India-Maldives Row

এ বার খাদ্য-ওষুধ আমদানি নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত! মুইজ্জুর ‘ভারত বৈরিতা’ কি বিপদে ফেলবে মলদ্বীপকে?

ভারতের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছে মলদ্বীপ। ইতিমধ্যেই দ্বীপরাষ্ট্রকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন বহু ভারতীয়। তবে সেই বয়কটকে একেবারেই পাত্তা দিতে রাজি নন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১৩:৫৭
Share:
০১ ২৮

ভারতের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছে মলদ্বীপ। ইতিমধ্যেই দ্বীপরাষ্ট্রকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন বহু ভারতীয়। তবে সেই বয়কটকে একেবারেই পাত্তা দিতে রাজি নন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুইজ্জু। দমতেও রাজি নন তিনি। বরং, সম্প্রতি নিজেদের দেশ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর বার্তা দিয়ে ভারতের সঙ্গে তারা সরাসরি ‘টক্কর’ নিয়েছে বলে মত কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।

০২ ২৮

পাশাপাশি, ভারতের ‘ছায়া’ থেকে বেরিয়ে আসতে নতুন নতুন সিদ্ধান্তও নিতে শুরু করেছে মলদ্বীপের মুইজ্জু সরকার।

Advertisement
০৩ ২৮

সূত্রের খবর, মলদ্বীপে খাদ্য এবং ওষুধের জোগান অব্যাহত রাখতে আর কোনও একটি নির্দিষ্ট দেশের উপর নির্ভর করতে রাজি নয় সে দেশের সরকার। একটি নির্দিষ্ট দেশের বদলে আলাদা আলাদা দেশ থেকে খাদ্য সামগ্রী এবং ওষুধ আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মলদ্বীপ।

০৪ ২৮

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমদানি শিল্পে বৈচিত্র আনতে এবং কোনও একটি দেশের উপর নির্ভরতা কমানোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে মলদ্বীপ।

০৫ ২৮

যদিও মলদ্বীপ কোন ‘নির্দিষ্ট’ দেশ থেকে আমদানি বন্ধ করতে চাইছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বিশেষজ্ঞাদের মতে, মুইজ্জু সরকার পরোক্ষ ভাবে নিশানা করছে ভারতকেই।

০৬ ২৮

মলদ্বীপ সরকার ওষুধ এবং খাদ্যসামগ্রীর আমদানি নিয়ে নতুন এমন সিদ্ধান্ত নিলে, তা আবারও ভারতের সঙ্গে সরাসরি ‘বৈরিতা’র ইঙ্গিত হবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

০৭ ২৮

খাদ্য, ওষুধ এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত সরঞ্জামের জন্য এত দিন মূলত ভারতের উপরই নির্ভর করত মলদ্বীপ। কোভিড আবহে মলদ্বীপকে টিকাও সরবরাহ করেছিল ভারত।

০৮ ২৮

কিন্তু এখন দু’দেশের সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের আবহে খাদ্য এবং ওষুধের জন্য মলদ্বীপ আর ভারতের উপর নির্ভর করতে রাজি নয় বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

০৯ ২৮

তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এ-ও মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের জেরে নিজের দেশেই ক্ষোভের মুখে পড়তে পারে মইজ্জু সরকার। রোষ তৈরি হতে পারে মলদ্বীপবাসীর মনে।

১০ ২৮

কূটনীতিক বিশেষজ্ঞদের মত, এক দেশ থেকে না আমদানি করে আলাদা আলাদা দেশ থেকে ওষুধ এবং খাদ্য আমদানি করলে খরচ বাড়বে। ফলে দেশের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

১১ ২৮

ইতিমধ্যেই ভারত এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী (বর্তমানে নিলম্বিত) কুমন্তব্য করার পরে দেশবাসীর একাংশের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সে দেশের সরকারকে।

১২ ২৮

এখন যদি সে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি পায়, তা হলে আবার নতুন করে দেশবাসীর সমালোচনার মুখে পড়তে হতে পারে মলদ্বীপ সরকারকে। মুইজ্জু সরকারের জনপ্রিয়তা কমতে পারে আরও।

