মরুভূমির ধারে এক পাথুরে রাস্তার ধারে পড়ে রয়েছে একটি আস্ত সাদা বাথটাব। সেটিতে রয়েছে রংবেরঙের অগুনতি মার্বেল। বেশির ভাগ মার্বেলই আবার সমুদ্রনীল রঙের।
জনমানবশূন্য প্রান্তে একখানা আস্ত বাথটাব কী ভাবে পৌঁছল? প্রকৃতির কোন রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এতে? প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার মরুভূমিতে ওই বাথটাবটি দেখতে কম ভিড় হয় না। এমনকি, মানচিত্রে ওই জায়গাটার নামও রয়েছে— ‘মার্বেল বাথ’।
ইনইয়ো কাউন্টিতে লাস্ট চান্স পর্বতমালার অদূরে রয়েছে ওই বাথটাবটি। অঙ্কের হিসাবে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬,১৭৮ ফুট উঁচুতে।
মার্বেল বাথটি যে এলাকায় রয়েছে, সেখানে কোনও বসতি গড়ে ওঠেনি। তবে এর কেন্দ্রস্থল থেকে ১০০ কিলোমিটারের আশপাশে রয়েছে গ্রাম, জনপদ, শহর মিলিয়ে কমপক্ষে ৬১টি বসতি।
এলাকায় পুরনো মানচিত্রে আবার মার্বেল বাথের অবস্থান নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, স্টিল পাস রোডের কাছে সেটি রয়েছে। ওই মানচিত্র দেখে মার্বেল বাথ খুঁজতে গিয়ে কম বিপাকে পড়েননি পর্যটকেরা।
মার্বেল বাথটি এখন ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের অধীনস্থ বলে সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর। ওই পার্কের উত্তর-পূর্বের প্রত্যন্ত এলাকায় রয়েছে লাস্ট চান্স পর্বতমালা। তার অদূরে রয়েছে বাথটাবটি।
বসতি না গড়ে উঠলেও স্নান করার একটি টাব এ এলাকায় কে বা কারা ফেলে গেলেন? সে উত্তর খোঁজার চেষ্টা অনেকেই করেছেন। অনেকে আবার নিছক কৌতূহলের বশেই বাথটাবটি দেখতে লাস্ট চান্স পর্বতমালার অদূরে পৌঁছেছেন।
এই প্রত্যন্ত এলাকায় পা রাখতে হলে আটঘাট বেঁধে আসার পরামর্শ দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন। পাথুরে এলাকা হওয়ায় মাটি থেকে বেশ উঁচু পাদানির গাড়িতে করে যাওয়া ভাল বলে মত তাদের।
হেঁটে যেতে হলে পর্যটকদের সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল, খাবার-সহ মরুভূমিতে পরার উপযুক্ত জামাকাপড় রাখার কথাও বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।
রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের আরও কিছু কথা মাথায় রাখা প্রয়োজন। আশপাশের এলাকায় জনবসতি না থাকায় গাড়ি নিয়ে যাওয়াই উচিত। গ্রীষ্মকালে ওই প্রান্তে যাওয়া যে বুদ্ধিমানের কাজ নয়, তা-ও জানিয়েছে প্রশাসন।
ডেথ ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কের আশপাশের এলাকার মানচিত্র ছাড়াও ওই এলাকায় যাত্রার সময় আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি এবং রাস্তায় অবস্থার বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া জরুরি।
বাথটাবটি দেখতে গিয়ে তাতে নিজেদের সঙ্গে আনা মার্বেল ফেলে দিয়ে এসেছেন বহু পর্যটক। ক্যানিয়ন ওয়াশ এলাকার রাস্তা থেকে প্রায় ১০০ গজের বেশি দূরে রয়েছে বাথটাবটি।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, বাথটাবটি ঘিরে কোনও রহস্য নেই। মরুপ্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো এক গবেষক তথা পর্বতারোহীই সেটি এলাকায় রেখে এসেছেন। এ হেন কাজে ওয়েন্ডেল মোয়ের নামে ওই রোমাঞ্চপ্রিয় অভিযাত্রীর উদ্দেশ্য কী ছিল?
নিছক মজা করার জন্যই ওয়েন্ডেল নাকি একটি পুরনো বাথটাব রেখে যান ওই প্রান্তরে। অবশ্য তিনি একা নন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে জুটিয়ে বাথটাবটি বয়ে নিয়ে যান। এর পর সেটি পাথুরে জমিতে রেখে তার মধ্যে ছড়িয়ে দেন নিজের সঙ্গে আনা অগুনতি সমুদ্রনীল মার্বেল।
নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় নাকি এই কীর্তি করেছিলেন ওয়েন্ডেল। পর্বতমালায় চড়ার পথে এই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় উৎসাহীরা তাতে মার্বেল অথবা খেলনা রেখে যান।
সংবাদমাধ্যমের দাবি, ১৯৯৫ সালে চিলির ২২ হাজার ফুট উঁচু ওহাস দেল সালাদো পাহাড়ে চড়তে গিয়ে মৃত্যু হয় ওয়েন্ডেলের। তবে আজও তাঁর রসিকতার চিহ্ন পড়ে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার মরুতে।