‘শোলে’ ছবির রহিম চাচার কথা মনে পড়ে? চরিত্রের মুখে সেই বিখ্যাত সংলাপ, ‘ইতনা সন্নাটা কিউঁ হ্যায় ভাই?’ প্রায় চার দশক সিনেমাজগতের সঙ্গে যুক্ত থেকে ২২৫টি ছবিতে অভিনয় করেন একে হঙ্গল। কিন্তু এক সময় তাঁকে এমন আর্থিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল যে, অমিতাভ বচ্চন তাঁকে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন।
১৯১৪ সালে জন্ম অবতার কিষণ হঙ্গলের। ইন্ডাস্ট্রিতে আসল নামের চেয়ে একে হঙ্গল নামে অধিক পরিচিত ছিলেন তিনি। বাবা-মা এবং দুই বোনের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
শৈশব থেকেই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অবতার। পাশাপাশি স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গেও যোগ ছিল তাঁর। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বহু বার প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। উপার্জনের জন্য দর্জির কাজ করতেন তিনি।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে অবতার জানিয়েছিলেন, দু’বছর জেলে বন্দি ছিলেন তিনি। অবতার বলেছিলেন, ‘‘আমি এক বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী ছিলাম। সে কারণে আমায় গ্রেফতার করা হয়েছিল।’’
দেশভাগের পর দু’বছর পাকিস্তানে জেলবন্দি ছিলেন অবতার। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর মুম্বই চলে যান তিনি। সেখানে গিয়ে আবার থিয়েটারে অভিনয় শুরু করেন।
ষাটের দশকে বড় পর্দায় অভিনয় শুরু করেন অবতার। ১৯৬৬ সালে ‘তিসরি কসম’ ছবির মাধ্যমে বলিপাড়ায় আত্মপ্রকাশ তাঁর। ‘আয়না’, ‘শওকিন’, ‘নমকহারাম’, ‘মঞ্জিল’, ‘প্রেম বন্ধন’ এবং ‘শোলে’র মতো বহু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
মূলত বয়স্ক চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেতেন অবতার। রাজেশ খন্নার মতো অভিনেতার সঙ্গে মোট ১৬টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।
‘শোলে’ ছবিতে রহিম চাচার চরিত্রে অভিনয় করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন অবতার। চার দশক ধরে কোনও না কোনও ছবিতে ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি।
২০০৫ সালে অমল পালেকর পরিচালিত ‘পহেলি’ ছবিতে শেষ বারের মতো অভিনয় করতে দেখা যায় অবতারকে। তার পর বয়সজনিত কারণে নানা রকম অসুস্থতা বাসা বাঁধে তাঁর শরীরে।
হিন্দি সিনেমাজগতে তাঁর অবদানের জন্য সরকারের তরফে পদ্মভূষণ পান অবতার। ২০১১ সালে মুম্বইয়ের একটি ফ্যাশন শোয়ে হুইলচেয়ারে বসে ফ্যাশন সরণিতে দেখা যায় তাঁকে।
২০০৭ সালে বাথরুমে পড়ে ঊরুর হাড় ভেঙে যায় অবতারের। অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। কিন্তু চিকিৎসার জন্য অর্থ ছিল না অভিনেতার কাছে।
অভিনেতার অসুস্থতার খবর প্রকাশ্যে আসায় অবতারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন বলিপাড়ার বহু তারকা। বলিপাড়া সূত্রে খবর, অবতারের চিকিৎসা সূত্রে ২০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন।
২০১২ সালে ‘কৃষ্ণ অওর কংস’ নামের অ্যানিমেশন ছবিতে উগ্রসেন চরিত্রের নেপথ্যে কণ্ঠ দিয়েছিলেন অবতার। ‘মধুবালা’ নামের হিন্দি ধারাবাহিকে অতিথিশিল্পী হিসাবে শেষ অভিনয় করতে দেখা যায় তাঁকে।
২০১২ সালে ১৬ অগস্ট মুম্বইয়ের সান্তা ক্রুজের একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় অবতারকে। হাসপাতালে ভর্তি করানোর ১০ দিন পর ২৬ অগস্ট ৯৮ বছর বয়সে মারা যান ‘শোলে’র রহিম চাচা।