বলিপাড়ার দুই জনপ্রিয় তারকার কন্যা। হিন্দি ফিল্মজগতে ন’বছরের কেরিয়ার। তবুও ঝুলিতে একটিও একক হিট নেই অভিনেত্রীর। একের পর এক ছবি ফ্লপ হওয়ার পর বলিপাড়া থেকে দূরে সরে যান ধর্মেন্দ্র এবং হেমা মালিনীর কন্যা এষা দেওল।
১৯৮১ সালের ২ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম এষার। মুম্বইয়ে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে ইউরোপ চলে যান তিনি। সেখান থেকে কম্পিউটার টেকনোলজি নিয়ে পড়াশোনা করে মুম্বই ফিরে যান।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহ ছিল এষার। ফুটবল খেলতে ভালবাসতেন তিনি। এমনকি কলেজে গিয়ে হ্যান্ডবল খেলাতেও পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি।
খেলাধুলার পাশাপাশি শাস্ত্রীয় নৃত্যেও পারদর্শী এষা। মা হেমার সঙ্গে একই মঞ্চে নৃত্য পরিবেশনও করেন তিনি। তামিল, তেলুগু এবং কন্নড় ভাষার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি।
২০০২ সালে ‘কোয়ি মেরে দিল সে পুছে’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ করেন এষা। এই ছবিতে সঞ্জয় কপূর এবং আফতাব শিবদাসানির সঙ্গে অভিনয় করেন তিনি। তারকা-কন্যার কেরিয়ারের প্রথম ছবি বক্স অফিসে ব্যর্থ হয়।
‘না তুম জানো না হম’, ‘কেয়া দিল নে কাহা’, ‘কুছ তো হ্যায়’, ‘চুরা লিয়ে হ্যায় তুমনে’, ‘যুবা’র মতো একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন এষা। কিন্তু হৃতিক রোশন এবং অজয় দেবগনের মতো বলি তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেলেও এষার কেরিয়ারে কোনও একক হিট জোটেনি।
২০০৪ সালে আদিত্য চোপড়ার প্রযোজনায় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় ‘ধুম’। অভিষেক বচ্চন, জন আব্রাহম, উদয় চোপড়া এবং রিমি সেনের সঙ্গে এই ছবিতে অভিনয় করেন এষা। তারকাখচিত এই ছবিতে অভিনয় করে প্রশংসা পান তিনি। ছবিটি বক্স অফিসে ব্যবসাও করে।
‘কাল’, ‘দস’, ‘নো এন্ট্রি’, ‘শাদি নম্বর ওয়ান’, ‘ডার্লিং’, ‘ক্যাশ’, ‘অনকহি’ নামের একাধিক হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন এষা। কোনও ছবিই তাঁর কেরিয়ারে মাইলফলক গড়তে পারেনি।
২০০৮ সালে অজয় দেবগন অভিনীত ‘সানডে’ ছবির একটি গানের দৃশ্যে অভিনয় করতে দেখা যায় এষাকে। ‘মানি হ্যায় তো হানি হ্যায়’ ছবিতে একটি গানের দৃশ্যে ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
২০১১ সালে হেমা মালিনীর পরিচালনায় ‘টেল মি ও খুদা’ ছবিটি মুক্তি পায়। এই ছবিতে ধর্মেন্দ্র এবং ঋষি কপূরের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পান এষা। তার পর আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে।
২০১২ সালে ভরত তখতানি নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন এষা। বিয়ের পাঁচ বছর পর ২০১৭ সালে প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। ২০১৯ সালে দ্বিতীয় কন্যার জন্ম দেন এষা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভরতের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন এষা। ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনের সমাপ্তির খবরে শিলমোহর দেন অভিনেত্রী নিজেই।
বিয়ের আগে বহু দিন সম্পর্কে ছিলেন দু’জনে। স্কুলে পড়ার সময় থেকেই প্রেম দু’জনের। দু’জনে একই স্কুলে পড়তেন। সহপাঠী ছিলেন তাঁরা। স্কুলে নাকি প্রায়ই ঝগড়া হত দু’জনের। একটি সাক্ষাৎকারে এষা এবং ভরত নিজেরাই সে কথা জানিয়েছিলেন। এক বার নাকি ঝগড়া এমন পর্যায়ে চলে যায় যে, দু’জনের বিচ্ছেদ হয়ে যায়।
এষা জানিয়েছিলেন, ছুটির দিনে ভরত তাঁকে নিয়ে ‘লং ড্রাইভ’-এ গিয়েছিলেন। গাড়িতে ভরত তাঁর হাত ধরার চেষ্টা করছিলেন। ভরতের এমন আচরণে এষা রেগে যান। হাত ছাড়িয়ে নিয়ে এষা নাকি বলেছিলেন, ‘‘তুমি আমার হাত ধরো কোন সাহসে?’’ সেই মুহূর্তে এষা গাড়ি থেকে নেমে যান। পরের দিন স্কুলে ভরত কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এষা পণ করেছিলেন, কথা বলবেন না। অনেক দিন ভরতের ফোন ধরেননি, মেসেজের উত্তরও দেননি। তার পর অবশ্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব ঠিক হয়ে যায়। সেই ঘটনার বহু বছর পর ভরত বরবেশে এষার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘‘এ বার হাত ধরতে পারি তো?’’
২০১৯ সালে ‘কেকওয়াক’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় এষাকে। দু’বছর পর ২০২১ সালে ভরতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘এক দুয়া’ নামে একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির প্রযোজনা করেন তিনি। সেই ছবিতে অভিনয়ও করেন এষা।
বড় পর্দায় নয়, বরং ওটিটির পর্দায় অভিনয় করতে দেখা যায় এষাকে। অজয় দেবগন অভিনীত ‘রুদ্র: দ্য এজ অফ ডার্কনেস’ এবং সুনীল শেট্টি অভিনীত ‘হান্টার টুটেগা নেহি তোড়েগা’ নামের দু’টি ওয়েব সিরিজ়ে অভিনয় করেন এষা।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, শুটিং সেটের মধ্যে বলি অভিনেত্রী অমৃতা রাওকে সপাটে চড় মেরেছিলেন এষা। ২০০৬ সালে ‘প্যারে মোহন’ ছবির শুটিং চলাকালীন নাকি এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা প্রসঙ্গে এষা এক পুরনো সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘অমৃতা আমাকে পরিচালক এবং ক্যামেরাম্যানের সামনে অপমান করেছিল। আমি তা সহ্য করতে পারিনি। ওর গালে চড় মারি। তা নিয়ে আমার কোনও আক্ষেপ নেই। সেই মূহূর্তে সম্মান রক্ষার্থে যা করণীয় মনে হয়েছে আমি সেটাই করেছিলাম।’’
২০২০ সালে ‘আম্মা মিয়া!’ নামের একটি বই লিখেছেন এষা। সমাজমাধ্যমে অনুগামী মহল রয়েছে অভিনেত্রীর। ইতিমধ্যেই ইনস্টাগ্রামের পাতায় ২৩ লক্ষের গণ্ডি পার করে ফেলেছে তারকা-কন্যার অনুগামীর সংখ্যা।