঢ়ের বহু পদ্ম নেতার থেকে অনেক বেশি। শুধু তা-ই নয়, তিনি অভিজ্ঞতাতেও অনেকের থেকে বেশি প্রবীণ। মাটির কাছাকাছি থেকে রাজনীতি করেছেন বরাবর। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের শুরুও মাটির কাছ থেকেই।

১২ ২৪

১৯৮৯ সালে রাজনৈতিক সফর শুরু বিষ্ণুর। সে বছরই প্রথম গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটে লড়েন তিনি। বিরোধীশূন্য হিসাবে গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন।

১৩ ২৪

তখনও অবশ্য মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তীসগঢ় হয়নি। বিজেপির বহু বড় নেতাকে সেই সময় পাশে পেয়েছিলেন বিষ্ণু। নেতৃত্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক, জনসমর্থন এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা— এই সব ক’টি বিষয়ই বিষ্ণুর দ্রুত উত্তরণের মূল কারণ।

১৪ ২৪

যে বছর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান হিসাবে নির্বাচিত হন, সে বছরই বিধানসভা নির্বাচনেরও টিকিট পান বিষ্ণু। বিপুল ভোটে জিতে অবিভক্ত মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায় প্রবেশ করেন। তার পর থেকে টানা দু’বার বিধায়ক থেকেছেন তিনি। ১৯৯৯ সালে তাঁকে লোকসভার টিকিট দেয় বিজেপি।

১৫ ২৪

তার পর থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত চার বার রায়পুর কেন্দ্র থেকে জিতেছেন। মোদী সরকার প্রথম বার দেশে ক্ষমতায় আসার পর একই সঙ্গে ইস্পাত, খনি এবং শ্রমিক এবং নিয়োগ সংক্রান্ত মন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। যদিও ২০১৯ সালের পর থেকে সব বদলাতে শুরু করে।

১৬ ২৪

অধুনা ছত্তীসগঢ়ের জশপুর জেলায় বাগিয়া গ্রামে ১৯৬৪ সালে জন্ম বিষ্ণুর। তাঁর বয়স এখন ৫৯।

১৭ ২৪

তাঁর পরিবার অনেক আগে তেল পেশাই বা তেল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। যদিও বিষ্ণুর পরিবারের বর্তমান পেশা কৃষি। তবে তাঁর পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাসও রয়েছে। পরিবারের তিন সদস্য ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে হয় বিধানসভা বা লোকসভা ভোটে জিতেছেন।

১৮ ২৪

বিষ্ণুর অবশ্য রাজনীতিতে আসা নিয়ে শুরু থেকে আগ্রহ ছিল না। তিনি গ্রামেরই স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়ার আগে পারিবারিক পেশার কাজেই যুক্ত ছিলেন। পাশাপাশি চলত তাঁর সমাজসেবার কাজও।

১৯ ২৪

প্রকাশ্যে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে তাঁকে আজ অবধি দেখেননি তাঁর অনুগামীরা। তা সত্ত্বেও তাঁকে মানার লোকের অভাব নেই। রাজনৈতিক নেতারা বলেন, রাজনীতিতে বিষ্ণুর নাকি কোনও শত্রু নেই। এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে বিরল।

২০ ২৪

সম্ভবত সেই সমর্থনের কারণেই এ বারের বিধানসভা নির্বাচনে প্রচারে এসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জনতাকে বলেছিলেন, ‘‘আপনারা শুধু বিষ্ণু দেওকে বিধায়ক বানিয়ে দেখান। এর পর ওঁকে বড় মানুষ বানানোর কাজ আমি করব।’’

২১ ২৪

সেটা দু’মাস আগের কথা। অমিতের সেই প্রতিশ্রুতির পর বিধানসভা নির্বাচন হয় ছত্তীসগঢ়ে। ৯০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৫৪টি পেয়ে জয়ী হয় বিজেপি। তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উত্তর ছত্তীসগড়ের আদিবাসী এলাকার ১৪টি আসনের ফলাফল। ১৪টির মধ্যে ১৪টি আসনই জিতে নেয় বিজেপি। যার নেপথ্যে বিষ্ণু ম্যাজিক কাজ করেছে বলে মনে করেছে ছত্তীসগঢ় বিজেপির বহু নেতাই।

২২ ২৪

এ প্রসঙ্গে মধ্যপ্রদেশের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করা প্রয়োজন। আদিবাসী এক যুবকের মুখে প্রস্রাব করার অভিযোগ উঠেছিল মধ্যপ্রদেশের এক বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে। সেই আবহেও একদা মধ্যপ্রদেশের অঙ্গ ছত্তীসগঢ়ে এ ভাবে বিপুল আদিবাসী সমর্থন পায় বিজেপি।

২৩ ২৪

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ছত্তীসগঢ়ে বিষ্ণুকে বড় মানুষ বানানোর প্রতিশ্রুতিই কাজে এসেছে বিজেপির। আর তাঁরাও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ছাড়েননি।

২৪ ২৪

প্রতিশ্রুতি মেনেই বিষ্ণুকে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত করে বিজেপি নেতৃত্ব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা অবশ্য এর অন্য ব্যাখ্যাও করছেন। তাঁরা বলছেন, বিষ্ণুকে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে বেছে নিয়ে আসলে বিজেপি তাদের আদিবাসীপন্থী ভাবমূর্তিকে আরও উজ্জ্বল করল। কারণ লোকসভা ভোটের আগে সেই অবস্থান তাদের অনেক উপকারে লাগবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement