ডাক্তারি পেশার চাপের কথা সকলেরই জানা। আবার তিনি যদি হন মহিলা চিকিৎসক, তা হলে তো কথাই নেই। ঘর-সংসার-সন্তান সামলে নিজের পেশার প্রতি আনুগত্য বজায় রাখতে তাঁদের হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু আজ যাঁর কথা বলা হবে, তিনি এই সব ধারণাকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করেছেন।
ইনি মায়া রাঠৌর। দুই সন্তানের মা মায়া এক জন স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ। পাশাপাশি তিনি দেহসৌষ্ঠব চ্যাম্পিয়নও বটে।
৩১ বছর বয়সী মায়া ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহী ছিলেন। খেলাধুলোয় ভাল হওয়ায় তিনি স্কুলে সেরা ক্রীড়াবিদ হিসেবেও স্বীকৃতি পান। তবে মেয়ে খেলাধুলো করে পড়াশুনার বারোটা বাজাক, কখনোই চাননি মা-বাবা। তাঁকে বলা হয়, খেলাধুলো করলে আঘাত লাগতে পারে। আর আঘাত লাগলে সেই মেয়েকে কেউ বিয়ে করে না।
কিন্তু তাই বলে আটকে রাখা যায়নি মায়াকে। ভরতনাট্যমের ক্লাস কেটে তাইকোণ্ডো ক্লাসে ভর্তি হন তিনি। এর পর সারা সন্ধে খেলতেন ক্রিকেটও।
নাছোড়বান্দা মেয়ে ক্রীড়াবিদ হতে চান শুনে মায়ার বাবা তাঁকে বলেন, ‘‘তুমি মেয়ে, তোমার আরও সম্মানজনক পেশা বেছে নেওয়া উচিত।’’
তবে পড়াশুনোতেও সমান আগ্রহ থাকার কারণে তিনি কিছু দিন খেলাধুলো থেকে বিরতি নেন। মন দেন পড়াশুনোয়।
ডাক্তারি পরীক্ষায় পাশ করে স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইচ্ছে নিয়ে একটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মেডিকেল কলেজে পড়াশুনো করার সময় মায়াকে উঁচু ক্লাসের এক পড়ুয়া ক্রিকেট খেলার চ্যালেঞ্জ দেন। তবে তিনি দুর্দান্ত খেলে সবাইকে চুপ করিয়ে দেন।
কলেজ শেষ হওয়ার পর পরই বিয়ে হয় মায়ার। বিয়ের এক বছরের মধ্যেই তিনি প্রথম কন্যাসন্তানের মা হন। সন্তান হওয়ার পর মায়ার ওজন অনেক বৃদ্ধি পায়।
এক হাতে পেশা এবং অপর হাতে সন্তানদের সামলিয়ে সহজেই ক্লান্ত হয়ে যেতেন মায়া। এর পর তাঁর এক বন্ধু তাঁকে জিমে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। জিমে ভর্তিও হন মায়া। এক বছরের মধ্যে ২০ কেজি ওজন কমানোর পর মায়ার জিম প্রশিক্ষক এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, তিনি মায়াকে দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করেন।
নতুন অধ্যায় শুরু হয় মায়ার জীবনে। ভারোত্তলনের দিকেও বিশেষ নজর দেন তিনি। এর পর একটি দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে মায়া দেখেন, এই ধরনের প্রতিযোগিতায় খুব কম সংখ্যক মহিলা অংশ নেন। এই ঘটনা তাঁকে দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় আরও সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
বাবা-মা এবং শ্বশুরবাড়ির তরফ থেকে বাধা এলেও স্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মায়ার স্বামী। তিনি মায়াকে আরও বেশি করে উৎসাহ জোগাতে শুরু করেন।
দু’বছরের মধ্যে, তিনি প্রথম দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতার মঞ্চে উপস্থিত হয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি রাজ্যস্তরের চ্যাম্পিয়নশিপেও অংশ নিতে যান।
এর পর তিনি গবেষণার কাজ করতে সিডনি চলে যান। সেখানেই জন্ম হয় তাঁর দ্বিতীয় কন্যার। আবারও খানিক ওজন বাড়ে মায়ার।
পরের ৮ মাস ধরে তিনি ভোর ৪টে থেকে সকাল ৭টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতেন। এর পর ফিরে এসে বড় মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে, রান্না করে হাসপাতালে যেতেন। আবার বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে তিনি রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত প্রশিক্ষণ নিতেন।
২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার আইএফএফবি দেহসৌষ্ঠব প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে ভারতের মুখ উজ্জ্বল করেন মায়া। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহিলা, যিনি এই তকমা জেতেন।