প্রথমে কেউই সন্দেহ করেননি। কেউ ভাবতেও পারেননি। তিন মাস কেটে গিয়েছিল। শুধু ওই তরুণীর মায়ের মনটা খচখচ করছিল। মনে হচ্ছিল, মেয়ের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। অস্বাভাবিক কিছু একটা ঘটেছে।
পুলিশকে এক বার জানিয়েওছিলেন মারিয়া নাজারেথ ভার্গাস। কিন্তু ৫৯ বছরের মহিলার কথায় তেমন পাত্তা দেয়নি ব্রাজিলের পুলিশ।
জুনে মেয়ের মৃত্যু হয়েছিল। তার পর ভেঙে পড়েছিলেন মারিয়া। সেই থেকে ফেরার ছিল মেয়ের সঙ্গীও। এক মাসের মাথায় জুলাইয়ে, এক দিন মারিয়ার ওপর ধারালো অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই তরুণ, যে ছিল তাঁর মেয়ের সঙ্গী। জোরে জোরে কোপ মার। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রাণ বাঁচে মারিয়ার।
আবারও পুলিশকে গোটা ঘটনা জানান মারিয়া। তখনই খটকা লাগে পুলিশের। শুরু করে তদন্ত। ৬ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের জয়েনভিল শহর থেকে আটক করা হয় তরুণকে। তাকে জেরা করে চোখ কপালে পুলিশের। এ রকমও ঘটতে পারে! তখন পুলিশ বুঝতে পারে, ভুল বলেননি মারিয়া।
জেরায় পুলিশ জানতে পারে, জুন মাসেই মারা গিয়েছিলেন ভার্গাস। কী ভাবে, সেই প্রশ্নই ঘুরছে পুলিশের মাথায়। মনে করা হচ্ছে, তাঁকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। আর তার নেপথ্যে রয়েছেন তাঁর সঙ্গী, এমনটাই ধারণা পুলিশের।
ভার্গাসের বাড়ির সামনে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, জুন মাসে এক শনিবার ভার্গাসের বাড়িতে ঢোকে ওই তরুণ। তদন্তের স্বার্থেই তার নাম প্রকাশ করা হয়নি।
টানা তিন দিন তাকে ওই বাড়ি থেকে বার হতে দেখা যায়নি। তিন দিন পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভার্গাসের মাকে মেয়ের মৃত্যুর খবর দেয় তরুণ। তার পর উবে যায়।
মারিয়ার মা থানায় খবর দেন। পুলিশ ভার্গাসের বাড়িতে পৌঁছয়। সেখানে গিয়ে সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়লেও পুলিশ নিশ্চিত হতে পারেনি। তাই রিপোর্টে দিয়ে জানায়, স্বাভাবিক ভাবেই মৃত্যু হয়েছে ভার্গাসের।
এক মাস পর ভার্গাসের মায়ের ওপর ব্যর্থ আক্রমণে পুলিশকর্মীদের টনক নড়ে। আবারও তদন্ত শুরু করে। মারিয়া যাতে তদন্ত করার জন্য পুলিশকে জোর না করেন, সে জন্যই খুন করতে চেয়েছিল তরুণ। পরে জেরায় স্বীকারও করে।
তদন্তে নেমে কবর খুঁড়ে পুলিশ বার করে ভার্গাসের দেহ। আবার ময়নাতদন্ত করানো হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, শ্বাসরোধ করেই খুন করা হয়েছে ভার্গাসকে। কেন, সেই জবাব এখনও দেয়নি তরুণ।
তবে জেরায় ধৃত যা বলেছে, তাতে চমকে গিয়েছে পুলিশ। জানিয়েছে, ভার্গাসকে খুন করে তিন দিন সেই মৃতদেহের সঙ্গে কাটিয়েছিল তরুণ। সেই মৃতদেহের সঙ্গে এক ঘরে ঘুমিয়েছে, খেয়েছে, দৈনন্দিন কাজ সেরেছে!
কিন্তু কেন এই ভয়াবহ কাণ্ড ঘটিয়েছে? তরুণ পুলিশকে জানিয়েছে, সে ভেবেছিল ফের ‘জীবিত’ হয়ে উঠবেন প্রেমিকা। আগের মতোই সব ঠিক হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত যখন বেঁচে ওঠেননি প্রেমিকা, তখন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তরুণকে জেরা করে চলছে ব্রাজিলের পুলিশ।
মৃতদেহের সঙ্গে বসবাসের ঘটনা এর আগেও দুনিয়ায় বহু বার ঘটেছে। কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের সেই কাণ্ড। ২০১৫ সালে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের এক বাড়ি থেকে মিলেছিল এক মহিলা, এক প্রবীণ এবং দুই পোষ্য কুকুরের কঙ্কাল। বাড়িতে জীবিত ছিলেন এক মাত্র পার্থ দে। মৃত্যুর পর পরিজনদের দেহ সৎকার না করে ঘরেই রেখে দিয়েছিলেন।
গত মে মাসে চেন্নাইতে এক মহিলা স্বামীর মৃত্যুর পরেও কাউকে খবর দেননি। দু’দিন মৃতদেহের সঙ্গে বসবাস করেন। মেয়েরা বার বার ফোন করছিলেন। কেউ ফোন ধরেননি। শেষে থানায় খবর দেন। পুলিশ এসে উদ্ধার করে পি অশোক বাবু নামে ওই ব্যক্তির দেহ। পদ্মিনী নামে ৪৮ বছরের ওই মহিলার অবসাদের চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু নিজের প্রেমিকাকে খুন করে সহবাস, এমন বড় একটা শোনা যায়নি।