চার দশক বলিপাড়ায় কাটিয়েছেন। ১৩টি ভাষায় আড়াইশোরও বেশি ছবিতে অভিনয় করে ফেলেছেন। পুত্রও বলিউডের অ্যাকশন হিরো হিসাবে নাম করেছেন। তবে এত সাফল্য পাওয়া সহজ ছিল না তাঁর। বলিজগতের ‘ভিড়ু’ জ্যাকি শ্রফকে রোজগার করতে বিক্রি করতে হয়েছিল বাদামও।
১৯৫৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রের মুম্বইয়ে জন্ম জ্যাকির। সেখানে বাবা-মা এবং দাদার সঙ্গে থাকতেন তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে এক বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যান জ্যাকির দাদা।
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে গিয়ে লোকসানের মুখ দেখেন জ্যাকির পিতা। তার পর থেকেই তাঁদের সংসারে অর্থের টান পড়ে।
অর্থের অভাবে পড়াশোনাও শেষ করতে পারেননি জ্যাকি। একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বেতন দিতে না পারায় তাঁকে স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয়। এর পরই সংসারের খরচ জোগানোর দায়িত্ব পড়ে তাঁর উপর।
কিশোর বয়স থেকেই রোজগারের জন্য নানা জায়গায় ছোটাছুটি করতেন জ্যাকি। তাঁর আসল নাম ছিল জয়কিষেণ কাকুভাই শ্রফ। এক বন্ধুর পরামর্শে নাম বদল করেন জ্যাকি।
রোজগারের জন্য নামী বিমানসংস্থা থেকে শুরু করে বিলাসবহুল হোটেলে কাজের সন্ধান শুরু করেন জ্যাকি। কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা কম থাকার কারণে সব জায়গা থেকে ফাঁকা হাতে ফিরতে হত জ্যাকিকে।
এর পর মুম্বইয়ের একটি ভ্রমণ সংস্থায় কর্মচারী পদে কাজ করতে শুরু করেন জ্যাকি। যাতায়াতের পথে তাঁকে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন এক বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মী। জ্যাকিকে মডেলিংয়ের প্রস্তাব দেন সেই কর্মী। সঙ্গে সঙ্গে সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান জ্যাকি।
বিজ্ঞাপনে মডেলিং করার সূত্রে জ্যাকির উপর নজর পড়ে এক অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শিক্ষিকার। জ্যাকিকে অভিনয় শেখানোর প্রস্তাব দেন তিনি। অভিনয় শিখতে সেখানে ভর্তিও হন জ্যাকি।
অভিনয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে জ্যাকির সহপাঠী ছিলেন বলি অভিনেতা দেব আনন্দের পুত্র সুনীল আনন্দ। জ্যাকির অভিনয় দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়ে পিতার সঙ্গে বন্ধুর আলাপ করিয়ে দেন সুনীল।
জ্যাকিকে দেখামাত্রই মনে ধরে দেব আনন্দের। তাঁর পরিচালিত একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলেন জ্যাকিকে। এই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেননি জ্যাকি।
১৯৮২ সালে দেব আনন্দের পরিচালনায় মুক্তি পাওয়া ‘স্বামী দাদা’ ছবিতে অভিনয় করতে দেখা যায় জ্যাকিকে। কানাঘুষো শোনা যায়, এই ছবিতে দ্বিতীয় নায়কের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল জ্যাকিকে। কিন্তু শুটিং শুরুর ১৫ দিন পর সেই প্রস্তাব দেওয়া হয় মিঠুন চক্রবর্তীকে। তবে এই ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান জ্যাকি।
১৯৮৩ সালে সুভাষ ঘাই পরিচালিত ‘হিরো’ ছবিতে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় জ্যাকিকে। মুখ্যচরিত্রে কেরিয়ারের প্রথম ছবিতেই বাজিমাত করেন তিনি।
হিন্দি ছবির পাশাপাশি বাংলা, ভোজপুরি, কন্নড়, তেলুগু, মালয়ালম, মরাঠি, পঞ্জাবি, তামিল, ওড়িয়া, গুজরাতি এবং কোঙ্কণি ভাষার ছবিতে অভিনয় করেছেন জ্যাকি।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, জ্যাকির বাবা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার পর মুম্বইয়ের ঘিঞ্জি এলাকায় এক কামরার একটি ফ্ল্যাটে থাকত তাঁদের গোটা পরিবার। সেই এলাকায় সাতটি আবাসন ছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে তিনটি শৌচালয় ছিল সেখানে।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে জ্যাকি জানিয়েছিলেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাঁকে শৌচালয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হত। শৌচালয়ে যাবেন বলে আবাসনের বাসিন্দারা সেখানে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন।
জ্যাকি জানিয়েছিলেন, সামান্য উপার্জনের জন্য সিনেমাহলের সামনে দাঁড়িয়ে বাদামও বিক্রি করতে হয়েছিল তাঁকে। প্রথম মডেলিং করে পারিশ্রমিক হিসাবে ৭৫০০ টাকা পেয়েছিলেন জ্যাকি।
১৯৮৭ সালের জুন মাসে মডেল-অভিনেত্রী আয়েশা দত্তকে বিয়ে করেন জ্যাকি। বিয়ের পর এক পুত্র এবং এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন আয়েশা। পুত্র টাইগার শ্রফ বর্তমানে বলিপাড়ার অন্যতম খ্যাতনামী অভিনেতা।
বলিপাড়া সূত্রে খবর, অভিনয়ের পাশাপাশি স্ত্রী আয়েশার সঙ্গে হাত মিলিয়ে একটি প্রযোজনা সংস্থাও চালান জ্যাকি। বর্তমানে ২১২ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে অভিনেতার।
মুম্বইয়ের বান্দ্রায় একটি বিলাসবহুল বাংলোয় থাকেন জ্যাকি। বাংলোয় আটটি বেডরুম রয়েছে। মার্সিডিজ় এবং বিএমডব্লিউয়ের মতো নামী ব্র্যান্ডের একাধিক গাড়িও রয়েছে তাঁর।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে মুক্তি পাওয়া ‘বেবি জন’ ছবিতে শেষ বার বড় পর্দায় অভিনয় করতে দেখা গিয়েছে জ্যাকিকে। সম্প্রতি ওটিটির পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘চিড়িয়া উড়’ নামের একটি ওয়েব সিরিজ়। সেই সিরিজ়ে মুখ্যচরিত্রে অভিনয় করেছেন জ্যাকি।