হাচিকোর কথা মনে পড়ে? অফিস যাওয়ার সময় রোজ নিয়ম করে মালিককে সঙ্গ দিতে রেলস্টেশন পর্যন্ত যেত। আবার অফিস থেকে তার মালিকের ফেরার পথেও অপেক্ষা করত সে। কিন্তু এক দিন অফিস থেকে আর ফেরা হল না তাঁর। সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারাল হাচিকো।
রেলস্টেশনের সামনে তবুও অপেক্ষা করত হাচিকো। যদি কোনও দিন বন্ধুর দেখা পায়। এই ঘটনা অবলম্বনে ২০০৯ সালে একটি ছবিও মুক্তি পেয়েছিল। আমেরিকার ডেইজ়ি উডরাফের কাহিনিও হাচিকোর কথা মনে করিয়ে দেয়। হাচিকো অপেক্ষা করেছিল তার মালিকের জন্য, ডেইজ়ি অপেক্ষা করেছিল তার মৃত সন্তানদের জন্য।
২০১৭ সালের ঘটনা। সাতটি সন্তানের জন্ম দেয় ডেইজ়ি। ল্যাব্রাডর প্রজাতির কুকুর সে। কুকুরছানাদের জন্ম দেওয়ার পর মালিকের বাড়ির গুদামঘরে আশ্রয় নিয়েছিল সে।
সাত সন্তান জন্ম দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর ঘটে দুর্ঘটনা। ডেইজ়ির মালকিন জেসিকা উডরাফ এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনার উল্লেখ করেছিলেন। আমেরিকার ওরেগন এলাকার রোসবার্গের বাসিন্দা জেসিকা।
২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জেসিকার বাড়ির গুদামঘরে আগুন লেগে যায়। সে সময় ডেইজ়ি গুদামঘরে ছিল না। কিন্তু তার ভিতরে আটকে পড়েছিল তার সাত সন্তান।
গুদামঘরে আগুন লাগার পর বার বার তার মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছিল ডেইজ়ি। জেসিকা বলেছিলেন, ‘‘ডেইজ়িকে কোনও ভাবে আমরা আটকে রেখেছিলাম। তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল।’’
জেসিকা জানিয়েছিলেন, আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় ডেইজ়ির সাত সন্তানের। তার পর থেকে নাকি মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে ডেইজ়ি।
গুদামঘরের সামনে বসে চিৎকার করত ডেইজ়ি। জেসিকা জানিয়েছিলেন, কখনও কখনও গুদামঘরের দিকে তাকিয়ে থেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠত ডেইজ়ি।
ডেইজ়ির কষ্ট আর সহ্য করতে পারছিলেন না জেসিকা। ডেইজ়ির মানসিক অবস্থার কথা সমাজমাধ্যমে লিখে জানিয়েছিলেন তিনি। অন্য কুকুরছানা দত্তক নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন জেসিকা।
জেসিকার ধারণা ছিল অন্য কুকুরছানার সঙ্গে থাকলে ডেইজ়ির মানসিক অবস্থার উন্নতি হবে। সমাজমাধ্যমে জেসিকার পোস্ট দেখে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন লোরনা মার্ফি।
পাঁচ বছরের ক্লোয়ি ছিল লোরনার পোষ্য। আটটি কুকুরছানা জন্ম দেওয়ার পরেই মারা যায় ক্লোয়ি। লোরনা জানিয়েছিলেন, মাতৃহীন অবস্থায় জন্মের পর থেকেই দিন কাটাচ্ছে ওই আট কুকুরছানা।
জেসিকা এবং লোরনা দু’জনে সিদ্ধান্ত নেন যে বড় হওয়া না পর্যন্ত আটটি কুকুরছানার দেখাশোনার দায়িত্ব নেবে ডেইজ়ি। কথামতো কুকুরছানাগুলিকে জেসিকার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন লোরনা।
জেসিকা জানিয়েছিলেন, কুকুরছানাগুলিকে ডেইজ়ির কাছে নিয়ে আসার পর ডেইজ়ির ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন দেখা যায়। কুকুরছানাগুলিকে নিজের সন্তানের মতোই আগলে রাখে ডেইজ়ি।
সন্তানদের হারানোর পর ডেইজ়ি যে ভাবে মুষড়ে পড়েছিল, ক্লোয়ির ছানাগুলিকে পেয়ে সেই ডেইজ়িই আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। সাক্ষাৎকারে জেসিকা জানিয়েছিলেন, কুকুরছানাগুলিকে কাছে পাওয়ার পর থেকে গুদামঘরে যাওয়া বন্ধ করে দেয় ডেইজ়ি।