১৩ ২৮

আমদানিতে বৈচিত্র্য আনার পাশাপাশি, বিমা পরিষেবা নিয়েও মুইজ্জু সরকার বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে বলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। শোনা যাচ্ছে, অন্যান্য দেশের হাসপাতালগুলিকেও মলদ্বীপের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন স্বাস্থ্য বীমা পরিষেবার আওতায় আনতে চাইছে সে দেশের সরকার। তবে এতেও মলদ্বীপ সরকার আর্থিক দিক থেকে খুব লাভবান না-ও হতে পারে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

১৪ ২৮

ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্বের আবহে মলদ্বীপের গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর পিপল্‌স ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। শনিবার রাজধানী মালের স্থানীয় নির্বাচনে তাঁর দলের প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন ভারতঘেঁষা বিরোধী দলের নেতা। মালের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাডাম আজ়িম। তিনি মলদ্বীপ ডেমোক্রেটিক পার্টির (এমডিপি) নেতা। ওই দলের প্রধান মলদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলি। তাঁকে পরাজিত করেই সম্প্রতি প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসেছেন মুইজ্জু।

১৫ ২৮

এমডিপি নেতা অ্যাডাম যে পদে নির্বাচিত হলেন, সেই পদে দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন মুইজ্জু স্বয়ং। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে ওই পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন। সেই পদে মেয়র হিসাবে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছেন অ্যাডাম। অ্যাডামের বিপরীতে মেয়র ভোটে পিএনসির তরফে প্রার্থী হয়েছিলেন আইশাঠ আজ়িমা। তাঁর চেয়ে অ্যাডাম পাঁচ হাজার ভোট বেশি পেয়েছেন।

১৬ ২৮

কূটনীতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের সঙ্গে ঠোকাঠুকি বাধার কারণেই ওই নির্বাচনে মুখ থুবড়ে পড়েছেন মুইজ্জুর দলের প্রার্থী।

১৭ ২৮

অন্য দিকে, বেজিং-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মুইজ্জু সম্প্রতি চিন সফরে গিয়েছিলেন। শনিবারই দেশে ফিরেছেন তিনি। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে মুইজ্জু বলেন, “হতে পারি আমরা ক্ষুদ্র। তাই বলে কাউকে চমকানোর ছাড়পত্র দিয়ে দিইনি আমরা।” এর পরেই নতুন মাত্রা পেয়েছে ভারত-মলদ্বীপ বিতর্ক।

১৮ ২৮

চিন থেকে ফিরে মলদ্বীপ থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য ভারতকে ‘আর্জি’ও জানিয়েছে সে দেশের সরকার। সেনা সরানোর জন্য রীতিমতো সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

১৯ ২৮

মলদ্বীপ থেকে ভারতের সেনা সরানোর বিষয়ে নয়াদিল্লির সঙ্গে আলোচনা করতে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে মহম্মদ মুইজ্জুর সরকার। এই বিষয়ে ভারতও সম্মতি জানিয়েছিল বলে জানা যায়। মলদ্বীপ সরকারের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এই কমিটির দ্বাদশ বৈঠকে ১৫ মার্চের মধ্যে সেনা সরানোর জন্য ভারতকে আর্জি জানানো হয়েছে। মুইজ্জুর সচিবালয়ের শীর্ষ আধিকারিক আবদুল্লা নাজ়িম ইব্রাহিম সে দেশের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, “ভারতীয় সেনারা মলদ্বীপে থাকতে পারবেন না। কারণ এটাই প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু এবং তাঁর সরকারের সিদ্ধান্ত।”

২০ ২৮

উল্লেখযোগ্য যে, এর আগে নভেম্বর মাসে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই ভারতকে রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে মুইজ্জু বলেছিলেন, ‘‘আমাদের দেশের মাটি থেকে সমস্ত বিদেশি সেনাকে আমরা ফেরত পাঠাব।’’ এ ক্ষেত্রে মুইজ্জু নাম না-করলেও স্পষ্ট ভাবেই ভারতকে নিশানা করেছিলেন। কারণ, ভারত মহাসাগরের ওই দ্বীপরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক এবং শিল্পক্ষেত্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল ভারতীয় সেনা। তবে চলতি বিতর্কের আবহে মলদ্বীপের এই সময় বেঁধে দিয়ে সেনা সরাতে বলার ‘আর্জি’কে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে।

