পাকিস্তানে হদিস মিলল গুপ্ত খনিজ ভান্ডারের। আরও একবার পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলি দাবি তুলেছে যে, সে দেশে মিলেছে এমন গুপ্তধনের সন্ধান, যা তাদের ধসে পড়া অর্থনীতিকে একধাক্কায় চাঙ্গা করে দেবে। কী সেই অমূল্য ‘খাজানা’, যা বদলে দিতে পারে সে দেশের ধুঁকতে থাকা অর্থনীতিকে?
পাক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ডন’-এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে, পাকিস্তানের আঞ্চলিক সমুদ্রসীমায় তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল ভান্ডার পাওয়া গিয়েছে। একে বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ খনিজ তেলের ভান্ডার বলেও দাবি করা হচ্ছে পাক সরকারের তরফে।
পেট্রোলিয়াম এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান মিললে তা অর্থিক সঙ্কটে থাকা দেশটির ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিতে পারবে বলে ধুয়ো তোলা হলেও, বাস্তবে তা কতটা সম্ভব সে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সরকারেরই একাধিক আধিকারিক।
পাক সরকারের তরফে এই খনিজ ভান্ডার থেকে যে বিপুল অর্থ উপার্জন হবে, তাকে ‘ব্লু ওয়াটার ইকনমি’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তেল ও গ্যাসের উপস্থিতি যাচাই করার জন্য বন্ধুপ্রতিম দেশের সহযোগিতায় তিন বছরের একটি পরিকল্পনাও করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের এমন দাবি নতুন নয়।
২০১৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানও খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি তুলে আন্তর্জাতিক মঞ্চে শোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। সেই সময় পাক জনতাও আনন্দে উদ্বেল হয়ে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে, সে দেশে তেল ও জ্বালানির সঙ্কট কাটতে চলেছে।
তবে প্রচুর ঢাকঢোল পিটিয়ে করাচির উপকূলে খনন চালিয়েও কোনও তেলের ভান্ডার খুঁজে পাওয়া যায়নি সে সময়।
গত ৭ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের এক জন উচ্চপদস্থ নিরাপত্তা কর্মকর্তা পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সরকার আশাবাদী হলেও ১০০ শতাংশ নিশ্চয়তা নেই যে, বিপুল তেলের সন্ধান মিলবে।
তবে কি সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে চলেছে এ বারও? না কি কোনও বড়সড় আন্তর্জাতিক আর্থিক কেলেঙ্কারি ঘটতে চলেছে? বিবিধ আশঙ্কা দেখছে সংশ্লিষ্ট মহল।
কারণ, তেলের হদিস না পাওয়া গেলেও ইতিমধ্যেই তেল খনন ও উত্তোলনের জন্য আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের থেকে প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। এমনটাই জানিয়েছে পাক সংবাদমাধ্যমগুলি।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলির রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানের লুকোনো প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি বেশ কিছু বিনিয়োগকারী আগ্রহ দেখাতে শুরু করলেও প্রকৃতপক্ষে সেই প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও বিপণনের প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদি।
আপাতত শুধুমাত্র খনিজ তেলের অনুসন্ধানের জন্যই এই বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন। যদি অনুসন্ধানে ভাল ফল পাওয়া যায়, তা হলে মজুত উত্তোলন ও জ্বালানি উৎপাদনের জন্য কূপ এবং পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন এক পাক কর্মকর্তা।
এর আগেও ইমরান খান একই কায়দায় প্রায় একই পরিমাণ বিনিয়োগ টানার চেষ্টা করেছিলেন ২০১৮ সালে। তবে সেই প্রয়াস ফলপ্রসূ হয়নি।
পাকিস্তানে এই বিপুল প্রাকৃতিক তেল ও গ্যাসের খনির সন্ধান পাওয়া গেলেও এই তা থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দেশের ঋণ মেটাতে সাহায্য করবে কি না বা সেই সম্পদে বলীয়ান হয়ে ভবিষ্যতে পাকিস্তান সৌদি আরবের সমকক্ষ হয়ে উঠবে কি না, সে বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
বর্তমানে খনিজ তেল মজুতে শীর্ষে রয়েছে ভেনেজুয়েলা। দেশটিতে প্রায় ৩৪০ কোটি ব্যারেল তেল মজুত রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি তেলের খনি রয়েছে ভেনেজুয়েলাতেই। এ ছাড়া সৌদি আরব, ইরান, কানাডা ও ইরাকেও প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের খনি রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদক সরকারি সংস্থা অ্যারামকোর হাতে রয়েছে পাকিস্তানের তেল ও গ্যাস নিয়ন্ত্রক সংস্থার ৪০ শতাংশের মালিকানা। যদি সুদূর ভবিষ্যতে তেল বিক্রি করে পাকিস্তান মুনাফাও করে, তা হলেও সেই লভ্যাংশ যাবে অ্যারামকোর হাতে।
তাই খনিজ ভান্ডার খুঁজে পাওয়া গেলে তা থেকে যে অর্থ উপার্জন হবে, তা সে দেশের অর্থনীতির সংজ্ঞা বদলে দিতে চলেছে বলে পাক সরকার ও পাক সংবাদমাধ্যমগুলি যে প্রচার চালাচ্ছে, তা কতটা কার্যকর হবে বা আদৌ হবে কি না তা বলবে সময়।