সত্তর থেকে আশির দশকের মধ্যে অভিনয়জগতে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন অভিনেতা। দক্ষিণী অভিনেতা রজনীকান্তের চেয়েও বেশি খ্যাতি পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ফিল্মজগতে তাঁর কেরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
১৯৩৯ সালের ২৫ জুলাই কেরলের কোল্লামে জন্ম কৃষ্ণণ নায়ারের। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। দশম শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করে ভারতীয় নৌবাহিনীতে যুক্ত হন তিনি।
১৯৬১ সালে ভারত থেকে ব্রিটেনের উদ্দেশে আইএনএস বিক্রান্ত নামের যুদ্ধজাহাজ পাড়ি দিয়েছিল। সেই জাহাজে ছিলেন কৃষ্ণণও। নৌবাহিনীর ফুটবলের দলের সদস্যও ছিলেন তিনি।
নৌবাহিনীতে থাকাকালীন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অভিনয় করতেন কৃষ্ণণ। নৌবাহিনীর সহকর্মীরা তাঁকে অভিনয় নিয়ে কেরিয়ার গড়ার পরামর্শ দেন। ১৬ বছর নৌবাহিনীতে থাকার পর চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন তিনি।
ব্যবসা করাকালীন কৃষ্ণণের আলাপ হয় সেই সময়কার মালয়ালম অভিনেতা জোস প্রকাশের পুত্র রজন প্রকাশের সঙ্গে। রজন তাঁকে ‘শাপমোক্ষম’ নামে একটি মালয়ালম ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। তার পরেই পরিচয় বদল হয়ে যায় কৃষ্ণণের।
১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘শাপমোক্ষম’ ছবির সেটে কৃষ্ণণের নাম পরিবর্তন করে জয়ন রাখেন অভিনেতা জোস। তার আগে একাধিক মালয়ালম ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করলেও তা নজরে পড়ার মতো ছিল না।
১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পঞ্চমী’ ছবিতে খলনায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন জয়ন। একের পর এক মালয়ালম ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
প্রতি বছর কম করে ২৫টি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যেত জয়নকে। ছ’বছরের কেরিয়ারে ১৫০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
মালয়ালম ফিল্মজগতের প্রথম অ্যাকশন হিরো হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন জয়ন। কিন্তু এই সাফল্যের স্বাদ বেশি দিন উপভোগ করতে পারেননি তিনি।
১৯৮০ সালের ১৬ নভেম্বরের ঘটনা। সে সময়ে ‘কোলিয়াক্কম’ ছবির শুটিং নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন জয়ন। মোটরবাইক থেকে লাফ দিয়ে হেলিকপ্টারের উপর নামতে হবে— এই দৃশ্যের শুটিং করছিলেন জয়ন।
প্রথম টেক পরিচালকের পছন্দ হলেও জয়ন দ্বিতীয় বার টেক দিতে চেয়েছিলেন। অভিনেতার ইচ্ছানুযায়ী দ্বিতীয় বার একই দৃশ্যের শুট করা হয়। তখনই ঘটে বিপদ।
শুটিংয়ের সময় হেলিকপ্টার ভেঙে পড়ে সেটের মধ্যে। দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় জয়নের। মাত্র ৪১ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
জয়নের মৃত্যুর পর তাঁর ভাই সোমন নায়ার অভিনয় শুরু করেন। অজয়ন নাম নিয়ে ২০টির বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু জয়নের মতো সাফল্য পাননি অজয়ন।
জয়নের মৃত্যুর পর অ্যাকশন হিরোর অবয়বে একটি কার্টুন চরিত্র তৈরি করা হয়। তাঁর মুখে জয়নের ছবির সংলাপ বসানো হয়েছে।
জয়নের স্মৃতিতে ২০০৯ সালে তাঁর বাড়ির সামনে আট ফুট উঁচু মূর্তি তৈরি করা হয়। ২০২২ সালে তিরুঅনন্তপুরমে ওয়াক্স মিউজিয়ামেও অভিনেতার মূর্তি তৈরি করা হয়েছে।