১৯৯৬ সাল। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় অক্ষয় কুমার, রেখা, রবীনা টন্ডন অভিনীত ‘খিলাড়িয়ো কা খিলাড়ি’। এই ছবিতে ছিলেন আরও এক অভিনেত্রী। বরখা মদন। ‘খিলাড়িয়ো কা খিলাড়ি’ ছবির মাধ্যমে বড় পর্দায় প্রথম কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। ছবিটি বলিউডে সাড়া ফেললেও বরখা আলোর রোশনাই থেকে দূরেই ছিলেন।
একই বছর ‘ড্রাইভিং মিস পালমেন’ নামের একটি ইন্দো-ডাচ ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা যায় বরখাকে।
বলিউডে নামডাক না হলেও ২০০৩ সালে তাঁর ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। পরিচালক রামগোপাল বর্মার নজরে পড়েন তিনি।
অজয় দেবগন ও ঊর্মিলা মাতন্ডকর অভিনীত ‘ভূত’ ছবিটির কথা মনে পড়ে? বলিউডে হরর ঘরানার ছবিগুলির মধ্যে এই ছবিটি দর্শকের মনে আলাদা করে জায়গা করে নিয়েছিল।
এই ছবিতেও অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল বরখাকে। তবে কোনও রক্ত-মাংসের চরিত্রে নয়, ভূতের ভূমিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করে সকলের প্রশংসা পেয়েছিলেন তিনি।
তার পরেই বলিউডে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিনেত্রী বুঝতে পারেন, শুধু অভিনয় দক্ষতার মাধ্যমেই নয়, বলিউডে নিজের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করতে হলে উপরমহলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখাটাও জরুরি।
‘ভূত’ ছবির পর আরও কয়েকটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করলেও তাঁর কোনও ছবিই সে ভাবে প্রচারে আসেনি।
পরে হিন্দি ধারাবাহিকের জনপ্রিয় মুখ হয়ে উঠলেও বরখার জীবনে সুখের দিন বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কাজ না পাওয়ার কারণে ধীরে ধীরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন বরখা।
অভিনয়জগতে আসার আগে মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। এমনকি, ১৯৯৪ সালে যে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় সুস্মিতা সেন এবং ঐশ্বর্যা রাই বিজয়ী হয়েছিলেন, সেই একই প্রতিযোগিতায় রানার-আপ হয়েছিলেন বরখা।
পরে আরও অনেক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি। মডেলিংয়ের সফল কেরিয়ার ছেড়ে বলিউডে এসে ব্যর্থ হন বরখা।
শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই একটি প্রযোজনা সংস্থা চালু করেন। ‘সোচ লো’, ‘সুরখাব’ নামের দু’টি হিন্দি ছবির প্রযোজনা করেছিলেন বরখা।
কিন্তু এই সংস্থা নিয়েও বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। এই সময়ই কাজের ফাঁকে ফাঁকে তিনি বহু বৌদ্ধ মঠ পরিদর্শন করতে শুরু করলেন।
বৌদ্ধ ধর্মমত থেকে শুরু করে মঠের পরিবেশ— সবকিছুই তাঁকে টানতে থাকে। মঠে যত বেশি সময় কাটাতে থাকেন, তত বেশি বৌদ্ধ ধর্মের দিকে ঝুঁকে পড়েন বরখা।
বর্তমানে এই মডেল-অভিনেত্রীর জীবনধারায় পরিবর্তন এসেছে। বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে তিনি এখন এক বৌদ্ধ ভিক্ষু।
বলিউডের সঙ্গে এখন তাঁর কোনও রকম সম্পর্ক নেই। জীবন পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের নামও বদলে ফেলেন তিনি।
বরখা মদন নয়, তাঁর নতুন নাম গ্যালটেন সামটেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘এই জীবন নিয়ে আমি সন্তুষ্ট। বৌদ্ধ ভিক্ষু হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি কোনও ভুল করিনি।’’