জুলাই মাসের শেষে মুক্তি পেয়েছিল ক্রিস্টোফার এ়ডওয়ার্ড নোলান পরিচালিত ‘ওপেনহাইমার’ এবং গ্রেটা গারউইগ পরিচালিত ‘বার্বি। হলিউডের এই দুই ছবি যে বক্স অফিস থেকে দুর্দান্ত ব্যবসা করেছে, তা আর বলার অপেক্ষা থাকে না। শোনা যায়, প্রেক্ষাগৃহে ছবি মুক্তির আগেই সাড়ে তিন লাখ টিকিট বুক হয়ে গিয়েছিল এই দু’টি ছবির। তা-ও অনলাইন টিকিট বুক করার প্ল্যাটফর্ম ‘বুকমাইশো’-এর মাধ্যমে।
সিনেপ্রেমীরা প্রেক্ষাগৃহের সামনে ছবি শুরু হওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের আগে পৌঁছে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতেন। সে দৃশ্য ধীরে ধীরে শহরের বুক থেকে বিরল হয়ে যাচ্ছে। এখন আগাম টিকিট বুকিং করা যায়। বাড়িতে বসেই। টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়াও খুব সহজ। মোবাইল ফোনে একের পর এক অপশন বেছে নিলেই সিনেমার টিকিট কাটা হয়ে যায়। কিন্তু এই অত্যাধুনিক পরিকল্পনার সূত্রপাত কোথা থেকে?
‘বুকমাইশো’ অ্যাপের প্রতিষ্ঠাতা আশিস হেমরজনী। আশিসের সঙ্গে সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে হাত মিলিয়েছেন তাঁরই দুই বন্ধু পরিক্ষিত ধর এবং রাজেশ বলপান্ডে।
১৯৭৫ সালে মুম্বইয়ের জুহু এলাকায় এক বিত্তশালী পরিবারে জন্ম আশিসের। মুম্বইয়ের স্কুল এবং কলেজে পড়াশোনা করেছেন তিনি। মার্কেটিং নিয়ে এমবিএ করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পাশ করেন আশিস।
এমবিএ করার পর এক বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ শুরু করেন আশিস। সেই সংস্থার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি। এই পেশায় থাকাকালীন বন্ধুদের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন আশিস। সেখানে গিয়ে অনলাইন মাধ্যমে সিনেমার টিকিট কাটার পরিকল্পনা আসে আশিসের মাথায়।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ঘুরতে গিয়ে রেডিয়োয় রাগবি খেলার টিকিট বুকিংয়ের প্রচার শুনছিলেন আশিস। তা শুনে তিনি ভাবেন সিনেমার টিকিট যদি অনলাইনে কাটা হয় তা হলে ক্রেতারা অনেক সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন আশিস।
স্থায়ী চাকরি ছেড়ে নিজের ব্যবসা শুরু করার কথা বাড়িতে জানান আশিস। পরিবারের সদস্যেরা আপত্তি জানালেও পরে তারা আশিসের প্রস্তাবে রাজি হয়। আশিস তাঁর দুই বন্ধুর সহযোগিতায় নিজের ব্যবসা শুরু করেন।
১৯৯৯ সালে আশিস, পরিক্ষিত এবং রাজেশ তিন জন মিলে ‘বিগট্রি এন্টারটেনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। বহু চড়াই-উতরাইয়ের মধ্যে দিয়ে নিজের ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যান তিন বন্ধু।
রাজেশ সংস্থার আর্থিক লেনদেনের দায়িত্ব সামলাতে শুরু করেন এবং পরিক্ষিত ওয়েবসাইট সজ্জার দায়িত্বে ছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নামও বদলে যেতে থাকে সিনেমার টিকিট কাটার ওয়েবসাইটের। কখনও ‘গো ফর টিকেটিং’, কখনও বা ‘ইন্ডিয়া টিকেটিং’ নামে পরিচয় পায় তাঁদের ওয়েবসাইট।
২০০৭ সালে ‘বুকমাইশো’ নতুন নাম নিয়ে হাজির হন আশিস। তার পর থেকেই ব্যবসার রেখচিত্র ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। ২০১৯ সালের অর্থবর্ষে ‘বুকমাইশো’ ৬১৯ কোটি টাকা উপার্জন করে।
বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ৬৫০টিরও বেশি শহরে ‘বুকমাইশো’-এর সুবিধা পাওয়া যায়। এ ছাড়াও পাঁচটি দেশে ‘বুকমাইশো’-এর মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কাটা যায়। শুধুমাত্র সিনেমার টিকিট নয়, শহরের যে কোনও জায়গায় কোনও অনুষ্ঠান হলে সেখানকার টিকিট কাটা যায়।
২৪ বছর বয়সে ব্যবসা শুরু করেছিলেন আশিস। ২০১৭ সালে পিভিআর-এর সঙ্গে ১ হাজার কোটি টাকা চুক্তি স্বাক্ষর হয় ‘বুকমাইশো’-এর। পিভিআর-এর টিকিট কাউন্টার থেকে যে টিকিটগুলি বিক্রি হত না, তা অনলাইনে বিক্রি করত ‘বুকমাইশো’।
২০২১ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘বুকমাইশো স্ট্রিম’ শুরু করা হয়। এর ফলে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত কয়েকটি ছবি সরাসরি ‘বুকমাইশো স্ট্রিম’ থেকেই দেখা যায়।
২০২১ সালের জুন মাসে ‘বুকমাইশো’-এর তরফে প্রায় ২০০ জন কর্মীকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে টুইটারে দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন আশিস। কোভিডের জন্য তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
মুম্বই, দিল্লি, হায়দরাবাদ, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরু মিলিয়ে মোট ৪০০ জন কর্মী ‘বুকমাইশো’-এর সঙ্গে নিযুক্ত রয়েছেন। বর্তমানে মুম্বইয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকেন ‘বুকমাইশো’-এর অধিকর্তা আশিস।