জীবনের স্রোত কোন খাতে বইয়ে নিয়ে যাবে, তা কেউ কেউ অনুধাবন করতে পারেন না। সাফল্য, ব্যর্থতায় মোড়া জীবন আপনাকে প্রতিনিয়ত চমক দেয়। আপনি আজকে যাঁকে সফল দেখছেন, ভবিষ্যতে তিনি সেই শিখরে থাকবেন কি না, তা বলা যায় না। সমাজে এমন ভূরি ভূরি উদাহরণ রয়েছে। তেমনই একটি নাম বরখা মদন।
এক সময় বলিউডে দাপট দেখানো বরখার নামের সঙ্গে এখন পরিচিত নন অনেকেই। তবে নব্বইয়ের দশকে বলিউডে হাতেখড়ি হওয়া এই অভিনেত্রীকে নিয়ে উৎসাহের খামতি ছিল না ভক্তদের মধ্য। তবে বলিউডে তাঁর যাত্রা ছিল অনেকটাই ধূমকেতুর মতো।
১৯৭৪ সালে পঞ্জাবে জন্মগ্রহণ করেন বরখা। হিন্দি ছাড়াও পঞ্জাবি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। প্রযোজনাও করেছেন কয়েকটি ছবি। বড় পর্দা, ছোট পর্দা মিলিয়ে বরখার কাজ সাড়া ফেলেছিল এক সময়ে। তাঁর আবেদনময়ী চেহারার কারণে বার বার আলোচনায় থেকেছেন বরখা।
অক্ষয় কুমারের ছবিতে অভিনয় করে ১৯৯৬ সালে বলিউডে পা রেখেছিলেন বরখা। ছবির নাম ছিল ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’। রবিনা টন্ডন, রেখার মতো অভিনেত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন বরখা। মূল চরিত্রে সুযোগ না পেলেও বরখার অভিনয় নজর কেড়েছিল।
১৯৯৬ সালেই বরখা একটি আন্তর্জাতিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ‘ড্রাইভিং মিস পালমেন’ নামের একটি ইন্দো-ডাচ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায়।
অনেককেই তখন বলতে শোনা গিয়েছিল, বরখা লম্বা রেসের ঘোড়া। কিন্তু প্রথম ছবির পর ছ’বছর সুযোগ পাননি। তার পর সুযোগ এল পরিচালক রামগোপাল ভর্মার হাত ধরে। তাঁর ‘ভূত’ ছবিতে ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেন বরখা। মনজিৎ খোসলা নামে তাঁর অভিনীত চরিত্র সকলের নজর কেড়েছিল।
তার পর একের পর এক ছবিতে বরখা নিজের অভিনয়ের গুণে মানুষের মন জয় করেছিলেন। তাঁর প্রযোজিত ‘সোচ লো’, ‘সুরখাব’-সহ একাধিক ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে সে ভাবে প্রচারের আলো কাড়তে পারেননি তিনি। ‘সুরখাব’ ছবিতেই তাঁকে শেষ দেখা যায়।
শুধু মাত্র বড় পর্দায় নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি বরখা। টেলিভিশনেও সমানতালে অভিনয় করে সাধারণ মানুষের ঘরের মেয়ে হয়ে উঠেছিলেন তিনি। জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিকে তাঁর অভিনয় মুগ্ধ করেছিল। তবে সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।
অভিনয়ে আসার আগে মডেলিংও করেছেন বরখা। সুস্মিতা সেন, ঐশ্বর্য রাইদের সঙ্গে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে ভারতের এক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় ‘মিস ইন্ডিয়া ট্যুরিজ়ম’ হিসাবে নির্বাচিত হন বরখা। সেই প্রতিযোগিতায় সুস্মিতার মাথায় উঠেছিল সেরার মুকুট। দ্বিতীয় স্থান পান ঐশ্বর্য।
সাফল্যের সিঁড়ি থেকে যেন ধপ করে পড়ে যান বরখা। কাজ না পেয়ে মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন তিনি। বৌদ্ধ মঠে আনাগোনা করতেও দেখা যায় বরখাকে। বৌদ্ধ ধর্মমত থেকে শুরু করে মঠের পরিবেশ— সব কিছুই তাঁকে টানতে থাকে। মঠের পরিবেশ আকৃষ্ট করে বলি অভিনেত্রীকে।
২০১২ সালে আচমকাই সিদ্ধান্ত নেন, অভিনয় ছেড়ে দেবেন তিনি। বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে স্থির করেন, বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হবেন। এখন আর বলিউডের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই। এখন আর কেউ তাঁকে বরখা মদন বলে চেনেন না। তাঁর নতুন নাম গ্যালটেন সামটেন।
কর্নাটকের এক বৌদ্ধ মঠে গিয়ে বরখা দীক্ষা নেন। লামা জ়োপা রিনরোচের তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে নিজেকে তৈরি করেছিলেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি তাঁর ভাল লাগা ছিল।
একাধিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বরখা যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়তেন, সে সময় পরিবারের সঙ্গে সিকিমে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানকার এক বৌদ্ধ মঠ পরিদর্শনে গিয়েই বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হন। মঠের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি অনুপ্রাণিত করে বরখাকে।
অতীতে এক সাক্ষাৎকারে বরখা বলেছিলেন, ‘‘অভিনয় ছেড়ে যখন আমি বৌদ্ধ সন্ন্যাসী হওয়ার কথা বাবা-মাকে জানাই, তাঁরা আপত্তি করেননি।’’ পরিবারের পূর্ণ সমর্থন পাওয়ার পরেই মঠে গিয়ে দীক্ষা নেন বরখা।
বর্তমানে তিব্বতের সেরা জে মঠে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন করেন বরখা। সেখানকার জীবনযাপনের একাধিক মুহূর্তের ছবি, ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তিনি।