Iran President

ক্ষমতায় মধ্যপন্থী মাসুদ, ‘ব্যর্থ’ রইসির মৃত্যুর পর শল্য চিকিৎসকের হাত ধরে পাল্টে যাবে ইরান?

ইরানের নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হতে হলে কোনও প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়। তা না হলে ছ’জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দু’জনকে নিয়ে আবার নির্বাচন হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৮:০০
Share:
০১ ২০

ইরানের প্রেসিডেন্টের পদে বসতে চলেছেন সংস্কারপন্থী মাসুদ পেজ়েশকিয়ান। কট্টর রক্ষণশীল প্রতিদ্বন্দ্বী সঈদ জালিলিকে হারিয়ে ইরানের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

০২ ২০

ইরানের নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হতে হলে কোনও প্রার্থীকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেতে হয়। তা না হলে ছ’জন প্রার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দু’জনকে নিয়ে আবার নির্বাচন হয়। তাঁদের মধ্যে যিনি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

Advertisement
০৩ ২০

পেজ়েশকিয়ান এবং জালিলির ক্ষেত্রেও তেমনটা হয়েছিল। যদিও এ বারের ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট চার জন প্রার্থী। প্রাথমিক ভাবে ছ’জন প্রার্থী থাকলেও পরে দু’জন নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত ‘ফাইনালের’ লড়াই হয় পেজ়েশকিয়ান আর জালিলির মধ্যে।

০৪ ২০

২৮ জুনের নির্বাচনের প্রথম দফায় কোনও প্রার্থীই সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি। ফলে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া পেজ়েশকিয়ান এবং জালিল দ্বিতীয় দফায় একে অপরের বিরুদ্ধে লড়তে নেমেছিলেন। দ্বিতীয় দফায় ৪৯.৮ শতাংশ ভোটদাতা তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছিলেন।

০৫ ২০

ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় এর মধ্যে ৫৩.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছেন পেজ়েশকিয়ান। জালিল পেয়েছেন ৪৪.৩ শতাংশ ভোট। যদি সব ঠিক থাকে তা হলে ইরানীয় প্রেসিডেন্টের গদিতে বসছেন মাসুদ।

০৬ ২০

প্রসঙ্গত, গত ১৯ মে পূর্ব আজ়ারবাইজানে পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে ভেঙে পড়ে ইরানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইসির চপার। তাতে ছিলেন ইরানের বিদেশমন্ত্রী হোসেন আমিরাবদোল্লাহিয়ানও। দুর্ঘটনায় দু’জনেরই মৃত্যু হয়।

০৭ ২০

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট রইসির মৃত্যুর পর অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মোখবর।

০৮ ২০

ইরানের সংবিধান মেনে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ৫০ দিনের মধ্যে ভাইস প্রেসিডেন্ট (অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট), পার্লামেন্টের স্পিকার এবং বিচার বিভাগের প্রধানকে নিয়ে গঠিত ‘কাউন্সিল’ দেশে নতুন করে নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। সেই নির্বাচনেই জয়ী হয়েছেন পেজ়েশকিয়ান।

০৯ ২০

যদিও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার আগেই রাজধানী তেহরান এবং অন্যান্য কয়েকটি শহরে রাস্তায় নেমে উল্লাস শুরু করেন পেজেশকিয়ানের সমর্থকেরা। যার মধ্যে বেশির ভাগই তরুণ প্রজন্মের। এই সংক্রান্ত অনেক ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছিল। কিন্তু ইরানীয় তরুণদের মধ্যে পেজ়েশকিয়ানকে নিয়ে কেন এত উন্মাদনা?

১০ ২০

পেশায় শল্য চিকিৎসক পেজ়েশকিয়ান ইরানের রাজনীতিতে কট্টরপন্থী হিসাবে পরিচিত নন। তিনি পরিচিত মধ্যপন্থী হিসাবে। অর্থাৎ, সব পক্ষকে মানিয়ে-গুছিয়ে চলাই তাঁর নীতি। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আমেরিকার মতো পশ্চিমি বিশ্বের দেশগুলির সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখায় বিশ্বাসী ছিলেন না। তবে এ ক্ষেত্রে পেজ়েশকিয়ানের নীতি অন্য। তিনি বিশ্বাসী পশ্চিমি বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে চলায়।

