পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিক পেশাগত জীবনের তুলনায় ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে চর্চায় থাকেন বেশি। তিন বার বিয়ে, বিবাহবিচ্ছেদ, এমনকি সম্পর্ক নিয়েও বহু বিতর্ক রয়েছে তাঁকে নিয়ে। কানাঘুষো শোনা যায়, সানিয়া মির্জ়ার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার আগে নাকি বলিউডের এক অভিনেত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তিনি। ইমরান হাশমির হাত ধরে সেই অভিনেত্রী বলিপাড়ায় পা রাখেন। তিনি সয়ালী ভগৎ।
১৯৮৪ সালের ১ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের নাসিকে এক মরাঠি পরিবারে জন্ম সয়ালীর। সেখানেই বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। নাসিক থেকেই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন তিনি।
মডেলিংয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল সয়ালীর। তাই কলেজের পড়াশোনা শেষ করে মডেলিং করতে শুরু করেন তিনি। ২০০৪ সালে একটি নামী সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন তিনি।
সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জয়ী হওয়ার পর একাধিক জনপ্রিয় সংস্থার বিজ্ঞাপনী প্রচারে অভিনয় করতে দেখা যায় সয়ালীকে। মডেলিংয়ের দুনিয়াতেও রাতারাতি জনপ্রিয়তা পান তিনি।
মডেলিংয়ের পাশাপাশি অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক ছিল সয়ালীর। মডেল হিসাবে সফল হওয়ার পর তাই বলিপাড়ায় নিজের কেরিয়ার তৈরি করতে চান তিনি।
২০০৭ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘দ্য ট্রেন’। এই ছবিতে বলি অভিনেতা ইমরান হাশমির সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন সয়ালী।
সয়ালীর কেরিয়ারের প্রথম ছবি বক্স অফিসে ভাল ব্যবসা করে। ‘দ্য ট্রেন’ মুক্তির বছরেই ‘গুড লাক’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় সয়ালীকে। কিন্তু এই ছবিতে বিশেষ নজর কাড়তে পারেননি তিনি।
২০০৮ সালে রাজকুমার সন্তোষীর পরিচালনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘হাল্লা বোল’ নামে একটি হিন্দি ছবি। অজয় দেবগন এবং বিদ্যা বালন এই ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেন। ‘হাল্লা বোল’ ছবির একটি গানে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান সয়ালী।
বলিউডে তেমন পসার জমাতে না পেরে দক্ষিণী ছবিতে অভিনয় করার সিদ্ধান্ত নেন সয়ালী। তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ভাষার ছবিতে অভিনয় করলেও দক্ষিণী চলচ্চিত্রজগতে কেরিয়ার গড়তে পারেননি তিনি।
২০০৮ সালে ‘ফিয়ার ফ্যাক্টর: খতরোঁ কি খিলাড়ি’ রিয়্যালিটি শোয়ে প্রতিযোগী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন সয়ালী। ‘মাইসেল্ফ পেন্ডু’ নামে একটি পঞ্জাবি ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি।
২০০৯ সালে ‘পেয়িং গেস্টস’ নামে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান সয়ালী। এই ছবিতে জনি লিভার, শ্রেয়স তালপাড়ে, নেহা ধুপিয়া, জাভেদ জাফ্রে, সেলিনা জেটলি, রিয়া সেনের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেন সয়ালী। কিন্তু ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে।
২০১০ সালে ‘দ্য সেন্ট হু থট আদারওয়াইস’ নামের একটি ইংরেজি ভাষার ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান সয়ালী। তার পর ‘ইমপেশেন্ট বিবেক’, ‘ঘোস্ট’, ‘রাজধানী এক্সপ্রেস’, ‘ইয়ারিয়া’, ‘দিস উইকেন্ড’ নামের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু কোনও ছবিতেই সয়ালীর অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কাটেনি।
২০১৩ সালে ‘সমাধি’ নামে একটি বাংলা ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় সয়ালীকে। ২০১৬ সালে ‘ধিগিল’ নামে একটি তামিল ছবিতে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তার পর বড় পর্দা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন তিনি।
২০০৮ সালে পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন সয়ালী। দু’বছর নাকি তাঁরা ডেটও করেছিলেন। সয়ালীর সঙ্গে সম্পর্কে ইতি টানার পরেই নাকি টেনিস-তারকা সানিয়া মির্জ়াকে বিয়ে করেন শোয়েব।
শোয়েবের সঙ্গে আদৌ কোনও সম্পর্কে ছিলেন কি না, সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সয়ালী জানিয়েছিলেন, শোয়েবের সঙ্গে একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয়ের কথা ছিল তাঁর। সেই সূত্রেই দু’-তিন বার ক্রিকেটারের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি।
সয়ালী সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, শোয়েবের সঙ্গে কখনওই কোনও সম্পর্কে ছিলেন না তিনি। পুরোটাই নাকি গুজব। তিনি অন্য এক জনের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন। শোয়েবের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে গুজব রটে যাওয়ার ফলে তার প্রভাব পড়েছিল সয়ালীর সম্পর্কে।
সয়ালী বলেছিলেন, ‘‘আমার প্রেমিকের সঙ্গে প্রায়ই অশান্তি হত। গুজব রটে যাওয়ার ফলে সমস্যা আরও বাড়তে লাগল। আমার মনে হয়, শোয়েবের সঙ্গে আমার নাম না জড়ালে আমি আমার প্রেমিককে হারাতাম না। আমাদের সম্পর্ক ও ভাবে শেষ হত না।’’
শোয়েব সম্পর্কে এক পুরনো সাক্ষাৎকারে সয়ালী বলেছিলেন, ‘‘শোয়েব মানুষ হিসাবে খুব ভাল। ও আমার খুব কাছের বন্ধু। তবে আমি আমার প্রেমজীবন নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাই না।’’ পরে সয়ালী অবশ্য দাবি করেছিলেন যে, শোয়েবের সঙ্গে যে ছবিতে অভিনয়ের কথা ছিল, তার প্রচারের জন্যই ক্রিকেটারের নামে সে সব কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু যে ছবির জন্য এত হট্টগোল, সেই ছবির কাজ শুরুর আগেই বন্ধ হয়ে যায়।
২০১৩ সালে নবীনপ্রতাপ সিংহ যাদবের সঙ্গে বিয়ে হয় সয়ালীর। অভিনয়জগতের সঙ্গে যুক্ত নন নবীনপ্রতাপ। পেশায় দিল্লির এক ব্যবসায়ী তিনি।
২০০২ সালে আয়েশা সিদ্দিকিকে বিয়ে করেছিলেন শোয়েব। আয়েশার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ২০১০ সালে সানিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় শোয়েবের। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সানিয়া এবং শোয়েব তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের কথা ঘোষণা করেন।
চলতি বছরেই পাকিস্তানি অভিনেত্রী সানা জাভেদকে বিয়ে করেন শোয়েব। সয়ালী কোনও দিন শোয়েবকে বিয়ে করার কথা ভেবেছিলেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করলে অভিনেত্রী বলেছিলেন, ‘‘একজন মানুষের সঙ্গে দু’-তিন বারের আলাপে তাঁকে বিয়ে করার কথা ভাবা যায় না। তবে যে মানুষটা দু’তিনটি বিয়ে করে ফেলেছেন, তাঁকে বিয়ে করার কথা আমি জন্মেও ভাবতে পারতাম না। শোয়েবের বাবা-মা এসে জোর করলেও আমি রাজি হতাম না।’’
অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত না থেকেও সমাজমাধ্যমে সক্রিয় থাকেন সয়ালী। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যা দেড় লক্ষের কাছাকাছি।