শুধু হিন্দি ভাষার ছবিতেই নয়, তেলুগু, তামিল, মালয়ালম, কন্নড় এমনকি বাংলা ভাষার ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন নায়িকা। ২০০২ সালের পর থেকে বলিউডে কেরিয়ার তৈরির পথে ছিলেন তিনি। কিন্তু জনপ্রিয় তারকার সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়ার কারণে তার প্রভাব পড়ে অভিনেত্রীর পেশাগত জীবনে। ফিল্মজগৎ থেকে কি সেই কারণেই নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলেন সমীরা রেড্ডি?
১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশে রাজামুন্দ্রিতে জন্ম সমীরার। পরে বাবা-মা এবং দুই দিদির সঙ্গে মুম্বইয়ে চলে যান তিনি। সেখানেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। তাঁর বাবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এবং মা পেশায় মাইক্রোবায়োলজিস্ট।
ছোটবেলায় চেহারা নিয়ে আত্মীয়দের কাছে কটাক্ষের শিকার হতেন সমীরা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘‘আমার আচরণ ছেলেদের মতো ছিল। আত্মীয়দের অনেকেই বলতেন আমি খারাপ দেখতে। আমার দিদিরা কত সুন্দরী, কিন্তু আমি তাঁদের ধারেকাছেই ছিলাম না। এই কথা আমায় বার বার বলা হত।’’
পড়াশোনার পাশাপাশি শাস্ত্রীয় নৃত্যে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন সমীরা। ১৯৯৭ সালে পঙ্কজ উধাসের একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। তিন বছর পর ২০০০ সালে জগজিৎ সিংহের একটি মিউজ়িক ভিডিয়োয় দেখা যায় সমীরাকে।
২০০২ সালে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন সমীরা। ‘ম্যায়নে তুঝকো দিল দিয়া’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় প্রথম অভিনয় করেন তিনি। এই ছবিটিই বলি অভিনেতা সোহেল খানের কেরিয়ারের প্রথম ছবি। সোহেল এবং সমীরার সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় সঞ্জয় দত্তকে।
‘ডরনা মানা হ্যায়’, ‘প্ল্যান’ এবং ‘মুসাফির’ নামের তিনটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের পর তেলুগু ভাষার ছবিতে অভিনয়ের সিদ্ধান্ত নেন সমীরা। প্রথম তেলুগু ছবিতে দক্ষিণের জনপ্রিয় অভিনেতা জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে জুটি বাঁধতে দেখা যায় সমীরাকে। পর্দায় দুই তারকার সম্পর্কের রসায়ন দর্শকের পছন্দ হয়। ছবিটিও বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে।
২০০৬ সালে জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে ‘অশোক’ নামে আরও একটি তেলুগু ছবিতে অভিনয় করেন সমীরা। পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কেরিয়ারে সবেমাত্র সাফল্যের স্বাদ পেতে শুরু করেছিলেন অভিনেত্রী। সেই সময়েই তাঁর ব্যক্তিগত জীবন প্রভাব ফেলে পেশাগত জীবনে।
কানাঘুষো শোনা যায়, জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে নাকি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সমীরা। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সমীরা জানিয়েছিলেন যে, সকলে তাঁর অভিনয় নিয়ে আলোচনা না করে জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে কাঁটাছেড়া করতে শুরু করেছিলেন।
সমীরা বলেছিলেন, ‘‘আমি তেলুগু ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয় শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে বিষয়ে কিছুই জানতাম না। জুনিয়র এনটিআর খুবই ভাল মানুষ। আমায় সব কিছু গোড়া থেকে শিখিয়েছে। আমি শুনেছি যে ও শুট করার পরেই নাকি সেট থেকে বাড়ি ফিরে যেত। কেউ ওকে কোনও সহ-অভিনেত্রীর সঙ্গে সে ভাবে মিশতে দেখেননি। কিন্তু আমার সঙ্গে ওর বন্ধুত্ব হওয়ার পরেই সকলে ভেবে নিলেন যে আমরা সম্পর্ক রয়েছি।’’
সমীরা আরও বলেছিলেন, ‘‘আমি অভিনেত্রী হিসাবে নিজের পরিচিতি গড়তে চেয়েছিলাম। কোনও জনপ্রিয় তারকার প্রেমিকা হিসাবে পরিচিত হতে চাইনি। তা ছাড়া আমি সাহসী চরিত্রে অভিনয় করতাম। সব কিছু নিয়ে আমার পরিবারকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। সমীরার অভিনয় নিয়ে কারও আগ্রহ ছিল না। সমীরার ব্যক্তিগত জীবন, জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে তাঁর ‘প্রেম’ নিয়েই বেশি আলোচনা হত।’’
সমীরার দাবি, জুনিয়র এনটিআরের সঙ্গে নাম জড়িয়ে পড়ার কারণেই তিনি তেলুগু ফিল্মজগৎ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। তবে মালয়ালম, কন্নড়, তামিল ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
‘আমি, ইয়াসমিন আর আমার মধুবালা’ এবং ‘কালপুরুষ’ নামের দু’টি বাংলা ছবিতে অভিনয় করেন সমীরা। ‘নো এন্ট্রি’, ‘ট্যাক্সি নম্বর ৯২১১’, ‘নকশা’, ‘রেস’, ‘ওয়ান টু থ্রি’, ‘দে দনা দন’, ‘তেজ’-এর মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
কানাঘুষো শোনা যায়, শামসুল লালানি নামে মুম্বইয়ের এক বডিবিল্ডারের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন সমীরা। তাঁর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানার পরেই নাকি জুনিয়র এনটিআরের প্রেমে পড়েছিলেন অভিনেত্রী।
২০১৩ সালে ‘ভরাদানায়ক’ নামে একটি কন্নড় ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় সমীরাকে। তার পর আর বড় পর্দায় অভিনয় করেননি তিনি। ওটিটির পর্দায়ও দেখা যায়নি তাঁকে।
ভারতের অভিনেত্রীদের মধ্যে সমীরাই প্রথম, যাঁর নিজস্ব ভিডিয়ো গেম রয়েছে। এই ভিডিয়ো গেমে এক জন ‘স্ট্রিট ফাইটার’-এর ভূমিকায় দেখা যায় সমীরাকে।
আকশাই ভার্দে নামে মুম্বইয়ের এক শিল্পোদ্যোগীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন সমীরা। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে তাঁর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন অভিনেত্রী।
বিয়ের পর অভিনয়জগৎ থেকে পুরোপুরি সরে যান সমীরা। স্বামী এবং দুই সন্তানের সংসার নিয়েই বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন তিনি।
সমাজমাধ্যমে পাতায় ব্যক্তিগত জীবনের নানা খুঁটিনাটি তুলে ধরেন সমীরা। মজার ভিডিয়োও পোস্ট করেন তিনি। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় সমীরার অনুগামীর সংখ্যা ১৭ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে।