বলিপাড়ার দুই তারকার সঙ্গে পেশার সূত্রে সম্পর্ক। কোটি কোটি টাকার উপার্জন। কিন্তু এক সময় এক কোটি টাকা চাকরির প্রস্তাব পেয়েও তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন ভারতের জনপ্রিয় প্রসাধনী সংস্থার প্রধান বিনীতা সিংহ।
১৯৮৩ সালে গুজরাতে জন্ম বিনীতার। তাঁর মা ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। বিনীতার বাবা পেশায় চিকিৎসক। ২০০১ সালে দিল্লি থেকে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে চেন্নাই যান বিনীতা।
২০০১ সালে চেন্নাইয়ের একটি নামী কলেজে ভর্তি হন বিনীতা। সেখান থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
২০০৫ সালে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করার পর উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্ত নেন বিনীতা। ২০০৭ সালে আমদাবাদের আইআইএম থেকে এমবিএ করেন তিনি।
এমবিএ করার সময়ে ২০০৬ সালে একটি বহুজাতিক সংস্থায় তিন মাসের জন্য প্রশিক্ষণ নেন বিনীতা। সেখান থেকে পরে চাকরির প্রস্তাবও পান। কিন্তু স্বপ্নপূরণের জন্য সেই চাকরিতে যোগ দেননি তিনি।
কানাঘুষো শোনা যায়, নিজের ব্যবসা শুরু করবেন বলে এক কোটি টাকা বেতনের চাকরির প্রস্তাবও ফিরিয়ে দেন বিনীতা। তাঁর সহপাঠীরা, যাঁরা চাকরির প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন তাঁদের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করার পরিকল্পনা করেন বিনীতা।
সহপাঠীদের সঙ্গে ব্যবসা করার স্বপ্ন আর অবশ্য বাস্তবে পরিণত হয়নি। কানাঘুষো শোনা যায়, ব্যবসা শুরুর জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জোগার করতে পারেননি বলে ব্যবসা শুরু করতে পারেননি বিনীতা।
২০০৭ সালে পড়াশোনা শেষ করার পর নিজের স্টার্টআপ শুরু করেন বিনীতা। কিন্তু সেই ব্যবসা খুব একটা সফল হয়নি। লক্ষ্মীর মুখ না দেখায় সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
২০১২ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য স্টার্টআপ শুরু করেন বিনীতা। তবে এ বার ব্যবসার পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। প্রতি মাসে প্রসাধনী দ্রব্য বাড়িতে ডেলিভারির জন্য একটি ‘সাবস্ক্রিপশন প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করেন তিনি। কিন্তু প্রথম স্টার্টআপের মতো দ্বিতীয় স্টার্টআপও সাফল্যের মুখ দেখেনি।
দ্বিতীয় স্টার্টআপ শুরুর তিন বছর পর ২০১৫ সালে আরও এক বার স্টার্টআপ শুরু করেন বিনীতা। এই সময় তাঁর ব্যবসার অংশীদার ছিলেন তাঁর স্বামী কৌশিক মুখোপাধ্যায়।
কৌশিকের সঙ্গে ২০১১ সালে সাত পাকে বাঁধা পড়েন বিনীতা। বিয়ের পর দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। আমদাবাদে পড়াকালীন কৌশিকের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম, তার পর বিয়ে। কৌশিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৃতীয় বারের জন্য স্টার্টআপ শুরু করেন তিনি।
ভারতের বাজারে প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন বিনীতা। খুব কম সময়ে মহিলা ক্রেতাদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বিনীতার সংস্থা। একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে প্রায় ৪১৫ কোটি টাকার চুক্তিও হয় সেই সংস্থার।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিনীতার ব্যবসায় বিনিয়োগ করেন বলি অভিনেতা রণবীর সিংহ। তখন থেকেই পেশাদার সম্পর্ক রয়েছে দু’জনের মধ্যে।
ব্যবসা সংক্রান্ত বহু নামী পত্রিকায় সফল ব্যবসায়ী হিসাবে নাম দেখা যায় বিনীতার। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছিলেন, ব্যবসা শুরুর পথে লিঙ্গ বৈষম্যতার পরিচয় পেয়েছিলেন বিনীতা।
বিনীতা জানিয়েছিলেন, যে প্রসাধনী সংস্থার সাফল্যের কারণে তিনি কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছেন সেই সংস্থা নির্মাণের গোড়াতেই বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাঁকে।
স্বামী কৌশিকের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন বিনীতা। কিন্তু গোড়ার দিকে অর্থ জোগাড় করতে সমস্যা হয়েছিল তাঁর। এমনটাই জানিয়েছিলেন বিনীতা। তিনি একা নন, তাঁর স্বামীও যদি সম্পূর্ণ ভাবে এই ব্যবসার দেখভাল করেন তবেই বিনিয়োগ করতে রাজি হবেন বলে জানান বিনিয়োগকারীরা। এই ঘটনার মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্যতার অভিজ্ঞতা হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি।
২০২১ সালে ব্যবসা সংক্রান্ত একটি নামী পত্রিকায় সফল মহিলা ব্যবসায়ীদের তালিকায় শীর্ষস্থানে নাম লিখিয়ে ফেলেন বিনীতা।
২০২২ সালে ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ এবং ‘কপিল শর্মা শো’-এর মতো রিয়্যালিটি শোয়ে অতিথি হিসাবে দেখা গিয়েছে বিনীতাকে। সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুরাগী মহলও চমকপ্রদ। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামে সাড়ে আট লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছেন তিনি।
২০২৩ সালে বিনীতা এবং তাঁর স্বামী কৌশিকের সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্যবসা শুরু করেন বলি অভিনেত্রী করিনা কপূর খান। বিশেষ ধরনের প্রসাধনীর ব্যবসা শুরু করেন তাঁরা।
দেশ, বিদেশের নানা প্রান্তে ম্যারাথনে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিনীতা। এমনকি ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীনও ম্যারাথনে ২১ কিলোমিটার দৌড়েছিলেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বিনীতা বলেছিলেন, ‘‘আমি মুম্বইয়ে এমন একটি ফ্ল্যাটে থাকতাম যা দেশলাই বাক্সের মতো ছিল। বৃষ্টি হলেই আমার ফ্ল্যাট জলে ভেসে যেত।’’
বর্তমানে প্রসাধনী সংস্থা থেকে ৩০০ কোটি টাকার ব্যবসা করেন বিনীতা। ‘শার্ক ট্যাঙ্ক’ নামের একটি জনপ্রিয় শোয়ে বিচারকের আসনে দেখা যায় তাঁকে।