সমাজমাধ্যমে লক্ষ লক্ষ অনুরাগী। ইউটিউব, ফেসবুকের পাতা থেকে বড় পর্দা এবং ওটিটি প্ল্যাটফর্ম— সব ক্ষেত্রেই নিজের পেশার বিস্তার ঘটিয়েছেন কুশা কপিলা। কখনও তিনি বিচ্ছেদের ঘোষণা করার পর তীব্র কটাক্ষের শিকার হয়েছেন, তো কখনও বা বলি অভিনেতার সঙ্গে নাম জড়িয়ে সমালোচনার জালে আটকে পড়েন।
সমাজমাধ্যমের একটি চ্যানেলে দক্ষিণ দিল্লির উচ্চবিত্ত মহিলার চরিত্রে অভিনয় করে নেটব্যবহারকারীদের মন জিতে নেন কুশা। কিন্তু ছোটবেলা থেকে তাঁর আগ্রহ ছিল ফ্যাশন ডিজ়াইনিংয়ের প্রতি।
ফ্যাশন নিয়ে কেরিয়ারও গড়ে তোলেন কুশা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কুশা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন সমাজমাধ্যমের প্রথম সারির প্রভাবী হিসাবে।
দক্ষিণ দিল্লির নাকউঁচু মহিলার হাবভাব নকল করে বিল্লি মাসির চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে নেটব্যবহারকারীদের মন জয় করেন কুশা। তিনিও আদতে নয়াদিল্লির বাসিন্দা।
১৯৮৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লির একটি পঞ্জাবি পরিবারে জন্ম কুশার। দক্ষিণ দিল্লির স্কুলে পড়াশোনা শেষ করে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে নয়াদিল্লির একটি কলেজে ভর্তি হন তিনি।
কলেজে পড়াকালীন থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন কুশা। মাঝেমধ্যে রাস্তায় নেমে নাটক (স্ট্রিট প্লে) করতেন তিনি।
ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে স্নাতক স্তরের ডিগ্রি অর্জনের পর ফ্যাশন ডিজ়াইনিং নিয়ে পড়েন কুশা। কলেজের গণ্ডি পার করার পর ইন্টার্ন হিসাবে বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করেন তিনি।
দিল্লি এবং নয়ডার বিভিন্ন সংস্থায় ইন্টার্ন হিসাবে কাজ করার পর লেখালিখির কাজে ঝুঁকে পড়েন কুশা। বিজ্ঞাপন এবং ডিজিটাল মাধ্যমে লেখালিখি করে নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন তিনি।
২০১৬ সালে দিল্লির এক নামী সংস্থায় ‘ফ্যাশন এডিটর’ পদে নিযুক্ত হন কুশা। কিন্তু বেশি দিন সেই সংস্থায় কাজ করেননি তিনি। আবার লেখালিখির কাজে ফিরে যান কুশা।
কুশা এই সময় একটি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন যা তাঁর কেরিয়ারে নতুন মোড় এনে দেয়। মজাদার ভিডিয়োর ‘কন্টেন্ট’ লিখতে শুরু করেন কুশা। লেখালিখির পাশাপাশি সেই ভিডিয়োগুলিতে অভিনয় করতেও শুরু করেন তিনি। সেখান থেকেই কুশা সৃষ্টি করেন বিল্লি মাসির চরিত্র।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে কুশা জানান, বাস্তব থেকেই বিল্লি মাসির চরিত্র গঠনের চিন্তা এসেছিল তাঁর। কুশার এক বন্ধুর আত্মীয়ের খামারবাড়িতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন কুশা। সেই অনুষ্ঠানে দক্ষিণ দিল্লির এক মহিলার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর। তার পরেই বিল্লি মাসির মতো এক মজাদার চরিত্র তৈরির কথা মাথায় আসে তাঁর।
২০১৭ সালে জ়োরাবর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন কুশা। এক বহুজাতিক সংস্থার কর্মী ছিলেন জ়োরাবর।
কানাঘুষো শোনা যায়, এক বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানে জ়োরাবরের সঙ্গে দেখা হয়েছিল কুশার। সেই সময় অন্য সম্পর্কে ছিলেন কুশা। তবে প্রথম দেখাতেই জ়োরাবরকে ভাল লাগে তাঁর। তার পর বহু বার সাক্ষাৎ হয়েছে তাঁদের। এই ভাবেই কুশা এবং জ়োরাবরের সম্পর্কের শুরু। বেশ কয়েক বছর সম্পর্কে থাকার পর ২০১৭ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তাঁরা।
স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান অ্যাবিশ ম্যাথু সঞ্চালিত টক শোয়ে দেখা যায় কুশাকে। এমনকি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন কমেডি রিয়্যালিটি শোতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।
২০২০ সালে নেটফ্লিক্সের ‘ঘোস্ট স্টোরিজ়’-এ প্রথম অভিনয় করেন কুশা। কর্ণ জোহর পরিচালিত ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় কুশাকে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে কর্ণের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ নিয়ে কুশা তাঁর অভিজ্ঞতা ভাগ করেন। কুশা জানান, এক ফ্যাশন শোয়ে কর্ণের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তাঁর। কুশাকে দেখে হাত নাড়ান কর্ণ। এমনকি কর্ণ যে কুশার কাজের ভক্ত তা-ও জানান। কর্ণের মুখে নিজের প্রশংসা শুনে অবাক হয়ে যান কুশা। সেই মুহূর্তে কুশা তাঁর জনপ্রিয়তা ঠাহর করতে পারেন।
বলিপাড়ার বহু নামকরা তারকা কুশার অভিনয়ের গুণমুগ্ধ। ‘ঘোস্ট স্টোরিজ়’ ছাড়াও ‘প্ল্যান এ প্ল্যান বি’, ‘সেল্ফি’র মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন কুশা।
বড় পর্দার পাশাপাশি ওয়েব সিরিজ়েও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে কুশাকে। ‘মাসাবা মাসাবা’, ‘কেস তো বানতা হ্যায়’, ‘মাইনাস ওয়ান: নিউ চ্যাপ্টার’ ওয়েব সিরিজ়ে পার্শ্বচরিত্রে দেখা গিয়েছে তাঁকে।
তবে ব্যক্তিগত জীবনে নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য নেটব্যবহারকারীদের কাছে তীব্র কটাক্ষের শিকার হন কুশা। ছ’বছরের দাম্পত্যের পর বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন কুশা এবং জ়োরাবর। সমাজমাধ্যমে যৌথ বিবৃতিতে বিচ্ছেদের ঘোষণাও করেন দু’জনে। কিন্তু তা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কুশাকে।
সমাজমাধ্যমে বিচ্ছেদের ঘোষণা করার পর সেই পোস্টের মন্তব্যের জায়গায় তালা লাগিয়ে দেন কুশা। বিচ্ছেদের পর কুশা জানান, তিনি সমাজমাধ্যম থেকে অনেক মন্তব্য মুছে দিয়েছেন। অনেককে ব্লকও করে দিয়েছেন কুশা।
শুধু বিচ্ছেদ নিয়েই নয়, সম্প্রতি এক বলি অভিনেতার সঙ্গে নাম জড়ানোর পর কটাক্ষের শিকার হন কুশা। বলিপাড়ায় গুঞ্জন শোনা যায়, অর্জুন কপূর এবং মালাইকা অরোরার সম্পর্কে নাকি চিড় ধরেছে এবং তার নেপথ্যে রয়েছেন সমাজমাধ্যম প্রভাবী তথা কৌতুকাভিনেত্রী কুশা।
কানাঘুষো শোনা যায়, কুশার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার জেরেই নাকি সম্পর্কে ভাঙন ধরেছে অর্জুন-মালাইকার। কর্ণের পার্টি থেকেই নাকি বন্ধুত্ব গভীর হয় কুশা-অর্জুনের। তার জেরেই নাকি মালাইকার সঙ্গে বিচ্ছেদ।
তবে কুশা এবং অর্জুনের সম্পর্কের কথা শুনে অর্জুন-মালাইকা হাসাহাসি করছেন বলে অন্দরের খবর। এ ধরনের আলোচনা না কি তাঁদের দু’জনের কাছেই খুব হাস্যকর বলে মনে হয়েছে। তাই এখন আর এই বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্যই করতে চান না তাঁরা। তবে কানাঘুষো শোনা যাচ্ছে, কুশাকে নাকি সমাজমাধ্যমে ‘আনফলো’ করে দিয়েছেন মালাইকা।