খ্যাতি, সাফল্য কখনও তুড়ি মারলেই হাজির হয় না। তার জন্য প্রয়োজন কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়। বর্তমানে হিন্দি ধারাবাহিক জগতে সর্বোচ্চ উপার্জনকারী অভিনেত্রীদের তালিকায় নাম রয়েছে দিব্যাঙ্কা ত্রিপাঠি দাহিয়ার। কিন্তু তাঁর জীবনে এমন সময়ও গিয়েছে যখন অর্থ উপার্জনের জন্য বাতিল জিনিসপত্র বিক্রি করেছেন তিনি।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দিব্যাঙ্কা জানান, অর্থ উপার্জনের জন্য তিনি ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করতেও রাজি ছিলেন। কী ভাবে প্রতি মাসের খাবার জুটবে সেই চিন্তাই থাকত বলে দাবি করেছেন অভিনেত্রী।
সাক্ষাৎকারে দিব্যাঙ্কা বলেন, ‘‘ইএমআই এবং বিল মেটানোর চিন্তা ছিল আমার মাথায়। এমন সময়ও গিয়েছে যখন আমি টুথপেস্টের ফাঁকা বাক্সও তুলে রেখেছি। কখনও যদি এ সব বাতিল জিনিস বিক্রি করে এক টাকাও জমানো যায় তাতেও আমার লাভ। সত্যি কথা বলতে, আমার সঞ্চয়ই কঠিন সময় আমায় উদ্ধার করেছিল।’’
দিব্যাঙ্কা জানান, প্রতি মাসে তিনি একটি করে সোনার মুদ্রা কিনে বিনিয়োগ করে রাখতেন। সময় হলে সেই মুদ্রাগুলি বিক্রি করে অর্থ জমিয়ে রাখতেন।
১৯৮৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ভোপালে জন্ম দিব্যাঙ্কার। ভোপালে বাবা-মা, দিদি এবং ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। দিব্যাঙ্কার বাবা পেশায় ফার্মাসিস্ট ছিলেন। ভোপালেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন দিব্যাঙ্কা।
দিব্যাঙ্কার বাবা চাইতেন তাঁর কন্যা যেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুক্ত হন। শৈশবে রাইফেল শুটিংয়ের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন দিব্যাঙ্কা। সোনার পদকও জিতেছিলেন। কিন্তু তার পরেই অভিনয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি।
ভোপালে থাকাকালীন বহু নাটক এবং টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন দিব্যাঙ্কা। স্কুলে পড়াকালীন একটি রেডিয়ো চ্যানেলে সঞ্চালিকার ভূমিকায় কাজ করেছিলেন তিনি। পারিশ্রমিক হিসাবে ৮০০ টাকা পেয়েছিলেন।
অ্যাডভেঞ্চারের প্রতি কিশোরী বয়স থেকেই আকর্ষণবোধ করতেন দিব্যাঙ্কা। উত্তরাখণ্ড থেকে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন তিনি।
অডিশন দিতে ভোপাল থেকে বাসে চেপে মুম্বই যেতেন দিব্যাঙ্কা। তাঁকে সাহস জোগাতে দিব্যাঙ্কার সঙ্গী হতেন তাঁর বাবা। কেরিয়ারের শুরুর দিকে দূরদর্শনের কয়েকটি ধারাবাহিকে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেন দিব্যাঙ্কা।
২০০৬ সালে ‘বনু ম্যায় তেরি দুলহন’ নামের হিন্দি ধারাবাহিকের মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন দিব্যাঙ্কা। এই ধারাবাহিকে শরদ মলহোত্রের বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় দিব্যাঙ্কাকে। এই হিন্দি ধারাবাহিকে দ্বৈতচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায়, আইএএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দিব্যাঙ্কা। ‘বনু ম্যায় তেরি দুলহন’ ধারাবাহিকের শুটিং শুরুর সময় প্রস্তুতি মাঝপথে ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে। বাবা-মায়ের আপত্তি সত্ত্বেও তাঁদের রাজি করান দিব্যাঙ্কা।
কেরিয়ারের প্রথম ধারাবাহিকের সহ-অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দিব্যাঙ্কা। শরদ মলহোত্রের সঙ্গে ন’বছর সম্পর্কে ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে সম্পর্কে ইতি টানেন দুই তারকা।
কানাঘুষো শোনা যায়, দিব্যাঙ্কা নিরামিষাশী ছিলেন। কিন্তু শরদ আমিষ খাবার খেতে পছন্দ করতেন বলে মাছ-মাংস রান্না করা শিখেছিলেন অভিনেত্রী।
২০১৩ সালে সম্প্রচারিত ‘ইয়ে হ্যায় মহব্বতে’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের পর টেলিভিশন জগতে উপার্জনের ভিত্তিতে প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেন দিব্যাঙ্কা। একাধিক হিন্দি ধারাবাহিকে অতিথিশিল্পী হিসাবেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
শরদের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর টেলি অভিনেতা বিবেক দাহিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তাঁদের সম্পর্ক পূর্ণতা পায় ২০১৬ সালে। সাত পাকে বাঁধা পড়েন দুই টেলি তারকা।
২০১৭ সালে স্বামীর সঙ্গে নাচের এক প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখা যায় দিব্যাঙ্কাকে। সেই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীও হয়েছিলেন তাঁরা।
২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লালা হরদৌল’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় পা ফেলেন দিব্যাঙ্কা। ‘কোল্ড লস্যি অউর চিকেন মশালা’ এবং ‘দ্য ম্যাজিক অফ শিরি’ নামের ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
টেলিপাড়া সূত্রে খবর, কোনও হিন্দি ধারাবাহিকে অভিনয় করলে পর্ব প্রতি এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা উপার্জন করেন দিব্যাঙ্কা।
সমাজমাধ্যমেও দিব্যাঙ্কার অনুরাগী মহল চোখে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে দু’কোটি ৬৩ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে অভিনেত্রীর অনুরাগীর সংখ্যা।