১১ ২০

রইসির আমলে ২০২২ এবং ২০২৩ সালে হিজাব বিরোধী আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ইরান। সে দেশের মহিলাদের জন্য হিজাব বাধ্যতামূলক করে দেওয়ায় দিকে দিকে প্রতিরোধ গ়ড়ে ওঠে। রইসির ‘নীতিপুলিশি’র বিরুদ্ধে গর্জে ওঠে তরুণ প্রজন্ম। সেই প্রতিবাদকে কড়া হাতে দমন করেছিল তৎকালীন সরকার। বহু জনকে ফাঁসিতে চড়ানো হয়। হিজাব বিরোধী আন্দোলনে নেমে মৃত্যু হয় প্রায় ৫০০ মানুষের।

১২ ২০

আন্দোলন প্রশমিত হলেও ইরানের তরুণদের মধ্যে প্রতিবাদের আগুন ধিক ধিক করে জ্বলছিল। তাই রইসির মৃত্যুর খবর আসতেই বাজি ফাটিয়ে উদ্‌যাপন করে ইরানের বাসিন্দাদের একাংশ।

১৩ ২০

যে হিজাব নিয়ে রইসির বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে উঠেছিল, সেই বিষয়টিকেই হাতিয়ার বানিয়ে প্রচারে নামেন পেজ়েশকিয়ান। ইরানের মজ়লিসের সদস্য পেজ়েশকিয়ান প্রচারের সময় কুখ্যাত নীতিপুলিশের সমালোচনা করেন এবং ‘ঐক্য ও সংহতির’ প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্ব থেকে ইরানের ‘আলাদা’ থাকার নীতি শেষ করার কথা বলেন।

১৪ ২০

পাশাপাশি, প্রচারে নেমে ইরানকে পশ্চিমি বিশ্বের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার এবং দেশের বাধ্যতামূলক হিজাব আইন সহজ করার প্রতিশ্রুতি দেন পেজ়েশকিয়ান। এর পরেই তাঁর সমর্থনে ঢল নামে তরুণদের।

১৫ ২০

যদিও পেজ়েশকিয়ান প্রচারাভিযানে স্পষ্ট করে দেন ইরানের শিয়া ধর্মতন্ত্রে কোনও আমূল পরিবর্তন করা হবে না এবং সব বিষয়ে শেষ কথা বলবেন ইরানের শীর্ষনেতা ‌আলি খামেনেই।

১৬ ২০

এই পরিস্থিতিতে জল্পনা, প্রেসিডেন্টের আসনে বসেই আমেরিকার সঙ্গে দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করবেন পেজ়েশকিয়ান। নজর দেবেন বাকি পশ্চিমি দেশগুলির দিকেও। ইরানে বিনিয়োগ আনার দিকেও বিশেষ নজর থাকবে তাঁর।

১৭ ২০

ইতিমধ্যেই পশ্চিমি শক্তিগুলির সঙ্গে ২০১৫ সালের পরমাণু সমঝোতার পুনর্নবীকরণের জন্য ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করার আহ্বান জানিয়েছেন পেজ়েশকিয়ান। এর আগে পশ্চিমি নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার বিনিময়ে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হয়েছিল ইরান।

১৮ ২০

যদিও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সংস্কারপন্থী পেজ়েশকিয়ানের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে পারেন ইরানের কট্টরপন্থী রাজনীতিকরা। এমনকি, ইরানের সঙ্গে পশ্চিমি বিশ্বের সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন তাঁরা।

১৯ ২০

এই আবহে প্রশ্ন উঠছে পেজ়েশকিয়ান ক্ষমতায় এলে ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক হবে ইরানের? ভারতের সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন রইসি। বিশেষজ্ঞদের মতে, নীতিগত দিক দিয়ে রইসির সঙ্গে পেজ়েশকিয়ানের ফারাক থাকলেও ভারতের সঙ্গে কোনও মতেই সম্পর্ক খারাপ করবেন না পেজ়েশকিয়ান। বরং দু’দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে।

২০ ২০

পেজ়েশকিয়ানের শাসনে কৌশলগত চাবাহার বন্দরের উপর আরও নজর দেওয়া হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে ভারত। এর পাশাপাশি, ইরানে আরও কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভারত। তাই এই পরিস্থিতিতে পেজ়েশকিয়ান ভারতকে চটাবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement