গান হোক বা নাচ, অভিনয়— সর্বক্ষেত্রে পারদর্শী। তবুও তিনি বিতর্কে। কখনও বলি ইন্ডাস্ট্রির গায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন, কখনও বা পোশাক নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন নেহা ভাসিন।
১৯৮২ সালের ১৮ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে জন্ম নেহার। স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা দিল্লিতেই শেষ করেন তিনি। শৈশব থেকেই গানবাজনার প্রতি ঝোঁক ছিল তাঁর। সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কারও জিতেছেন প্রচুর।
ন’বছর বয়সে নেহার ইচ্ছা হয় পপস্টার হওয়ার। কিন্তু পপশিল্পী হতে গেলে নাচ জানাও আবশ্যিক বলে মনে করেন নেহা। তাই গানের পাশাপাশি নাচেরও প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি।
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ নেন নেহা। একটি রিয়্যালিটি শোয়ে অংশগ্রহণ করবেন বলে মেয়েদের নিয়ে একটি গানের ব্যান্ড খোলেন নেহা। এই ব্যান্ডের প্রথম কনসার্টে ৫০ হাজার শ্রোতা জমায়েত হয়েছিল। কোনও ব্যান্ডের প্রথম কনসার্টে এত জন শ্রোতা এসেছিলেন বলে নজির গড়েছিল নেহার ব্যান্ড।
খুব কম সময়ের মধ্যেই প্রচারে চলে আসে নেহার ব্যান্ড। লোকের মুখে মুখে সেই ব্যান্ডের কথা ঘোরাফেরা করতে থাকে। কিন্তু কয়েক বছর পরেই ব্যান্ডের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ২০০৪ সালে ভেঙে যায় গানের ব্যান্ড।
ব্যান্ড ভেঙে যাওয়ার পর হিন্দি গানের ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের কেরিয়ার শুরু করেন নেহা। ২০০৭ সালে ‘ফ্যাশন’ ছবিতে গান করে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নেন তিনি।
প্রথম গান গাওয়ার পরেই নামডাক হয়ে যায় নেহার। তার পর ‘মেরে ব্রাদার কি দুলহন’, ‘সুলতান’, ‘গুন্ডে’, ‘নীরজা’, ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-এর মতো একের পর এক হিন্দি ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি।
হিন্দির পাশাপাশি তামিল, তেলুগু, পঞ্জাবি ভাষায় গান গাইতেও দেখা গিয়েছে নেহাকে। সম্প্রতি ‘কিসি কা ভাই কিসি কি জান’ ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে যখন ‘মিটু’ বিতর্ক নিয়ে চারদিকে সরব হয়ে উঠেছে, সেই সময় বলিউড মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রির এক জনপ্রিয় গায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন নেহা।
হিন্দি মিউজ়িক ইন্ডাস্ট্রির গায়িকা সোনা মহাপাত্র ‘মিটু’ বিতর্কের সময় যখন অনু মালিককে নিয়ে আওয়াজ তোলেন, সেই সময় অনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছিলেন নেহাও।
টুইটারে পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘‘আমরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বাস করি। অনু মালিক এক জন শিকারি। উনি আমার সামনে সোফায় বসেছিলেন। আমার বয়স তখন ২১ বছর হবে। স্টুডিয়োয় সোফায় বসে আমার চোখ নিয়ে হঠাৎ বিশেষ মন্তব্য করতে শুরু করেন! আমি কোনও ভাবে ওই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ফিরেছি।’’
সম্প্রতি পোশাক নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন নেহা। গায়িকার পেশায় থাকা সত্ত্বেও তিনি খোলামেলা পোশাক পরে কী ভাবে ঘুরতে পারেন তা নিয়ে নেহাকে কটাক্ষ করেন নেটব্যবহারকারীরা। এমনকি, পোশাকের কারণে তাঁকে পর্নতারকার সঙ্গেও তুলনা করা হয়েছে।
কিন্তু নেহা চুপ করে থাকার পাত্রী নন। এক সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাঁকে পর্ন তারকাদের সঙ্গে তুলনা করলেও তাঁর কিছু যায় আসে না। পর্নতারকাদের তিনি সম্মান করেন বলেও জানান তিনি।
নেহা বলেন, ‘‘পর্নতারকারা কোনও কিছুই লুকিয়ে করেন না। তাঁরা যেমন, সকলের সামনেও ঠিক তেমনটাই থাকেন। বরং বন্ধ দরজার পিছনে তাঁদের দেখে যাঁরা খারাপ মন্তব্য করেন, তাঁরাই দু’মুখো। আমি নিজের জীবন নিজের মতো বাঁচতে ভালবাসি। কেউ আমায় পর্নতারকা বললেই আমি তা হয়ে যাব না। আমি নেহা ভাসিনই থাকব।’’
গানের পাশাপাশি একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ও করেছেন নেহা। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘লাইফ কি তো লগ গয়ি’ ছবিতে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। নেহার সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করেছেন কেকে মেনন, রণবীর শোরের মতো তারকারা।
বিভিন্ন গানের প্রতিযোগিতায় সঞ্চালকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে নেহাকে। বিগ বসের ১৫তম সিজ়নেও প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি।
নেটমাধ্যমেও নেহার অনুরাগীমহল চোখে পড়ার মতো। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা সাড়ে আট লক্ষের গণ্ডি পেরিয়ে গিয়েছে।