২১ ২৮

মলদ্বীপের সেনা সরানোর ‘আর্জি’র পর বিবৃতি দিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে নয়াদিল্লিও। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, মলদ্বীপে বিমান চলাচল করতে পারে এমন পরিস্থিতি বজায় রাখতে পারস্পরিক সমাধানসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে ভারত।

২২ ২৮

বিদেশ মন্ত্রকের বিবৃতিতে লেখা হয়েছে, “মলদ্বীপের মানুষের কাছে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে ভারতীয় বিমানগুলির চলাচল জারি রাখা জরুরি। এবং এই কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে উভয় পক্ষই একটি সমাধানসূত্রে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে।” মলদ্বীপ এবং ভারতের সম্মতিক্রমে একটি নির্দিষ্ট দিন বেছে নিয়ে পরবর্তী আলোচনা করা হবে বলেও জানানো হয়েছে ওই বিবৃতিতে। প্রসঙ্গত, বায়ুসেনার বেশ কয়েকটি বিমান মলদ্বীপের প্রান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে ওষুধ এবং ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে।

২৩ ২৮

কিন্তু সেই নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধও এ বার আলাদা আলাদা দেশ থেকে আনার সিদ্ধান্ত ফলপ্রসূ করতে পারে মলদ্বীপ সরকার। ফলে ভারতকে পরবর্তী কালে বায়ুসেনার ওই বিমানগুলিও সরানোর বার্তা দেওয়ার পথ মুইজ্জু সরকার প্রশস্ত করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

২৪ ২৮

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রীর মোদীর সাম্প্রতিক লক্ষদ্বীপ সফরের পরেই ভারত এবং তাঁর সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন মলদ্বীপের তিন মন্ত্রী এবং বেশ কিছু রাজনীতিক। বিতর্ক এবং ঘরে-বাইরে চাপের মধ্যে তিন মন্ত্রীকেই সাসপেন্ড করেন মুইজ্জু। তার পরেও অবশ্য দুই দেশের সম্পর্ক খুব একটা সহজ হয়নি।

২৫ ২৮

সমাজমাধ্যমে ভারতীয় নেটাগরিকদের ‘বয়কট মলদ্বীপ’-এর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খেতে হয় ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রকে। আগে থেকে মলদ্বীপে ঘুরতে যাওয়ার বিমান-হোটেলে টিকিট বুক করে রাখার পরেও তা বাতিল করেন একের পর এক ভারতীয়। সেই প্রবণতা বন্ধ হয়নি এখনও।

২৬ ২৮

এর মধ্যেই মুইজ্জু গত সপ্তাহে পাঁচ দিনের জন্য চিন সফরে যান। সফরের তৃতীয় দিনে গত বুধবার জিনপিংয়ের সঙ্গে রাজধানী বেজিংয়ে বৈঠক করেন মুইজ্জু। সেখানেই ভারতের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতের আবহে মলদ্বীপের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেন চিনা প্রেসিডেন্ট তথা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষনেতা।

২৭ ২৮

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই বৈঠকেই বেজিংকে তাঁদের ‘পুরনো বন্ধু এবং ঘনিষ্ঠতম সহযোগী’ বলেন মুইজ্জু। চিন থেকে দেশে ফিরেই মুইজ্জু একের পর এক ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন বলে পর্যবেক্ষণ বিশেষজ্ঞদের। তার মধ্যেই খাদ্য এবং ওষুধ নিয়ে মুইজ্জু নতুন সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বলে প্রকাশ্যে এসেছে।

২৮ ২৮

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে ‘বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো’য় পড়তে পারে মুইজ্জু সরকার। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বৃদ্ধি পেলে দেশবাসীর কাছে জনপ্রিয়তা হারাতে পারেন তিনি।

ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement