জুলফি কামানো সাদা পোশাকের ডিস্কো ডান্সার নয়, এই মুহূর্তে তাঁর সঙ্গে ‘তাহাদের কথা’-র রাগী দেশপ্রেমিক শিবনাথের মিলই যেন বেশি। অথচ পোড়খাওয়া বলিউডপ্রেমী প্রজন্ম জানে, এই মিঠুন চক্রবর্তী এক সময়ে হৃদ্স্পন্দন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন উপমহাদেশের বহু তরুণীর।
১৯৭৯ সালে মিঠুন বিয়ে করেন অভিনেত্রী যোগীতা বালিকে। কিন্তু তার আগে আরও এক বার বিবাহবন্ধনে বাঁধা পড়েছিলেন আজকের ‘মহাগুরু’।
যে বছর মিঠুন ও যোগীতা গাঁটছড়া বাঁধেন, সেই বছরই অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন ‘মৃগয়া’র নায়ক। সেই কন্যের নাম হেলেনা লিউক। মাত্র চার মাস টিকেছিল হেলেনা-মিঠুনের দাম্পত্য।
কে এই হেলেনা লিউক? উত্তর খুঁজতে বসলে জানা যাবে, ১৯৭০ দশকের শেষ দিকে বলিউডে নিজের জায়গা করে নিতে চাইছিলেন এই মডেল-অভিনেত্রী।
১৯৮০ সালের ছবি ‘জুদাই’-য়ে এক পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেন হেলেনা। জিতেন্দ্র-রেখা অভিনীত এই হিট ছবিতে তাঁর উপস্থিতি তেমন নজর কাড়েনি। হেলেনার বাবা ছিলেন তুরস্কের মানুষ আর মা অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান খ্রিস্টান। পরে ‘সাথ সাথ’ (১৯৮২) ছবিতেও একটি ছোট চরিত্রে তাঁকে দেখা গিয়েছিল।
এ ছাড়া কাছাকাছি সময়ে ‘আও পেয়ার করেঁ’ (১৯৮৩), ‘দো গুলাব’ (১৯৮৩) এবং ‘ভাই আখির ভাই হোতা হ্যায়’ (১৯৮২) নামে ৩টি ছবিতে হেলেনা অভিনয় করেছিলেন। কিন্তু সে সব ছবি বক্স অফিসে তেমন দাগ কাটতে পারেনি।
তবে ফিল্মে অভিনয়ের আগে হেলেনা ৯ বছর গুজরাতি নাটকে অভিনয় করেছিলেন। গুজরাতি ছবিতে ভাল রোল পাননি বলেই নাকি বলিউডে ভাগ্যান্বেষণে আসেন তিনি। জানা যায়, তিনি গুজরাতি ভাষা লিখতে, পড়তে এবং বলতেও শিখেছিলেন।
সেই সময়কার বলিউডি গুঞ্জন থেকে জানা যায়, অভিনেতা-মডেল জাভেদ খানের সঙ্গে কলেজজীবন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল হেলেনার। ৪ বছর প্রেমপর্ব চলার পরে হঠাৎই বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। এই বিচ্ছেদের মুহূর্তেই নাকি মিঠুনের প্রবেশ এবং হেলেনার সঙ্গে বিয়ে।
কিন্তু কেন এত অল্প সময় টিকেছিল হেলেনা-মিঠুনের দাম্পত্য? জাভেদ খানের সঙ্গে বিচ্ছেদের কারণেই নাকি মিঠুনের দিকে ঢলেছিলেন হেলেনা।
হেলেনার সঙ্গে বিয়ের আগে মিঠুনের জমাটি প্রেম চলছিল অভিনেত্রী সারিকার সঙ্গে। কিন্তু সেই প্রেমে ধাক্কা খেয়ে নাকি শূন্যতাবোধে ভুগতে থাকেন মিঠুন। সেই সময়েই হেলেনার সঙ্গে তাঁর পরিচয়, প্রেম এবং পরিণয়। শোনা যায়, মিঠুনের পারিবারিক সমস্যা নাকি ছায়া ফেলেছিল তাঁদের দাম্পত্যে।
ইতিমধ্যে হেলেনার জীবনে আবার ফিরে আসেন জাভেদ খান। হেলেনাও জাভেদের প্রতি নরম হয়ে পড়েন। ফলে মিঠুন-হেলেনার দাম্পত্যে ছেদ আসে।
তবে জাভেদ খানের সঙ্গে হেলেনার প্রেমও পরিণতি পায়নি। ১৯৮৭ সালে বলিউডের এক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় সেই সময়কার উদীয়মান অভিনেতা বিজয়েন্দ্র ঘটগের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা।
এক পার্টিতে নাকি বিজয়েন্দ্র নেশাগ্রস্ত অবস্থায় হেলেনাকে আক্রমণ করে বসেন। আবার বিজয়েন্দ্র জানান, সেই পার্টিতে হেলেনাই নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিলেন।
বলিউডে হেলেনাকে সম্ভবত শেষ দেখা গিয়েছিল ১৯৮৮ সালের ‘এক নয়া রিস্তা’ ছবিতে। বিনোদ পান্ডে পরিচালিত এবং রেখা-রাজ কিরণ অভিনীত সেই ছবিতেও হেলেনা নজর কাড়তে পারেননি।
বলিউডে কেরিয়ার জমাতে না পেরে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও থিতু হতে না পেরে হেলেনা আমেরিকা চলে যান।
নিউ ইয়র্কে বসবাস শুরু করেন হেলেনা। এক বিমান সংস্থায় ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্ট হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন তিনি। সেই চাকরিই তিনি করে যান। গ্ল্যামারের দুনিয়ায় আর তাঁকে দেখা যায়নি।
হেলেনার কাহিনি বলিউডের অনেক ব্যর্থ অভিনেত্রীর সঙ্গেই মেলে। একাধিক অভিনেতার সঙ্গে সম্পর্ক, বিচ্ছেদ, টানাপড়েন মায়ানগরীর অভিনেত্রীদের কাছে নতুন কিছু নয়।
হেলেনাও তার ব্যতিক্রম নন। আজ হেলেনা কেমন আছেন, তা বিস্তারিত জানা যায় না। কারণ বলিউডের স্পটলাইটে তিনি খুব বেশি দিন ছিলেন না।
হেলেনা সম্পর্কে মানুষের যতটুকু কৌতূহল জেগে আছে, তা কেবল মিঠুন চক্রবর্তী নামক এক সফল অভিনেতার নামের সঙ্গে তাঁর যোগের কারণেই।