প্রায় ৪০ বছর পর আবার জেগে উঠল বিশ্বের বৃহত্তম জীবন্ত আগ্নেয়গিরি মাউনা লোয়া। হাওয়াই দ্বীপের একদম উত্তর-পূর্ব দিকে এই আগ্নেয়গিরি রয়েছে।
রবিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে মাউনা লোয়া থেকে লাভা উদ্গীরণ শুরু হয়।
মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরি হাওয়াই দ্বীপের প্রায় অর্ধেকটা জুড়ে রয়েছে। ১৮৪৩ সাল থেকে এই আগ্নেয়গিরি এখনও পর্যন্ত মোট ৩৩ বার জেগে উঠেছে। আমেরিকার ভূতাত্ত্বিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৪৩-এর আগে মাউনা লোয়ার অগ্ন্যুৎপাতের কোনও নথি সরকারের কাছে ছিল না।
১৯৮৪ সালে শেষ বার মাউনা লোয়ায় অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল। এর পর দীর্ঘ ৩৮ বছর শান্তই থেকেছে মাউনা লোয়া। ১৮৪৩-এর পর থেকে এত দীর্ঘ ব্যবধানে কখনও শান্ত থাকতে দেখা যায়নি এই আগ্নেয়গিরিকে।
মাউনা লোয়ার আগ্নেয়গিরি শিখরে লাভার মুখ কিলাউয়ার প্রায় ৩৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত।
কিলাউয়া হাওয়াইয়ের অন্য একটি ছোট আগ্নেয়গিরি। ২০২১ সালে এই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়েছে। ফলে এখন হাওয়াইবাসী বিরল দ্বৈত-অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনার সাক্ষী হচ্ছে। যদিও কিলাউয়ের অগ্ন্যুৎপাত বর্তমানে গর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
২০১৮ সালে যখন কিলাউয়া আগ্নেয়গিরি যখন প্রথম ফেটে যায়, তখন সেই লাভায় লেইলানি এস্টেটের আশেপাশে ৭০০টির-ও বেশি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বাস্তুচ্যুত হয় হাজারো মানুষ।
ভূতত্ত্ব বিভাগের দাবি, মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরি অস্থিরতার উচ্চ সীমায় রয়েছে। গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় ভূমিকম্পের হার বৃদ্ধিকেই এর কারণ হিসাবে দেখছেন ভূতত্ত্ববিদরা।
চলতি বছরের জুনে ৫ থেকে ১০ বার এই অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছিল। জুলাই এবং অগস্ট মাসে ভূমিকম্পের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০।
আমেরিকার সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ভূমিকম্পের সংখ্যা ১০০ পার করেছিল।
অগ্ন্যুৎপাত শুরুর পর আগ্নেয়গিরির এক পাশ থেকে বইতে শুরু করেছে লাভা প্রবাহ। তবে এই লাভার প্রভাবে হাওয়াই জাতীয় উদ্যানের বসতির উপর পড়বে না বলেও সোমবার দুপুরে আমেরিকার ভূতাত্ত্বিকরা জানিয়েছেন। তবে আপাতত পর্যটকদের জন্য বন্ধই রাখা হচ্ছে জাতীয় উদ্যানের দরজা। পাহাড়ে ট্রেকিং করতে যাওয়ার উপরেও জারি করা হয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
আমেরিকার ভূতত্ত্ব বিভাগের তরফে জানানো হয়েছে, অগ্ন্যুৎপাতের ফলে বেরনো লাভা প্রধানত উত্তর-পূর্বের এলাকাগুলিকে প্রভাবিত করবে। কিন্তু উত্তর-পূর্বে আগ্নেয়গিরির কাছে পিঠে বসতি না থাকায় সে রকম কোনও চিন্তার কারণ নেই। তবে, আগ্নেয়গিরির গ্যাস এবং সূক্ষ্ম ছাই হাওয়ার কারণে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে।
হনুলুলুর ‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস’ জানিয়েছে, দ্বীপের অনেকাংশই ছাইয়ের আস্তরণে ঢাকা পড়বে। তবে সেই ছাইয়ের আস্তরণ অর্ধেক ইঞ্চিরও কম পুরু হবে।
মাউনা লোয়ার অগ্ন্যুৎপাতের কারণে বিমান উড়ানে ব্যঘাত ঘটতে পারে। আর সেই কারণে হিলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বা কেহোলে এলিসন ওনিজুকা কোনা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানে ওঠার আগে বিমান পরিবহণ সংস্থার সঙ্গে বিমান ওড়ার বিষয়ে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
আগ্নেয়গিরির মূল গহ্বরের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে লাভা উপচে পড়ার খবর আসার পরই হিলো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পাঁচটি বিমানের উড়ান বাতিল করেছে সাউথওয়েস্ট এয়ারলাইন্স।
মাউনা লোয়া আগ্নেয়গিরির আশপাশের জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলি ফাঁকা করার কোনও নির্দেশ এখনও প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয়নি। সতর্কতা হিসাবে, দু’টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে রাখা হয়েছে।
আদমসুমারি অনুযায়ী, হাওয়াই বা ‘বিগ আইল্যান্ড’ প্রায় ৪০০০ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত। জনসংখ্যা মাত্র দু’লক্ষ। অর্থাৎ প্রতি বর্গ মাইলে ৫০ জনেরও কম মানুষ বসবাস করে।
তবে লাভার ফলে তৈরি হওয়া ছাই যানবাহন, বাড়ি, গাছপালার ক্ষতি করতে পারে। দূষিত হতে পারে জল। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাও ব্যাহত হতে পারে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।
লাভার ফলে সৃষ্ট ছাইয়ে চোখ এবং ফুসফুসে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে বলেও স্থানীয় হাওয়া অফিস জানিয়েছে।
হনলুলু প্রশাসন সতর্কবার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে যাতে শ্বাসকষ্ট রয়েছে এমন মানুষেরা যাতে বাড়ির বাইরে না বেরোন। বাইরে বেরোলেও মাস্ক বা কাপড় দিয়ে মুখ এবং নাক ঢেকে বাইরে যাওয়া আবশ্যিক বলেও জানানো হয়েছে।
লাভার ছাই এবং ধূলিকণায় ক্ষতি হতে পারে শস্য এবং জন্তুদেরও।