এতটা ধাক্কা! অনেকেরই চিন্তার বাইরে। তিনিও হয়তো ভাবেননি এমন কোনও দিন হতে পারে। তবু হয়েছে। এক বছরে ৫৫ হাজার কোটি টাকা হারিয়েছেন শিল্পপতি। তিনি ওয়াং জিং। চিনা ফুড ডেলিভারি সংস্থা মেইটুয়ানের মালিক।
অম্বানীদের মতো ধনী নন ওয়াং। তবু এতটা ধাক্কা সয়েও যে তিনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন, তাতেই হতবাক অনেকে। তবে ওয়াং এ সবে পাত্তা দিতে নারাজ। তিনি নিজের সম্পত্তি নিয়ে এখন গর্বিত।
ওয়াংয়ের সংস্থা মেইটুয়ানের সদর দফতর বেজিংয়ে। ২০২৩ সালে তাঁর সংস্থার লোকসান হয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। কী ভাবে এতটা লোকসান, সেই নিয়ে চলছে পরীক্ষা, আলোচনা।
মনে করা হচ্ছে, বাজারে একাধিক খাবার ডেলিভারি সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতার কারণেই পিছিয়ে পড়েছে মেইটুয়ান। পাশাপাশি অনলাইনে খাবার অর্ডার করার প্রবণতা কমেছে বলেও ধারণা অর্থনীতিবিদদের।
এত ক্ষতির পরেও ওয়াংয়ের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯৩০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা। এমনটাই বলছে ফোর্বস পত্রিকা।
হংকংয়ের স্টক এক্সচেঞ্জের থেকে মেলা পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি থেকে ওয়াংয়ের সংস্থার শেয়ারের পতন হয়েছে ৫০ শতাংশ। গত বুধবার সংস্থার শেয়ারের পতন হয়েছে ১২ শতাংশ।
যেখানে দেখা গিয়েছে, ২০২৩ সালের অগস্টে মুকেশ অম্বানীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৯,১২০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় সাত লক্ষ কোটিরও বেশি।
এ রকম পরিস্থিতিতে কেন হঠাৎ ক্ষতির মুখে ওয়াংয়ের সংস্থা? অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, এর নেপথ্যে রয়েছে অতিমারি, লকডাউনের অঙ্ক। অতিমারির কারণে যখন দীর্ঘ দিন চিনে লকডাউন ছিল, তখন বেশির ভাগ নাগরিক অনলাইনে খাবার অর্ডার করতেন। এ ক্ষেত্রে ফুড ডেলিভারি সংস্থার উপর নির্ভর করতেন তাঁরা।
চিনে দীর্ঘ দিনের লকডাউনে ইতি পড়েছে ২০২২ সালের শেষ ভাগে। নাগরিকেরা বাড়ির বাইরে বার হতে শুরু করেছেন। বাড়িতে বসে অর্ডার করে খাওয়ার তুলনায় রেস্তরাঁয় গিয়ে খাওয়ার উপর ভরসা রেখেছেন বেশি। সে কারণে অনলাইনে ডেলিভারি করার প্রবণতা কমে গিয়েছে।
মনে করা হচ্ছে, এই কারণেই কমে গিয়েছে ওয়াংয়ের সংস্থার লাভের পরিমাণ। ২০২৩ সালে তাই মুখ থুবড়ে পড়েছে।
মেইটুয়ান সংস্থার মুখ্য অর্থনৈতিক অফিসার চেন সাওহুই জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের শেষ ভাগে খাবার ডেলিভারির পরিমাণ ২০২২ সালের শেষার্ধের তুলনায় কমেছে। আগামী কয়েক দিনে তা আরও কমতে পারে বলে মনে করছেন সাওহুই।
সাওহুইয়ের মতে, এ বছর চিনের ততটা শীত পড়েনি। সে কারণে নাগরিকেরা বাইরে বেরিয়ে খাওয়ার পছন্দ করছেন। সে কারণে লোকসান বাড়ছে সংস্থার।
অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, প্রতিযোগিতার কারণেও ক্ষতির মুখে পড়ছে মেইটুয়ান সংস্থা। খাবার ডেলিভারির ব্যবসায় নেমেছে দউয়িন, যা টিকটকের মতো মঞ্চ। এটি চিনের নিজস্ব। তারাই টেক্কা দিচ্ছে ওয়াংয়ের সংস্থা মেইটুয়ানকে।
ওয়াং কিন্তু এ সব নিয়ে খুব বেশি ভাবতে নারাজ। চিনের মূল ভূখণ্ডের বাইরেও নিজের ব্যবসা ছড়িয়েছেন তিনি। ২০২৩ সালে মে মাসে হংকংয়ে খাবার ডেলিভারির ব্যবসা খুলেছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় খাবার ডেলিভারি ব্যবসার একচ্ছত্র বাজার ধরে রেখেছে জার্মান বহুজাতিক সংস্থা ডেলিভারি হিরো। সূত্রের খবর, ওই সংস্থার ব্যবসা অধিগ্রহণের চেষ্টা করছেন ওয়াং। এই নিয়ে নাকি কথাবার্তাও চলছে। তবে সংস্থার তরফে কিছু জানানো হয়নি।